শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫০ অপরাহ্ন

মানব পাচারবিরোধী লড়াই: যুক্তরাষ্ট্রের টিআইপি হিরো অ্যাওয়ার্ড পেলেন ব্র্যাকের আল-আমিন নয়ন

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪, ১১.৩২ এএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

মানব পাচারবিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশের নাগরিক আল-আমিন নয়ন যুক্তরাষ্ট্রের টিআইপি হিরো হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। ২৪শে জুন সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মানব পাচারবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এরপর তিনি মানব পাচারবিষয়ক (ট্রাফিকিং ইন পারসনস বা টিআইপি) প্রতিবেদনটি প্রকাশ ও বক্তৃতা করেন। প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে ‘টিআইপি হিরো’ স্বীকৃতি পাওয়া ব্যক্তিদের সম্মাননা জানান তিনি।

আল আমিন নয়ন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেনের কাছ থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন ,২৪ জুন ২০২৪।

বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাপক নয়ন বিমানবন্দরে বিদেশ-ফেরত ও পাচারের শিকার মানুষদের সহায়তায় কাজ করেন। দক্ষিণ এশিয়ায় নয়ন ছাড়া এ বছর আর কেউ এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পাননি। নয়ন ছাড়াও কেনিয়া, মালি, ফিলিপাইন, সার্বিয়া, স্পেন, সুরিনাম, বলিভিয়া এবং ইরাকের একজন করে মোট নয়জন ২০২৪ সালে টিআইপি হিরোর স্বীকৃতি পেয়েছেন।

এ বছর অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘সারা বিশ্ব থেকে নির্বাচিত নয় টিআইপি হিরোকে ধন্যবাদ। আমাদের এই নায়কেরাই সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন।’ বিশ্বজুড়ে মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিবেদিতভাবে কাজ করছেন—এমন ব্যক্তিদের ২০০৪ সাল থেকে প্রতিবছর সম্মানিত করে আসছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। যুক্তরাষ্ট্রের এই পুরস্কারকে মানব পাচারবিরোধী লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় পুরস্কার হিসেবে ধরা হয়।

পাচারের শিকার থেকে টিআইপি হিরো হিসেবে মর্যাদা পাওয়ার অনুভূতি প্রসঙ্গে আল-আমিন নয়ন বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় কাজ করতে গিয়ে আমি নিজে পাচারের শিকার হয়েছিলাম। পরে দেশে ফিরে অনিয়মিত অভিবাসন ও পাচারের শিকার মানুষের পাশে থাকার কাজে যুক্ত হই। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার হিসেবে বিদেশ-ফেরত অসহায় মানুষ ও সারাদেশে পাচারের শিকার মানুষের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করি। এই কাজ করতে গিয়ে বহুবার নানা বিপদে পড়তে হয়েছে। এমনকি জেলেও গিয়েছি। এই পুরস্কার আমাকে আরো বেশি করে মানুষের জন্য কাজ করতে উৎসাহিত করবে।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মী নয়ন সম্পর্কে বলা হয়-ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীরা কোনো বিপদে পড়লে সবার আগে ছুটে যান নয়ন। ২০০৭ সালে মালয়েশিয়ায় কাজ করতে গিয়ে পাচারের শিকার হওয়া নয়ন আজ বিদেশ-ফেরত মানুষকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখান। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার হিসেবে বিদেশ-ফেরত ও পাচারের শিকার অন্তত: ৩৪ হাজার মানুষকে তিনি সহায়তা করেছেন।

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জানান, ‘আল আমিন নয়নের মতো পাচারের শিকার ও প্রবাসী অন্ত:প্রাণ নিবেদিত মানুষ বিরল। তিনি তার কাজ দিয়ে প্রবাসীদের ‘নয়ন ভাই’ হয়ে উঠেছেন। নয়ন, তার কাজের জন্য ২০২৩ সালে ব্র্যাকের সবচেয়ে সম্মানের ‘স্যার ফজলে হাসান আবেদ মূল্যবোধ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের টিআইপি পুরস্কার তাকে নিজের কাজে নতুন শক্তি দেবে। নয়ন আসলে আমাদের সবারই হিরো।’

আল-আমিন নয়ন ২০০৭ সালে কাজের উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়া গিয়ে নিজে মানব পাচারের শিকার হয়ে সেবছরই দেশে ফিরেন। দেশে ফিরে শুরু করেন নিজের অধিকার ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের লড়াই। পাশাপাশি যুক্ত হন মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি ও প্রবাসীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। নয়নের স্বপ্ন ছিল কোন বড় প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে আরও বেশি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। ২০১৭ সালে তিনি ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামে কাজ শুরু করেন। এরপর থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীরা কোনো বিপদে পড়লেই ছুটে যান তিনি। কোনো নারী হয়তোবা বিদেশ থেকে ফিরেছেন, বিমানবন্দর থেকে বাড়ি যেতে পারছেন না, হয়তো ফিরে আসা কোনো প্রবাসীর খাবার প্রয়োজন- ছুটে যান নয়ন। প্রবাসীদের কাছে তিনি স্রেফ ‘নয়ন ভাই’ নামে পরিচিত।

করোনার সংকটকালে দেশে ফেরা প্রবাসীদের খাবার, চিকিৎসা, পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়াসহ যেকোনো সংকটে কাজ করেন তিনি। অবস্থাটা এখন এমন হয়েছে, বিমানবন্দরে মানসিকভাবে অসুস্থ বা ঠিকানাহীন কোনো কর্মী দেখলেই প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক কিংবা বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ফোন দেয় আল–আমিন নয়নকে।

বাংলাদেশে মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক “অনির্বাণ সারভাইভার ভয়েস” এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নয়ন। এ সব কাজ করতে গিয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয় যা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক দাবি করে নয়নের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানায় অভিবাসন ও অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করছে এমন সব সংগঠন। বর্তমানে তিনি এ মামলায় জামিনে আছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024