শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:২৯ অপরাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-২৬)

  • Update Time : বুধবার, ১২ জুন, ২০২৪, ১১.০০ এএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

‘এ যাত্রা তুমি আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছো। আজ আর দু’জনের কাউকে নিয়ে মনের ভিতর কোনো গ্লানি নেই।’

খোকা কোনো কথা তুললো না। ব’সে রইলো নিঃশব্দে।

বিকেলছোঁয়া নিভন্ত দুপুর, সেগুনবাগিচার প্রাচীন হলদে কোঠাবাড়ির বিড়ালের মতো আলস্যময় কোমল কামরা, এক আটি নির্দোষ রজনীগন্ধা, রজনীগন্ধার মতো ধবধবে অঢেল বিছানা, নরোম নিরুদ্বিগ্ন হাওয়া, এবং একটি নারীদেহ,–যা পরিচিত হ’লেই মোমের মমি হ’য়ে যায়, সবকিছু আড়াল ক’রে যাচ্ছে তাকে, আড়াল ক’রে যাচ্ছে পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের মতো নিরলস সহজ অভ্যাসে, স্বপ্নাচ্ছন্নের মতো ভাসা ভাসা মনে হয় খোকার। ঝালরের মতো বিছানার একটা প্রান্ত দুলছে, যেন একটা ভিজে হাওয়ার ঝাপটা, এবং কম্পমান, দুর্বিনীত গ্রীবা তুলে উদ্বেল বিশুদ্ধ রজনীগন্ধাগুচ্ছ থরথর কম্পমান।

ঘুরেফিরে একটা ঝাপসা ছবি, যা দীপ্র পাপবোধের চেয়ে মোহন, তার নিজের দিকে বিবসনা নারীর মতো প্রবলভাবে টানতে লাগলো খোকাকে; ছবিটি ক্রমশই মায়াবিনীর মতো রূপ পরিগ্রহ করতে থাকে বর্ণাঢ্য উজ্জ্বলতায় :

স্বপ্নের গভীর সুড়ঙ্গপথ পার হ’য়ে অবাক বিস্ময়ে দেখতে পেলো খোকা ঘরের চারটি দেয়াল তীর-মধুর মরণোল্লাসে পরস্পর আলিঙ্গনাবদ্ধ, এক; পরস্পরবিরোধী অমসৃণ রঙ আর রেখার অনিবার্য অভিঘাতে-এক। কোথাও হলুদ, কোথাও বেগুনি, কোথাও সবুজ, টুকরো টুকরো, গোছা গোছা; দীর্ঘ অন্বেষণে পরিশ্রান্ত লাল-নীল- কমলার সন্ধানী রেখার প্রপাত বিপর্যস্ত বিষস্ত স্নায়ুর মতোই দেয়ালময় একাকার এবং নিঃশব্দ মৃত্যুর মতো দাঁতাল গহ্বরের প্রতিভাসে আপতিত উদ্দেশ্যহীনতা আশ্চর্যভাবে পুনঃসংগঠিত।

কোথাও লাল এমন প্রবল তা যেন নিজেরই মাংস নিংড়ানো, কোথাও নীল এমন বিশৃঙ্খল যেন তা আকাশ থেকে করাতে কাটা। একপাশে বৃত্তচ্যুত ফলের মতো বিচ্ছিন্ন স্তন, নির্মম নখরাঘাতে যা ছিন্নভিন্নপ্রায়। সন্নিকটে একজোড়া সুগঠিত উরু, যার সন্ধিতে দক্ষ কারুশিল্পীর চিৎকার খোদিত। এই চিৎকার নিঃসৃত তুমুল রক্তস্রোত যেন নিদারুণ প্রয়োজনেই রহস্য শোভিত অনড় ডলফিনের মতো। শিলাখণ্ডে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে খুবলে খাওয়া শূন্যতার স্তম্ভের আকার নিয়েছে, সেখানে এক অনৈসর্গিক নিস্তব্ধতা আপন পক্ষপুটে অচঞ্চল।

‘খোকা তুমি কিছু বলো–‘

‘কি বলবো–‘ স্বপ্নের ভিতর থেকে উকি দেবার চেষ্টা করলো খোকা; তার গলার স্বর ঘড়ঘড়ে।

‘কিছু বলার নেই তোমার?’

দেয়ালের রঙ ততক্ষণে অপসৃত; চার দেয়ালের সেই অবিশ্বাস্য আলিঙ্গন শৈথিল্যে ভেঙে পড়েছে, স্বপ্নের ভিতরে যেন এইমাত্র একটি কাক ইলেকটিক তারে আটকে গিয়েছে, অজস্র চিৎকার এখন কানের চারপাশে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024