সারাক্ষণ ডেস্ক
এশিয়া, বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি । বর্তমানে এই অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। দ্রুত নগরায়ন এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি এ অঞ্চলের মানুষের জীবনধারা, সুস্থতা ও পুষ্টি সম্পর্কে তাদের মনোভাবকে পরিবর্তন করেছে। পাশাপাশি, এই অঞ্চলের আধুনিক ভোক্তারা সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে খাদ্যের ভূমিকা সম্পর্কে ক্রমান্বয়ে সচেতন হয়ে উঠেছেন। একই সময়ে, উন্নত এবং উন্নয়নশীলদের মধ্যে বৈষম্যও বিস্তৃত হচ্ছে।
যদিও অনেক গ্রামীণ এলাকায় অপুষ্টি বজায় রয়েছে, সেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের স্থূলতার হারে উদ্বেগ বাড়ছে। বর্তমানে ৩০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এখন এই অঞ্চলে স্থূলতার সাথে লড়াই করছে।এই মুহুর্তে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্থূলতার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা আলোচনায় আসছে বারবার।দূষণ, অনুপযুক্ত খাদ্য ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন বাজার জুড়ে অসংলগ্ন নিয়ন্ত্রকগুলির মতো চ্যালেঞ্জে মোকাবিলা করার কারণে খাদ্য সুরক্ষারও একটি চাপ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
খাদ্য সংস্কার সাধারনত পুষ্টির উপাদান বাড়ানো, চিনি, লবণ এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বির মতো উপাদানের উপস্থিতি হ্রাস করা বা অন্যান্য গুণাবলী বাড়ানোর মতো প্রক্রিয়াগুলিকে নিয়ে স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলার একটি মূল কৌশল হতে পারে। এশিয়ার খাদ্য শিল্প এই অঞ্চলে একটি পথপ্রদর্শক হিসেবে বিরাজ করছে। এসব এখন শুধু রুচি পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে নয় বরং উন্নত ভোক্তা স্বাস্থ্যে অবদান রাখার ক্ষেত্রেও কার্যকরী হচ্ছে। একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ইতোমধ্যে এই অঞ্চলের ৯৬% খাদ্য ও পানীয় সংস্থাগুলি তাদের খাদ্যের মান নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় জড়িত বা নিয়োজিত থাকার পরিকল্পনা করেছে।
ব্যাপকভাবে বিভিন্ন পরিকল্পণা গ্রহণ করা সত্ত্বেও, খাদ্য সংস্কার ভোক্তাদের গ্রহণযোগ্যতা এবং প্রবিধানের পরিপ্রেক্ষিতে বাধার সম্মুখীন হয়, যদিও এই কৌশলগুলি খুব সাধারনভাবেই কাজ করে। যদিও এই সংস্কার এশীয় জনগনের কাছে একটা ভুল বার্তা দেয়। যেমন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, কিছু সংযোজন বিয়োজন এবং বিকল্প উপাদানগুলির ব্যবহারের বিরুদ্ধে ভোক্তারা আন্দোলন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, চিনির পরিমাণ কমাতে খাদ্য প্রস্তুতকারীরা প্রায়শই কম-ক্যালোরি বা নো-ক্যালোরি মিষ্টির দিকে ফিরে যায়।
যদিও এই বিকল্পগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে ক্যালোরির পরিমাণ কমাতে পারে এবং ডায়াবেটিস বা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে তবুও এগুলোর ব্যবহার প্রায়শই তাদের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের প্রভাব এবং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে। তবুও কম- এবং নো-ক্যালোরি মিষ্টি কয়েক দশক ধরে খাদ্য ও পানীয়তে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং বিশ্বের সবচেয়ে ভালোভাবে গবেষণা করা কিছু উপাদান এতে যোগ হয়েছে।
বাজারে খাদ্য ও পানীয়তে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত সুইটনারগুলি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার খাদ্য সংযোজন বিষয়ক জয়েন্ট এক্সপার্ট কমিটি-এর মতো বহু উচ্চমানের আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির দ্বারা কঠোর পরীক্ষা এবং এর নিরাপত্তা মূল্যায়ন করেছে ৷ স্বাস্থ্যকর, চর্বি বিহীন যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পক্ষে স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ কমানো হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
কিন্তু ভোক্তারা প্রায়ই স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত পণ্যগুলি গ্রহণ করতে চায়না তাদের ভুল ধারণা এবং এগুলোর সুবিধার সাথে পরিচিতির অভাবের কারণে।
আজকাল কিছু ভোক্তা ওজন বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে যেকোন ধরণের চর্বিকে দায়ী করে চলেছেন। কিন্তু অজ্ঞতার কারনে মানুষের খাদ্যতালিকায় থাকা উচিৎ এমন উপকারী চর্বি অন্তর্ভুক্ত না করাটা একটি সাধারণ অনিচ্ছার কারণে হতে পারে। যেটা ভুল। ওমেগা-৩ এবং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটের উপকারিতা সম্পর্কে কিছু উৎসের সাথে চর্বি সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী তথ্য মানুষকে বিভ্রান্তিকর অবস্থার মধ্যে ফেলে।
স্বাস্থ্যকর ডায়েটকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে করা নিয়মগুলি কখনও কখনও অনিচ্ছার কারনে গ্রহণ না করাটাও একধরনের বোকামী।
উদাহরণস্বরূপ, খাদ্য সংযোজনগুলির জন্য জাপানের স্পেসিফিকেশন এবং স্ট্যান্ডার্ডগুলি খাদ্য সংযোজনগুলির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে এবং অত্যন্ত কঠোরভাবে পরিচালনা করে। প্রকৃতপক্ষে, কিছু সংযোজন দীর্ঘ অনুমোদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং বেশী খরচে পাওয়া গেছে।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ভোক্তা স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে, এই ধরনের প্রবিধানগুলি উদ্ভাবনকে দমিয়ে রেখে এবং স্বাস্থ্যকর, সংস্কারকৃত খাদ্য বিকল্পগুলিতে ভোক্তাদের অংশগ্রহণ বিলম্বিত করে খাদ্য শিল্পের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
আবার অত্যধিক জটিল এবং ব্যাপক প্রবিধানের ব্যাখ্যা এবং বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ জ্ঞান এবং দক্ষতার প্রয়োজন হতে পারে। এটি নিয়ন্ত্রক কম্পলায়েন্স এর জটিলতা এবং খরচের কারণে নির্মাতাদের উদ্ভাবনী, স্বাস্থ্যকর উপাদান অন্তর্ভুক্ত করা থেকে বিরত রাখতে পারে।
এই ধরনের নিয়মগুলি ছোট এবং মাঝারি উদ্যোগগুলি (এসএমই) এবং শিল্পজাত খাদ্য উৎপাদনকারীদের উপর অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, যাদের নতুন প্রবিধানের সাথে দ্রুত খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য বা নতুন পণ্য লাইনের বিকাশে বিনিয়োগ করার জন্য সংস্থানগুলির অভাব হতে পারে।
বিপরীতভাবে, সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্যকর উপাদান উন্নয়ন প্রকল্প (HIDS) এবং অস্ট্রেলিয়ার পার্টনারশিপ রিফর্মুলেশন প্রোগ্রাম (PRP) এর মতো প্রোগ্রামগুলি কীভাবে বৈজ্ঞানিক নীতি নকশা পুনর্নির্মাণের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে পারে তা তুলে ধরে। HIDS, উদাহরণস্বরূপ, স্বাস্থ্যকর উপাদানগুলির বিকাশ এবং বিপণনের জন্য $ ৫০০,০০০ সিঙ্গাপুর ডলার ($৩৭০,০০০) পর্যন্ত খরচ করে৷
এটি কেবল বাণিজ্যিকীকরণে সহায়তা করে না, বরং স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক খাদ্য উৎপাদনের দিকে আন্দোলনে অংশ নিতে এসএমইকে উৎসাহিত করে। পিআরপি, ইতিমধ্যে, উত্পাদিত খাদ্যে চিনি, সোডিয়াম এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট ধীরে ধীরে কমাতে জনস্বাস্থ্য খাত এবং খাদ্য ও পানীয় সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতার উপর জোর দিচ্ছে ৷
খাদ্য সংস্কার এমন কিছু নয় যা ভোক্তারা সহজে বোঝেন বা যখনই এটি ঘটে তখনই সচেতন হয়ে যান।
সংস্কার সম্পর্কে জনগনের সচেতনতার অভাবেই এর সুবিধাগুলির ফল ভোগ করতে পারেনা সাধারন মানুষ। খাদ্য বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ এবং পুষ্টিবিদরা নিশ্চিত করতে অনেক চেষ্টা করেন যে যখন উপাদানগুলি পরিবর্তন করা হয়, তখনও পণ্যগুলির স্বাদ এবং টেক্সচার থাকে যা গ্রাহকরা পরিচিত এবং উপভোগ করেন। সংস্কার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রক্রিয়াটিতে স্বচ্ছতা আনে এবং এর সুবিধার বৃহত্তর গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের পথ খুলে যায়।
কার্যকর যোগাযোগ কৌশল, যেমন “স্বাস্থ্যকর পছন্দ” লেবেলিং সিস্টেম ইতোমধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ দ্বারা গ্রহণ করেছে। এবং এধরনের সিস্টেম স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলির দিকে ভোক্তাদের গাইড করতে সহায়ক হতে পারে । জনস্বাস্থ্যের উন্নতিতে এশীয় সরকারগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং তাদের নাগরিকদের সুস্থতা রক্ষা করে এমন সুস্পষ্ট পুষ্টি লক্ষ্য নির্ধারণ এবং নীতিগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া চালিয়ে যাওয়া উচিত।
সমালোচনামূলক তথ্যের একটি বিশ্বস্ত উত্স হিসাবে, তাদের কাছে সম্ভাব্য ক্ষতিকারক ভুল তথ্য দূর করার একটি বিশাল সুযোগ রয়েছে যা ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়ের জন্য উন্নত স্বাস্থ্য ফলাফলের পথে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে, সংস্থাগুলিকে অবশ্যই সংস্কারের ক্ষেত্রে উচ্চ মান বজায় রাখতে হবে, বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে এবং পণ্যের গুণমান উন্নত করতে একটি পদ্ধতিগত, বিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতির নিয়োগ করতে হবে।
বিশেষ করে ছোট এবং বড় ব্যবসার মধ্যে সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্য জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্পগুলির সহজলভ্যতা এবং এর বৈচিত্র্যকে উন্নত করা যেতে পারে।
Leave a Reply