শ্রী নিখিলনাথ রায়
ভগবানগোলার সর্ব্বদা নবাবের নৌসেনা অবস্থিতি করিত। জলপথে মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করিতে হইলে, ভগবানগোলার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইতে হয়। এই কারণে বহিঃশত্রুকে বাধা প্রদানের জন্য এবং ভগবানগোলা-বন্দরের সুরক্ষার জন্য মুর্শিদাবাদের যাবতীয় নৌসেনা সর্ব্বদা ভগবানগোলায় সুসজ্জিত থাকিত। সুতরাং বাঙ্গলার তৎকালীন সর্ব্বপ্রধান নৌসেনাস্থান চাও। বা জাহাঙ্গীরনগরের সহিত ইহার বিশেষরূপ সম্বন্ধ ছিল। নৌসেনার অবস্থানের জন্য মহারাষ্ট্রীয়গণ অনেকবার ভগবানগোলা আক্রমণ করিবার উদ্যোগ করিয়াও কৃতকাৰ্য্যতা-লাভে সমর্থ হইতে পারে নাই।
উপরে উল্লিখিত হইয়াছে যে, ভগবানগোলার বাজার সমগ্র পরিজ্ঞাত জগতের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বলিয়া কেহ কেহ নির্দেশ করিয়া থাকেন। বাস্তরিক তৎকালে তথায় প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ মণ শস্য, ঘৃত, তৈল প্রভৃতি দ্রব্যের আমদানি-রপ্তানি হইত। উত্তরবঙ্গ, পূর্ব্ববঙ্গ, রাঢ়, বিহার, সকল প্রদেশ হইতেই নানাবিধ দ্রব্যের আমদানি হইত এবং তৎসমুদায় সমগ্র ভারতে ও সমগ্র ইউরোপে বিস্তৃত হইয়া পড়িত। অত্রতা বাজার বঙ্গের বিভিন্ন স্থানের ধান্য, মুগ, কলাই, লঙ্কা, পলাণ্ডু প্রভৃতির নৌকা, তুলা, রেশম, -নীল ও বস্ত্রাদির আমদানীতে সর্ব্বদাই সমারোহময় থাকিত।
শত শত বিপণীতে পরিপূর্ণ হইয়া বাণিজ্যলক্ষ্মীর প্রিয় ক্রীড়াভূমিরূপে ভগবানগোলা সকলের মনে আনন্দ ও উৎসাহের ধারা ঢালিয়া দিত। তথায় দেশীয়, বিদেশীয় নানাজাতীয় ক্রেতা, বিক্রেতা, দালাল, গোমস্তার কলরব প্রতিনিয়ত আকাশপথে উত্থিত হইত। ভগবানগোলা সুবার খাস মহালের মধ্যে পরিগণিত ছিল। ইহার বাজার হইতে বার্ষিক ৩০ লক্ষ টাকার কর আদায় হইত। কেবল ধান্ধ প্রভৃতি শস্য হইতেই বৎসরে ৩ লক্ষ টাকার শুল্ক সংগৃহীত হওয়ার উল্লেখ দেখা যায়। সুতরাং ইহা হইতে যেশ অনুমান করা যায় যে, কিরূপ ভাবে ভগবানগোলার বাজারে ক্রয়বিক্রয়ের কার্য্য সম্পন্ন হইত।
তৎকালে সমগ্র জগতে যে এরূপ বাজার ছিল না, ইহা স্পষ্টরূপে বলা ‘যাইতে পারে। ভগবানগোলার বর্তমান অবস্থা দেখিলে ঐ সমস্ত বিবরণ প্রবাদবাক্য বলিয়া বোধ হয়। মুর্শিদাবাদের গৌরবের সহিত অনেক দিন হইতে ইহার অধঃপতন। ঘটিয়াছে। যে দিন হইতে মুর্শিদাবাদ-রাজলক্ষ্মী চিরবিদায় গ্রহণ করিয়াছেন সেই দিন হইতে মুর্শিদাবাদ অঞ্চলের প্রত্যেক স্থানেই অবনতির সহচর দুঃখদারিদ্র্যের কালিমাচ্ছায়া পড়িয়াছে এবং কোন কোন- স্থান শ্মশান বা মরুভূমিতে পরিণত হইয়াছে।
Leave a Reply