সারাক্ষণ ডেস্ক:
মিয়ানমারের সামরিক শাসন ধীরে ধীরে যুদ্ধবিধ্বস্ত নাগরিকদের অবশিষ্ট সম্পদের পাচারকে বাধাগ্রস্ত করবে যা প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের রিয়েল এস্টেট বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। থাইল্যান্ডে মিয়ানমার নাগরিকরা শীর্ষস্থানীয় আবাসন ক্রেতাদের মধ্যে অন্যতম।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে, গত সপ্তাহে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে যারা থাইল্যান্ডে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় লিপ্ত ছিলেন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। অভিযুক্তরা হলেন ইয়াঙগন-বেইজড রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান মিন থু কোম্পানির তিনজন পরিচালক এবং একটি বিক্রয় অনুষ্ঠানে উচ্চতর আবাসন ইউনিট ক্রয়কারী তিন গ্রাহক।
মে মাসের শেষে যখন কিয়াট প্রতি ডলারে ৫,০০০-এ নেমে এসেছিল তখনই এদের গ্রেপ্তার করা হয়। কোভিড-১৯ মহামারী এবং ২০২১ সালের সামরিক ক্যু এর আগে ২০১৯ সালে যে মূল্য ছিল তার মাত্র ২৫% অবশিষ্ট ছিল।
সামরিক শাসক ও প্রতিরোধ গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র শত্রুতার তৃতীয় বছরে প্রবেশ করার সাথে সাথে, মায়ানমারের নাগরিকরা থাইল্যান্ডে প্রথম ত্রৈমাসিকে ২.২ বিলিয়ন বাহত ($৬০ মিলিয়ন) মূল্যের আবাসন কিনে ফেলেছে। চাইনিজ ক্রেতাদের পরেই এদের অবস্থান ।
এর ফলে ত্রৈমাসিকে রাজ্যে মিয়ানমারের আবাসন কেনার অংশ বেড়ে ১৩.৪% হয়েছে, যা ২০২৩ সালের ৫.৪% থেকে দ্বিগুণেরও বেশি।২০২৩ সালে মিয়ানমারের নাগরিকদের দ্বারা আবাসন কেনার মূল্য ছিল মোট ৩.৭ বিলিয়ন বাহত যা চাইনিজ এবং রাশিয়ানদের পিছনে তৃতীয় স্থানে।
নতুন মুদ্রা ছাপিয়ে সামরিক ব্যয়ের অর্থায়নের জন্য এবং বৈদেশিক মুদ্রা মজুত করায় কিয়াতের পতন ঘটে।তখন দেশের অভ্যন্তরে অবমূল্যায়িত মুদ্রা খুব কমই ব্যবহার করা হয়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক পূর্বাভাস দিয়েছে যে ২০২৪ সালে মায়ানমারে মুদ্রাস্ফীতি ১৫.৫% হবে এবং এর অর্থনীতি মাত্র ১.২% বৃদ্ধি পাবে।
কিয়াটকে উজ্জীবিত করার চেষ্টায় সরকার বৈদেশিক মুদ্রা অ্যাকাউন্ট, ব্যক্তিগত কোম্পানির আয় এবং শ্রমিকদের রেমিটেন্সের বাধ্যতামূলক রুপান্তর করেছে এবং মে মাসে বেসরকারী খাতকে বিনিময় বাণিজ্যে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছে।
থাইল্যান্ডে দুই বছর ধরে বসবাসকারী মায়ানমারের এক বিপণন কর্মকর্তা মা সান্দার বলেছেন, “আপনি যদি তাদের নিয়ম এবং আইনের অনুসরণ করেন তাহলেও আপনি নিরাপদ থাকবেন এমন কিছু নেই “ এছাড়াও, ব্যাংকগুলি প্রায় মেশিন হয়ে গেছে।” ” তবে,যদি আপনার অন্তত বিদেশে কোনো সম্পত্তি থাকে তাহলে আপনি অধিকতর নিরাপদ থাকবেন।”
মিয়ানমারের একটি অভিজাত মার্কেট
থাইল্যান্ডে মায়ানমারের নাগরিকদের আবাসন সেদেশের মালিকরা দখল করতে পারে, হয় খালি বসে থাকতে হতে পারে নয়তো ভাড়া নিতে পারে। মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের সম্পদ রাখার জন্য ব্যাংকক হল সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য৷
মা স্যান্ডার বলেছিলেন , ফুকেটের দক্ষিণ দ্বীপটি একটি দ্বিতীয় ইয়াঙ্গুনের মতো যেখানে প্রচুর বার্মিজ যোগাযোগ রয়েছে তাই এখানে একটি ফ্ল্যাট থাকা খারাপ ধারণা নয়।”মায়ানমারের নাগরিকরা যে কোনো দামের ব্যাংকক ইউনিট কিনেছে। প্রথম ত্রৈমাসিকে সিংহভাগ আবাসন প্রতিটির দাম ৩ মিলিয়ন বাহথের বেশি ছিল।
ব্যাংককের দালালরা বলেছেন যে ইয়াঙ্গুনে সম্পত্তি সংক্রান্ত গ্রেপ্তারের পর থেকে ব্যবসার গতি কমে গেছে। তবে চিয়াং মাইয়ের একজন রিয়েল এস্টেট এজেন্ট কো তুন এসকল গ্রেপ্তারকে “ননসেনস” বলে অভিহিত করেছেন।
থাইল্যান্ড কম বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের বিরুদ্ধে মামলা বাড়ালে মিয়ানমারের রিয়েল এস্টেট ব্রোকার এবং ক্লায়েন্টদের উদ্বেগের কারণ হতে পারে।মায়ানমার থেকে বিদেশী সম্পত্তি কেনার জন্য অর্থ স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে জড়িত অসুবিধার কারণে, মায়ানমারের দালালরা সাধারণত প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বাজারে আবাসনের জন্য কম পরিমাণ প্রদর্শন করে, যার ফলে ট্যাক্স বিলও কম হয়।
চিয়াং মাইয়ের আরেক রিয়েল এস্টেট এজেন্ট মা ইঙ্গগিন বলেন, “কিয়াটের অস্থিরতার সাথে, এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে মায়ানমারের মানুষ তাদের হাতে কিয়াট রাখতে চায় না এবং তারা তাদের অর্থ সম্পত্তি, সোনা বা মার্কিন ডলারে বিনিয়োগ করে।”
“আমি মনে করি না যে সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারগুলি এখানে কর্মরত এজেন্টদের প্রভাবিত করবে, তবে এটি আমাদের লেনদেনের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।”বিদেশী ক্রেতারা থাইল্যান্ডের আবাসন বাজারে, বিশেষ করে ব্যাংকক এবং ননথাবুরি, সামুত প্রাকার্ন এবং চোনবুরির মতো আশেপাশের প্রদেশগুলিতে একটি আধিপত্য কমাতে সাহায্য করেছে৷
কম সুদের হারের কারনে থাই ডেভেলপাররা মহামারীর বছরগুলিতে নতুন প্রকল্প তৈরি করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু এখন উচ্চ সুদের হারের কারনে অবিক্রীত আবাসনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ব্যাপক ভোক্তা ঋণ এবং কঠোর ব্যাঙ্ক ঋণের প্রয়োজনীয়তা থাই ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতাকে কমিয়ে দিয়েছে।
Leave a Reply