নীলকুঠিতে বিদ্যমান শ্রম-সম্পর্কের বিষয়ে এই রিপোর্টে আলোকপাত করা হয়েছে। কুঠিতে শ্রমিক নিয়োজিত ছিল বিভিন্ন শ্রেণীর যেমন স্থানীয় বহিরাগত, মরশুমী, নারী, পুরুষ, বিভিন্ন রকম কাজের জন্য দক্ষ ইত্যাদি। এ রিপোর্টের সূত্র ধরে সাধারণভাবে অথবা বিস্তারিতভাবে তখনকার শ্রম সম্পর্কের উপর বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা করা যেতে পারে।
নীল উৎপাদন হল উপনিবেশ আমলের প্রথম দিকের শিল্প এবং এই সুবাদেই যথেষ্ঠ গবেষণা চলতে পারে এ সম্পর্কে। এর তাৎপর্য কম নয়। প্রথমতঃ বহুদূরে অবস্থিত হাইতি ও মরিশাসের নীল উৎপাদনের সংগঠন শ্রম-শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনার মডেল গ্রহণ করেছিলেন বঙ্গদেশের সে সময়ের নীলকররা।
তারা অষ্টাদশ শতাব্দীর নীল উৎপাদনের কারিগরী পদ্ধতি আয়ত্ব করেছিল এবং বিদেশ থেকে ব্যবস্থাপনা স্থানান্তরিত করেছিল। আধুনিককালের ইতিহাসবেত্তারা কেবলমাত্র উপলব্ধি করতে পারছেন এসব তথ্যাবলী ও বিষয়গুলো। এই কারিগরী জ্ঞান স্থানান্তরের ব্যাপারটি লেখার মাধ্যমে ঘটলেও (উদাহরণঃ কারপেন্টিয়ার কলিগণি ও মনকের ম্যানুয়েল) নীলকর ও নীলকুঠির ব্যবস্থাপকদের আন্তর্জাতিক স্থানান্তরের মাধ্যমেও ঘটেছে।
দ্বিতীয়তঃ বঙ্গদেশে নীল শিল্প তার সক্রিয়তার জন্যই কৃষি-শিল্পের মডেলরূপে পরিগণিত। বঙ্গদেশের নীলশিল্প শুধুমাত্র উত্তর ভারত, জাভা ও সেনেগালের কাছেই অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত ছিল না তার বেশি আরও কিছু ছিল। নীল শিল্প বঙ্গদেশে যেভাবে সংগঠিত ছিল তা পরবর্তীকালে বঙ্গদেশে অন্যান্য কৃষি-শিল্প সংগঠনের (উদাঃ পাট, সিল্ক ও চিনি) পথ প্রদর্শক। এ ব্যাপারটিও এখন খতিয়ে দেখার মত।
বাংলাদেশের নীল শিল্পের কারিগরী ও ব্যবস্থাগত তথ্যাবলী ফরাসীরা নিজেদের স্বার্থেই হস্তগত করার চেষ্টা করে। এ গ্রন্থের পরবর্তী পরিচ্ছেদে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ফরাসীদের স্বপ্ন ছিল বাংলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তারা পশ্চিম আফ্রিকার ফরাসী উপনিবেশ সেনেগালে গড়ে তুলবে সফল নীল শিল্প।
Leave a Reply