বঙ্গদেশে নীল উৎপাদনের আশাতীত সাফল্যের কারণ কি? বাংলাদেশের ইতিহাসবিদরা নীলের ব্যাপারে এত লেখালেখি করেছেন যে এ ব্যাপারে আমরা বেশ কিছু জানি। এসব লেখায় প্রধানতঃ তিনটি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
প্রথমতঃ অর্থনৈতিক ইতিহাসবেত্তাদের কারণে আমরা ভালভাবেই জানি বাংলার অর্থনীতিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যে কেমন করে উপর্যুপরি ইংরাজরা অর্থকরী ফসলের চাষ এখানে চালু করে। নীল এর মধ্যে প্রথম দিকের ফসল এবং বিশেষ অর্থকরী ফসল। এইসব ঐতিহাসিকদের লেখায় এই ফসল প্রবর্তনের পরিণামে বাংলার অর্থনীতির রূপান্তরের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
নীলের উদাহরণ দিয়ে গবেষকরা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে ঔপনিবেশিক বাংলার আর্থিক সংগঠনগুলো (এজেন্সি হাউস) কেমন করে ওই ব্যবস্থার অঙ্গীভূত হয়ে যায় এবং কেমন করে ওই সংগঠনগুলোকে ওদের পক্ষে বাণিজ্যিকভাবে কাজ করতে বাধ্য করা হয়।
দ্বিতীয়তঃ রাজনৈতিক ইতিহাসবিদরা দেখিয়েছেন যে, ইউরোপীয় নীলকরদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে চাষীদের কি তুমুল প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল এবং নীলচাষীদের উপর কি জঘণ্য নির্যাতন করা হত। চাষীদের প্রতিরোধ কেমন করে বিদ্রোহে রূপান্তরিত হল এবং তার ফলে কেমন করে ইংরাজ সরকারের নীতি পরিবর্তিত হয় এবং ১৮৬০ সালের পরে কি করে বাংলায় নীলচাষের বিপর্যয় ঘটল।
বাংলাদেশে নীলচাষের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের দুঃখ দুর্দশার লিপিকার হলেন ওই সব ইতিহাসবেত্তারা। তাদের বিবরণ থেকে জানা যায় বাংলার চাষীদের রাজনৈতিক সচেতনতার কথা বিকাশোউন্মুখ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কথা ও ঔপনিবেশিক সরকার মার্কেন্টাইলইজম থেকে কি করে অবাধ বাণিজ্যের দিকে ধাবিত হল সে সম্পর্কে।
Leave a Reply