পিয়ের পল দারাক ও ভেলাম ভান সেন্দেল
অনুবাদ : ফওজুল করিম
পানির উপর থেকে এগুলো সরিয়ে নিয়ে পানিতে সেদ্ধ করা হত। তারপর উপর থেকে নীলের কাথ সরিয়ে নিয়ে সেদ্ধ করা হত পানিতে। আবার যখন পানির উপরে ঘন হয়ে নীলের পরত জমা হত তা বিশেষ ধরনের বাক্সে ঢেলে চাপ দিয়ে পানি নিংরে ফেলা হত। এগুলো টুকরো টুকরো করে কেটে শুকানো হত কয়েক সপ্তাহ।
তারপর এগুলো পেটিজাত করে কলকাতায় পাঠানো হত রফতানির জন্য। নীল উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কেনো সূক্ষ্ণ যন্ত্রপাতি লাগত না, প্রয়োজন হত না আমদানী করা দামী যন্ত্রপাতির। যন্ত্রপাতি যা লাগত তা বানানো হত বাঙলাদেশেই। এর অর্থ এই নয় যে নীল উৎপাদন প্রক্রিয়া ছিল সরল। নীল গাছ পানিতে গেঁজানো থেকে নিয়ে শুকানোর ছাউনি নির্মাণ পর্যন্ত সবই ছিল জটিল এক উৎপাদন প্রক্রিয়ার অংশ বিশেষ।
এগুলো নির্ভর করত জটিল এক কারিগরী ব্যবস্থার উপর। কাজটা আরও কঠিন ছিল এইজন্যে যে পুরো ব্যাপারটাই নাজুক এক ভারসাম্য রক্ষার কাজ। এর মধ্যে এমন কিছু উৎপাদান ছিল যা ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এর বেশির ভাগই ছিল প্রাকৃতিক উপাদানঃ নীল উৎপাদনের বেশিরভাগ জিনিস বঙ্গের উষ্ণমন্ডলীয় আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল সূর্যের কিরণ ও তাপমাত্রার তারতম্য ঘটত বছর থেকে বছরে।
এর ফলে একটি বিশেষ নীলক্ষেত থেকে বছরে যে পরিমাণ নীল পাওয়া যাবে ধারণা করা হত তার তারতম্য ঘটত। নীল উৎপাদন প্রক্রিয়ার যে ব্যাপারগুলো উৎপাদনকারীদের নিজেদের হাতে ছিল শুধু তার উপর ভরসা করে তারা ভাল নীলের নিশ্চয়তা দিত। তাই আবহাওয়ার খেয়ালখুশীর প্রভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য তাদের লক্ষ্য রাখতে হত কতক্ষণ ধরে নীল গাছ পানিতে গেঁজানো হবে সেই সময়ের উপর, জল কতটুকু নির্মল তার উপর, বয়লারের তাপ কতটুকু তার উপর, এ রকম অসংখ্যা জিনিসের উপর লক্ষ্য রাখতে হত।
Leave a Reply