শ্রী নিখিলনাথ রায়
অব্দের ২৯শে এপ্রিল মোতিঝিলে প্রথম পুণ্যাহ হয়। নবাব নজমউদ্দৌলা সুচারু পরিচ্ছদ ধারণ করিয়া নানাবিধ হীরা ও মণিমাণিক্যখচিত অলঙ্কারে বিভূষিত হইয়া বাঙ্গলা, 1. বিহার, উড়িষ্যার নবাব-নাজিমরূপে মসনদে উপবিষ্ট হন। ক্লাইব বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার দেওয়ানের প্রতিনিধিরূপে তাঁহার পার্শ্বে উপবেশন করিয়াছিলেন। জগৎশেঠ, মহম্মদ রেজা খাঁ ও অন্ধান্ত অমাত্য ও প্রধান কৰ্ম্মচারিবর্গ, বহুমূল্য পরিচ্ছদে সজ্জিত হইয়া, আপন আপন স্থানে উপবিষ্ট হন। বাঙ্গলার যাবতীয় রাজা ও জমীদারবর্গ করহস্তে দণ্ডায়মান ছিলেন।
চোপদার ও সৈন্যগণ, নিশান হস্তে দণ্ডায়মান ছিল; মোতিঝিলে অসংখ্য তরণী সুসজ্জিত হইয়া শোভা পাইতেছিল। ১৭৯৭ খৃঃ অব্দে অধিকতর ধূমধামের সহিত পুণ্যাহ ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তৎকালে নবাব সৈফ উদ্দৌলা বহুমূল্য পরিচ্ছদে ভূষিত হইয়া মসনদোপরি উপবিষ্ট হন এবং গবর্ণর ভের্লেষ্ট তাঁহার দক্ষিণ পার্শ্বে উপবেশন করেন। এই সময়ে ভের্লেষ্ট কর্মচারী ও জমীদার- দিগকে ভূতবৃক্ষের কৃষির জন্য উৎসাহ প্রদানার্থ পীড়াপীড়ি করিয়াছিলেন।
১৭৭১ খৃঃ অব্দ পর্যান্ত মোতিঝিলে পুণ্যাহ হইয়াছিল। উক্ত বৎসর রাজস্ববিভাগ মুর্শিদাবাদ হইতে কলিকাতার অন্তরিত হয়। ইহার পূর্ব্ব হইতেই পুণ্যাচের ঘুম অনেক পরিমাণে কমিয়া যায়।ক্লাইব এই উৎসবরক্ষার জন্য অনেক যত্ন করিয়াছিলেন; এমন কি, তিনি ইহার জন্য স্বতন্ত্র অর্থ সংগ্রহের চেষ্টায়ও ছিলেন। কিন্তু ডিরেক্টরগণ ১৭৬৯- খৃঃ অব্দে খেলাত দিতে নিষেধ করায় পুণ্যাহের ধূম মন্দীভূত হয়। এই গুণ্যাহে পূর্ব্বে ২,১৬,৮৭০ টাকার খেলাত বিতরিত হইত। সার জন্ শোর ১৭৭১ হইতে ১৭৭৩ অব্দ পর্যান্ত মোতিঝিলে বাস করিয়াছিলেন।
এই খানে তিনি প্রাচ্য ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তিনি এইরূপ লিখিয়াছেন যে, এই খানে বাস করিয়া কপোতের মধুরশব্দ, কোকিলের কুহুধ্বনি ও সলিলরাশির কলকলরব শুনিতে শুনিতেই তাঁহার সময় অতিবাহিত হইত। বৈদেশিক ভ্রমণকারিগণ মোতিঝিলের রমণীয় দৃশ্য দেখিয়া মোহিত হইতেন। কিন্ডার্স’লি স্বীয় পত্রে মোতিঝিলের কথা লিখিয়াছেন। তিনি মোতিঝিলের প্রাসাদের ভিন্ন ভিন্ন চত্বর এবং ক্ষুদ্র ও অন্ধকারময় প্রকোষ্ঠের কথা উল্লেখ করিয়াছেন।
Leave a Reply