শ্রী নিখিলনাথ রায়
১৭৮৩ খৃঃ অব্দের অক্টোবর মাসে জেমস্ ফর্ব্বেস মুর্শিদাবাদে আসিয়া মোতিঝিল দর্শন করিয়াছিলেন।তিনি ইহার অশ্বপাদুকাবৎ আকার, সুন্দর উদ্যান ও প্রাসাদের কথা স্বীয় ভ্রমণবৃত্তান্তে লিখিয়া গিয়াছেন। কিন্তু সেই সময়। হইতে ঐগুলির ভগ্নদশা উপস্থিত হয়। মোতিঝিল অনেকদিন পর্যান্ত ইংরেজদিগের রাজকাৰ্য্যসংক্রান্ত প্রধান স্থান ছিল। ১৭৮৪/৮৬ অব্দে মাদাপুর তাহার স্থান অধিকার করে।
অনন্তর মোতিঝিলের পশ্চিমতীরস্থ প্রাসাদ ক্রমে ভগ্নদশায় পতিত হইতেছিল দেখিয়া, নবাব মনসুর আলি খাঁর সময়ে রাজা প্রসন্ননারায়ণ দেবের আদেশে উহা একেবারে ভাঙ্গিয়া ফেলা হয়।এক্ষণে কেবল তাহার ভিত্তি– ভূমি মাত্র অবশিষ্ট আছে। অস্থাপি স্থানে স্থানে দুই এক খণ্ড কৃষ্ণ মর্মর- প্রস্তর দৃষ্ট হইয়া থাকে। নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁর কৃত মজেদটি এখনও তিনটি গম্বুজ মস্তকে ধারণ করিয়া দণ্ডায়মান রহিয়াছে।
মজ্জেদের প্রাঙ্গণে, একটি প্রাচীরবেষ্টিত স্থানে ৪টি সমাধি বিদ্যমান আছে। তন্মধ্যে ২টি শ্বেত ও ১টি কৃষ্ণমর্ম্মর প্রস্তরমণ্ডিত এবং অপরটি ইষ্টকনির্মিত। শ্বেতমর্ম্মরমণ্ডিত সমাধি দুইটি নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁ ও এক্রামউদ্দৌলার সমাধি। কৃষ্ণ মর্মরের সমাধিটি এক্রামউদ্দৌলার শিক্ষকের। প্রাচীরের বাহিরে আর একটি ইষ্টকের সমাধি আছে। সেটি নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁর সেনাপতি সমসের আলি খাঁর। প্রাচীরের মধ্যস্থ ইষ্টকের সমাধিটি এক্রামউদ্দৌলার ধাত্রীর।
মজেদের নীচে মোতিঝিলের একটি বাঁধা ঘাট আছে; তথায় বসিয়া মুর্শিদাবাদের নিষ্কর্মা পেন্সনভোগী মুসলমানগণ মৎস্যবংশ ধ্বংস করিয়া থাকেন। পূর্ব্বে মোতিঝিলে অনেক মৎস্যের নাসিকায় মুক্তাসমন্বিত সোণার নত দেওয়া ছিল। মোতিঝিলের পশ্চিম- পার্শ্বস্থ প্রাচীন তোরণদ্বারের ভগ্নাবশেষ আজিও বিদ্যমান আছে। বর্ত- মান বৃক্ষবাটিকা তাহা হইতে দূরে অবস্থিতি করিতেছে। অশ্বপাদবৎ যে ভূভাগ ঝিলবেষ্টিত, তাহার উত্তর ভাগে একখানি নূতন বাঙ্গলা নিৰ্ম্মিত হইয়াছে।
Leave a Reply