শ্রী নিখিলনাথ রায়
বাঙ্গলাখানি দেখিতে অতি সুন্দর, পর পার হইতে উহা বড়ই মনোহর বোধ হয়। মোতিঝিলের নিকট ক্রিষ্টফার কেটিংএর শিশু পুত্র ইয়ান কেটিংএর সমাধি আছে। সমাধিস্থ অঙ্কিত প্রস্তরখানি মজেদ বাটীতে রক্ষিত হইয়াছে।ক্রিস্টফার কেটিং ১৭৭৪ খৃঃ অব্দের সেপ্টেম্বর মাসে মুর্শিদাবাদ টাকশালের অধ্যক্ষ হন; অনন্তর ১৭৯৪ খৃঃ অব্দে তিনি আপীল আদালতের জন্ম হইয়াছিলেন। পূর্ব্বে মঞ্জেদবাটীতে অনৈকগুলি লকীর বাস করিত, অতিথিশালার ব্যয়-লাঘব হওয়ায় ফকীরগণ ১৭৮৯ খৃঃ অব্দে ব্যয়বৃদ্ধির জন্ত নিষ্ফল আবেদন করিয়াছিল; এক্ষণে স্থানটি প্রায় জনশূন্য।
পূর্ব্বে উল্লিখিত হইয়াছে, (কোঁৱারপাড়া) নামক স্থানে মোতিঝিলের পূর্ব্ব তীরে কুমারপুর রাধামাধব মূর্ত্তি প্রতিষ্ঠিত আছেন। রাধামাধবের মানযাত্রা এতদঞ্চলে সুপ্রসিদ্ধ; সেই সময়ে কুমারপুরে একটি বৃহৎ মেলা হইয়া থাকে। খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে অথবা সপ্তদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বৈষ্ণবচূড়ামণি পূজ্যপাদ জীবগোস্বামীর শিষ্যা হরিপ্রিয়া ঠাকুরাণী বৃন্দাবন হইতে কুমারপুরে আসিয়া রাধা- মাধবের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।। সম্ভবতঃ সে সময়ে মোতিঝিল ভাগীরথীর গর্ভস্থ ছিল। রাধামাধবের বর্তমান সেবকের নিকট রহিয়াছে।
অনেকগুলি দলিলপত্র তাঁহার একখানি বাদশাহী ফারমান ছিন্ন অবস্থায় আজিও বর্তমান আছে। নবাব মহবৎ জঙ্গের (আলিবন্দীর) মৃত্যুর পর রাধামাধবের কতক ভূমি খাসমহালের গোমস্তা কর্তৃক বেদখল হওয়ায়, পরবর্তী নবাব (সম্ভবতঃ সিরাজউদ্দৌলা) তৎকালীন সেবক রূপনারায়ণ গোস্বামীকে তৎসমুদায় প্রত্যর্পণ করিতে অনুমতি দেন। রূপনারায়ণ হরিপ্রিয়া হইতে পঞ্চম সেবক। হরিপ্রিয়ার কৃত অতিথিশালার ভগ্নাবশেষ অস্থাপি বিজ্ঞমান আছে। একটি একাকিনী মাধবীলতা বহুকাল হইতে আজিও জঙ্গলমধ্যে আপনার অস্তিত্ব রক্ষা করিতেছে।
এই মন্দিরের সহিত মোতিঝিলের প্রাসাদের সম্বন্ধ ছিল; আমরা এতহপলক্ষে দুই একটি গল্পের উল্লেখ করিতেছি। এক্রাম উদ্দৌলার শোকে বিপ্রকৃতিস্থ হইয়া নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁ যংকালে শান্তিকামনায় মোতিঝিলের প্রাসাদে বাস করিতেন, সেই সময়ে তিনি প্রতিনিয়ত মন্দিরের শঙ্খঘণ্টার শব্দে বিরক্ত হইয়া স্বীয় অনুচরদিগকে গোস্বামীর নিকট খানা পাঠাইতে বলেন।
Leave a Reply