মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন।
মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে।
তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু।
তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক
জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসার সম্ভাবনা আছে কি নেই, অসহযোগ আন্দোলনের শেষ কোথায়, পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন, এইসব নিয়ে ফাটাফাটি তুল-কালাম চলছে সমানে। ‘আক্রান্ত হবার ব্যাপারটা না হয় বোঝা গেল–‘ ইস্তাহার থেকে চোখ তুলে খোকা বললে, ‘কিন্তু প্রত্যাঘাতের ব্যাপারটা কিভাবে হবে শুনি! খালি হাতে, না পায়খানা ঘরের ঝাড়ু দিয়ে?’
‘সেকথা পরে হবে–‘ নুরুদ্দিন ওর দিকে কাত হ’য়ে বললে, ‘ওই পায়খানা ঘরের ঝাড়ুটা তুই পেলি কোথায়? ওটা তো শালা মুরাদের পৈতৃক সম্পত্তি, ক’দিন থেকে সমানে ওটা দিয়ে রেক্স ঝাড়ু দিয়ে যাচ্ছে!’
‘মুরাদ আসেনি আজ?’
‘হয়তো এসেছিলো, আমাদের সঙ্গে দেখা হয়নি। নাও আসতে পারে; খুব একচোট হ’য়ে গেছে কাল, হাতাহাতি পর্যন্ত!’
‘কার সঙ্গে?’
‘কার সঙ্গেই বা নয়!’ নুরুদ্দিন হাসতে হাসতে বললে, ‘আমার সঙ্গে মুরাদের, মওলার সঙ্গে রহমানের, শেষে কতোগুলো অচেনা হঠাৎ দেশপ্রেমিকের সঙ্গে এক মুরাদ ছাড়া আর সকলের। যাকে বলে ফাটা- ফাটি।’
‘সাংঘাতিক ব্যাপার!’
রহমান, বললে, ‘এটা তো এখন নৈমিত্তিক ব্যাপারে এসে দাঁড়িয়েছে। তুই তো আর এ পথ মাড়াস না, জানবি কি ক’রে। আড়ালে আড়ালে করছিস কি, গোপনে ট্রেনিং নাকি?’
‘কিছুই না–‘
‘বিশ্বাস হয় না–‘ মাথা নেড়ে রহমান বললে, ‘এটা এমনই একটা সময় যাচ্ছে যা আমাদের জীবনে আর কখনো আসেনি, হয়তো আর আসবেও না। কিছু না ক’রে হাতপা গুটিয়ে ব’সে থাকা কারো পক্ষেই সম্ভব নয় এখন। নির্ঘাৎ তলে তলে বোমা বানাচ্ছিস তুই!
নুরুদ্দিন বাধা দিয়ে বললে, ‘তুইও যেমন, বোমা না ঘন্টা! দেখছিস না কেমন গরুচোর গরুচোর চেহারা হয়েছে কুটুকুমারের। দেদার মাগী চটকে বেড়াচ্ছে ফ্রি স্টাইলে; ঠাউরে দ্যাখ, কেমন ফ্যাকাশে মেরে গেছে! লোপাট-বিজ্ঞানের আইনস্টাইন শালা, নে নে আরেক রাউন্ড চায়ের কথা ব’লে দে!’
Leave a Reply