সারাক্ষণ ডেস্ক
অষ্টাদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশন বসেছে সোমবার। আজ বুধবার পার্লামেন্টের স্পিকার নির্বাচিত হবে। স্পিকার নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী জোট সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও ডেপুটি স্পিকার পদ না পেয়ে বিরোধীরাও স্পিকার পদে গতকাল প্রার্থী দিয়েছে। এদিকে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো এমপিদের শপথ গ্রহণ হয়। এরপর কিছুক্ষণের জন্য পার্লামেন্ট উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
দ্বিতীয় দফায় লোকসভার স্পিকার হিসেবে এনডিএ জোট সিলমোহর দিয়েছে ওম বিড়লাকে। অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষ থেকে বিড়লার বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেস এমপি কে সুরেশ। আজ বুধাবার ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচিত হবে লোকসভার স্পিকার। উল্লেখ্য, স্বাধীন ভারতে এই প্রথম শীর্ষ সংসদীয় এই পদের জন্য নির্বাচন হবে। যদিও ভারতের কিছু গণমাধ্যম দাবি করেছে, এর আগেও দুই বার স্পিকার পদে নির্বাচন হয়েছে।
যে কারণে স্পিকার নির্বাচন
স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার কথা হয়েছিল কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের মধ্যে। স্পিকার নির্বাচনে বিরোধীদের সমর্থন চেয়ে সোমবার কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে কথা বলেন রাজনাথ। এর পর মমতা, অখিলেশ, স্ট্যালিনসহ সমস্ত বিরোধীদের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন খাড়গে। ডেপুটি স্পিকার পদ দেওয়া হবে বিরোধীদের, এই শর্তে ওম বিড়লাকে সমর্থনে সম্মতি জানানো হয়েছিল ‘ইন্ডিয়া’র তরফে। যদিও শাসক শিবির কথা রাখেনি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। এর জেরেই রাজধানীতে জমজমাট শাসক-বিরোধী টানাপড়েন। স্পিকার পদে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের পক্ষে গতকাল মনোনয়ন জমা দেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কে সুরেশ। এনডিএ জোটের পক্ষে মনোনয়ন জমা দেন ওম বিড়লা।
রাহুলের অভিযোগ অস্বীকার রাজনাথের
স্পিকার নির্বাচন নিয়ে রাজনাথ সিংহের বিরুদ্ধে কথা না রাখার অভিযোগ এনেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। রাহুল বলেছিলেন, সরকার মনোনীত স্পিকারকে সমর্থনের শর্ত হিসাবে মল্লিকার্জুন খাড়গে বিরোধী শিবির থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করতে বলেন। শুনে রাজনাথ বলেন, তিনি এ বিষয়ে পরে ফোন করে জানাবেন। কিন্তু তিনি আর ফোন করেননি। রাহুলের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রাজনাথ। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সোমবার থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তার সঙ্গে তিন বার কথা হয়েছে খাড়গের। যদিও কী বিষয়ে কথা হয়েছে, সে ব্যাপারে সবিস্তার জানাননি কিছু। রাহুল বলেছিলেন, খাড়গেকে ‘ফোন করব’ বলেও না করে অপমান করেছেন রাজনাথ। পালটা এনডিএর তরফে গতকাল বলা হয়, রাজনাথ মঙ্গলবার, স্পিকারদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন সকালেই খড়ে্গকে ফোন করেন। কিন্তু তিনি ব্যস্ত থাকায় কথা বলতে পারেননি। তার বদলে কথা বলেন কেসি বেণুগোপাল। কিন্তু তারা তাদের শর্ত একটুও বদলাতে রাজি হননি। স্পিকারকে সমর্থনের আগে ডেপুটি স্পিকারের নাম ঠিক করতে বলেছিল বিরোধী জোট ইন্ডিয়া। এনডিএর দাবি, রাজনাথ তাদের বলেন, নির্বাচনের পরে এ বিষয়ে বসে কথা বলবেন। কিন্তু কংগ্রেস এবং বিরোধীরা সেই শর্তে রাজি হননি।
শপথ গ্রহণে উত্তপ্ত লোকসভা
শপথ গ্রহণের দ্বিতীয় দিনে স্লোগানে উত্তপ্ত হলো লোকসভা। জয় বাংলা, জয় কালী, জয় জগন্নাথ থেকে শুরু করে দলনেতা, নেত্রী, রাজ্য এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয়ে স্লোগান দিলেন ইন্ডিয়া জোটের এমপিরা। লোকসভা থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর গতকাল শপথগ্রহণ করেন তৃণমূল এমপি মহুয়া মৈত্র। তিনি শপথবাক্য পাঠ করতে উঠতেই তুমুল স্লোগান দিতে থাকেন তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি থেকে শুরু করে অন্যান্য বিরোধী দলের এমপিরা। ট্রেজারি বেঞ্চকে লক্ষ্য করে বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান কোথায় গেলেন, মহুয়া মৈত্র ফিরে এসেছেন।’ ফৈজাবাদে জয়ী অবদেশ প্রসাদ শপথ নিতে উঠলে টেবিল চাপড়ে অভিনন্দন জানান বিরোধী এমপিরা। হাতে সংবিধান নিয়ে শপথবাক্য পাঠ করেন রাহুল গান্ধী। এমপি হিসেবে শপথগ্রহণ করেছেন অভিষেক ব্যানার্জি। —আনন্দবাজার পত্রিকা ও আজকাল পত্রিকা
ভারতকে দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বলেছেন, চীন থেকে শেখার আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ মনে করল এদিকে ঝুঁকলাম নাকি ওদিকে ঝুঁকলাম। আমি সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।’
গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সূচনা বক্তব্যে ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরের অর্জনের কথা তুলে ধরেন।
ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নে কার সঙ্গে কতটুকু বন্ধুত্ব দরকার, সেটা করে যাচ্ছে সরকার। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়—বাংলাদেশের এমন পররাষ্ট্রনীতির বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেন। বলেন, ‘ভারত আমাদের চরম দুঃসময়ের বন্ধু। আবার চীন যেভাবে নিজেদের উন্নত করেছে, সেখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সেগুলো সামনে রেখে সম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছি। আমি সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চীন আমাকে দাওয়াত দিয়েছে, আমি চীনে যাব। আমি যাব না কেন? বাংলাদেশ সার্বভৌম দেশ। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়েই চলব। কার কী ঝগড়া, সেটা তাদের সঙ্গে থাক। আমার না। দেশের মানুষের কতটুকু উন্নতি করতে পারি, সেটাই আমার।’
তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য চীন ও ভারত উভয় দেশ প্রস্তাব দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই আমি বিবেচনা করব কোন প্রস্তাবটা দেশের মানুষের কল্যাণে আসবে, আমি সেটাই করব। কোন প্রস্তাব নিলে আমি ঋণ কতটুকু নিলাম, শোধ করলাম, দিতে কতটুকু পারব। সবকিছু বিবেচনা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ভারত যখন বলছে তারা করতে চায় এবং টেকনিক্যাল গ্রুপ পাঠাবে, অবশ্যই তারা আসবে। আমরা যৌথভাবে সেটা দেখব। চীনও একটা সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। ভারতও একটা করবে। যেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য, লাভজনক—সেটাই করব।’
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত যদি প্রকল্পটা করে দেয়, তাহলে সব সমস্যার সমাধানই হয়ে যায়। ভারতের সঙ্গে যদি তিস্তা প্রকল্পটা করা হয়, তাহলে পানি নিয়ে আর সমস্যা থাকে না।
তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য চীন ও ভারত উভয় দেশ প্রস্তাব দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই আমি বিবেচনা করব কোন প্রস্তাবটা দেশের মানুষের কল্যাণে আসবে, আমি সেটাই করব। কোন প্রস্তাব নিলে আমি ঋণ কতটুকু নিলাম, শোধ করলাম, দিতে কতটুকু পারব। সবকিছু বিবেচনা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ভারত যখন বলছে তারা করতে চায় এবং টেকনিক্যাল গ্রুপ পাঠাবে, অবশ্যই তারা আসবে। আমরা যৌথভাবে সেটা দেখব। চীনও একটা সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। ভারতও একটা করবে। যেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য, লাভজনক—সেটাই করব।’
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত যদি প্রকল্পটা করে দেয়, তাহলে সব সমস্যার সমাধানই হয়ে যায়। ভারতের সঙ্গে যদি তিস্তা প্রকল্পটা করা হয়, তাহলে পানি নিয়ে আর সমস্যা থাকে না।
৫৪টি নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সমস্যা রয়ে গেছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, চীনেরও পানি তুলে নেওয়ার ঘটনা আছে। হিমালয় রেঞ্জের নদীগুলো নিয়ে নানা ধরনের দ্বন্দ্ব আছে, সমস্যা আছে; আবার সমাধানও আছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তা শুধু পানি ভাগাভাগির বিষয় নয়। গোটা তিস্তা নদীটাকে পুনরুজ্জীবিত করে উত্তরাঞ্চলে সেচের ব্যবস্থা করা, অধিক ফসল যাতে হয়, নৌপথ সচল করার ব্যবস্থা করা হবে। গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়নের জন্য আলোচনা হবে। ভারতের কারিগরি দল আসবে।
মমতাসহ সবার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও গঙ্গা চুক্তির নবায়নে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেওয়া চিঠির বিষয়ে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি লিখেছেন ওনার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে। এটা তাঁদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে আমার তো কিছু বলার নেই। এ ব্যাপারে আমার কোনো নাক গলানোর দরকারও নেই। আমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালো। একটা কথা বলতে পারি, ভারতের দলমত-নির্বিশেষে সবার সঙ্গে আমার একটা সুসম্পর্ক আছে।’
শেখ হাসিনা দেশ বিক্রি করে না
ভারতকে বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহারের সুবিধা দেওয়ার সমালোচনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনা এ দেশকে বিক্রি করে না। কারণ, আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি। যারা বিক্রির কথা বলে, তারা একাত্তর সালে পাকিস্তানের দালালি করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা দেশের মধ্যে ট্রানজিট দিলে ক্ষতিটা কী? রেল যেগুলো বন্ধ ছিল, তা আস্তে আস্তে খুলে দেওয়া হয়েছে; যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হচ্ছে। ওই অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হচ্ছে, তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমরা কি চারদিকে দরজা বন্ধ করে বসে থাকব? সেটা হয় না। ইউরোপের দিকে তাকান, সেখানে কোনো বর্ডারই নেই, কিছুই নেই। তাহলে একটা দেশ আরেকটা দেশের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে?’
লেবাননের প্রতিরোধ গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ওপর আক্রমণ ইসরাইলের জন্য আত্মহত্যার শামিল হবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির মেজর জেনারেল অব. আইজ্যাক ব্রিক।
ইসরাইলি ‘মারিভ’ পত্রিকায় লেখা তার সর্বশেষ কলামে এই মন্তব্য করেন তিনি।
আইজ্যাক ব্রিক বলেছেন, হিজবুল্লাহর ওপর হামলার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রস্তুত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে সম্মিলিত আত্মহত্যার শামিল।
ব্রিক হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ‘আত্মঘাতী’ মিশন সম্পর্কে লিখেছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গ্যালিলিতে হিজবুল্লাহ কী করেছে, সেদিকে তাকালে আমরা মনোযোগ দিলে দেখতে পাব যে, বসতিগুলো গুঁড়িয়ে যাচ্ছে, লোকজন সরে যাচ্ছে, হাজার হাজার একর জমি পুড়ে যাচ্ছে।
গাজায় যে চিত্র দেখা গেছে, সেটা আজ ইসরাইলের উত্তরে দেখা যাচ্ছে। আয়রন ডোম মাসের পর মাস ধরে ড্রোন, রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র থামাতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন ডজন ডজন ক্ষেপণাস্ত্র হজম করার জন্য প্রস্তুত হতে পারি না, যা পরবর্তী যুদ্ধে আমাদের করতে হবে।
ব্রিক ড্রোন মোকাবেলায় ইউক্রেনের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য কিয়েভ ইসরাইলের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছে, সেটাও তুলে ধরেন। তবে ব্রিক বলেন, এতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
ব্রিক বলেন, আমরা যখন একটি স্থানে সেনাবাহিনী রাখতে পারছি না, সেখানে এরপর ছয়টি স্থানে কীভাবে রাখব? আমরা কীভাবে হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র সামাল দিব? নিজেদের সুসংগঠিত হওয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে অবশ্যই যুদ্ধ থেকে বিরতি নিতে হবে। আমরা ২০ বছর ধরে যুদ্ধ করে যেতে পারি না। এই যুদ্ধের জন্য আমাদের সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত করা প্রয়োজন
তিনি বলেন, এখন আমাদের প্রয়োজন গাজার যুদ্ধ থেকে বিরতি নেওয়া। এই যুদ্ধ তার উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলেছে। আমরা যখন অত্যধিক সংখ্যক লোককে বলি দিয়েছি, তখন তারা গোপনে শক্তি বাড়িয়েছে, নিজেদের আবার গড়ে তুলছে। তারা সব যোদ্ধাকে ফিরিয়ে এনেছে। আমরা নগরীগুলো ধ্বংস করছি, আর দুনিয়া এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখছে। এটা আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
ইসরাইলি জেনারেল বলেন, সুড়ঙ্গগুলোর ভেতরে তারা পুরো পরিস্থিতি তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। পণবন্দিদের জন্য আমাদের সেখানে এক বা দুই বছরের জন্য যুদ্ধ বন্ধ করা দরকার। আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি থামি, তবে হিজবুল্লাহও থামবে। আর তখন আমরা আরও চার ডিভিশনের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারব।
তিনি বলেন, তারা খুবই সঠিক জায়গায় আছে… আমি বলতে পারি, ইসরাইলি বাহিনী পর্যাপ্ত শক্তিশালী না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্যসহকারে অপেক্ষা করা উচিত, যাতে আমরা তাদের ওপর প্রয়োজনীয় আঘাত হানতে পারি। আজ ইসরাইলি বাহিনী তো প্রয়োজনীয় আঘাত হানতে পারছে না, অন্যদিকে বাহিনী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তারা বুঝতে পারছে না যে আমরা এখন যদি লেবাননে যুদ্ধ শুরু করি, তবে তা আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেবে। এর মানে হবে এই যে উত্তরের বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘরে ফিরতে পারবে না।
তিনি উপসংহারে বলেন, যারা আজ যুদ্ধ চালাচ্ছে, তারা তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। তারা লাল বাতির মধ্যেও দৌড়াচ্ছে এবং প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। অথচ তারা সেনবাহিনীকে গড়তে পারছে না। তারা এখন বিমানের পেছনে ১৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে, অথচ সেগুলো আসবে পাঁচ বছর পর, যেগুলো কোনও প্রাসঙ্গিক হবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী দেশের ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ-আমানত অনুপাতের (আইডি রেশিও) সর্বোচ্চ সীমা ৯২ শতাংশ। এ ধারার ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানত পেলে তা থেকে সর্বোচ্চ ৯২ টাকা ঋণ (বিনিয়োগ) দিতে পারে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চে এসে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আইডি রেশিও ৯৯ শতাংশে ঠেকেছে। আইডি রেশিওর সর্বোচ্চ সীমা লঙ্ঘন করা যেকোনো ব্যাংকের জন্যই বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রায় দুই বছর ধরে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানত প্রবৃদ্ধি শ্লথ। কিছু ব্যাংকের আমানত না বেড়ে উল্টো কমেছে। বিপরীতে সবক’টি ব্যাংকেরই বিনিয়োগ বেড়েছে। এক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি অনাদায়ী বা খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির প্রভাবও রয়েছে। এ কারণেই ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর আইডি রেশিও এতটা নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশের ইসলামী ধারার ১০টি ব্যাংকে জমাকৃত আমানতের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। তিন মাস আগে অর্থাৎ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ ব্যাংকগুলোয় ৪ লাখ ৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার আমানত জমা ছিল। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে আমানত স্থিতি ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা কমে গেছে।
বিপরীত চিত্র দেখা গেছে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ স্থিতির ক্ষেত্রে। গত ডিসেম্বর শেষে এ ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ স্থিতি ছিল ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। তিন মাস পর চলতি বছরের মার্চে এসে তা ৪ লাখ ২৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকায় ঠেকেছে। সে হিসাবে এ তিন মাসে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বেড়েছে ১০ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।
বিনিয়োগ ও আমানতের বিপরীতমুখী এ চিত্রই ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর আইডি রেশিও উসকে দিয়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে এ ব্যাংকগুলোর আইডি রেশিও ছিল ৯৬ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চে এসে তা ৯৯ শতাংশে ঠেকেছে। ২০২৩ সালের মার্চেও শরিয়াহভিত্তিক এ ব্যাংকগুলোর আইডি রেশিও ৯৪ শতাংশ ছিল।
আইডি রেশিও অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছায় ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত ডিসেম্বরে এ ব্যাংকগুলোর হাতে বিনিয়োগযোগ্য তারল্য ছিল ৫ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চে অতিরিক্ত তারল্য নেমে এসেছে মাত্র ৬০৫ কোটি টাকায়। তবে কয়েকটি ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি খুবই নাজুক বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমানত রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিতে। তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকটির আমানত স্থিতি না বেড়ে উল্টো কমেছে। গত ডিসেম্বর শেষে ইসলামী ব্যাংকের আমানত স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে আমানত স্থিতি ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। বিপরীতে বেড়েছে বিনিয়োগ স্থিতি। গত ডিসেম্বর শেষে দেশের সবচেয়ে বড় এ ব্যাংকের বিনিয়োগ স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। মার্চে তা বেড়ে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬১৪ কোটি টাকায় ঠেকেছে। তারল্য সংকটে থাকা ইসলামী ব্যাংক এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি দেশের সাধারণ ধারার ব্যাংকগুলো থেকেও অর্থ ধার করে চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক। অর্থনীতির স্বার্থে আমাদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। আমরা বিনিয়োগ পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নানা ধরনের নেতিবাচক প্রচারণার কারণে আমাদের আমানতপ্রবাহ কিছুটা কম। তবে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আশা করছি, জুলাইয়ের মধ্যে আমানতপ্রবাহ বাড়তে শুরু করবে। আইডি রেশিও নির্ধারিত সীমার নিচে নেমে আসবে।’
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকেরও আমানত কমে গেছে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানত স্থিতি ছিল ৪৫ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চে তা ৪৪ হাজার ৮০৯ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। বিপরীতে মার্চে বিনিয়োগ স্থিতি ৫৮ হাজার ১১ কোটি টাকায় ঠেকেছে। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির বিনিয়োগ স্থিতি ছিল ৫৬ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা।
একই পরিস্থিতি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানত স্থিতি ছিল ৩৫ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চে তা ৩৩ হাজার ৬১৯ কোটি টাকায় নেমে গেছে। আমানত কমলেও ব্যাংকটির বিনিয়োগ স্থিতি ৩৫ হাজার ৯৯৯ কোটি থেকে বেড়ে ৩৬ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নেতিবাচক প্রচারের কারণে দেশে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো কিছুটা সমস্যার মধ্যে পড়েছিল। আতঙ্কগ্রস্ত গ্রাহক আবারো ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছেন। মানুষ হিসেবে আমাদের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা সব মানবগোষ্ঠীর জন্যই কল্যাণকর।’
জাফর আলম আরো বলেন, ‘বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিস্থিতি এখন বেশ ভালো। রেমিট্যান্স প্রবাহের দিক থেকে আমাদের ব্যাংক এখন শীর্ষ পাঁচের মধ্যে রয়েছে। গত দুই বছরে ব্যাংকের খেলাপি ঋণও কমেছে। ২০২১ সাল শেষে আমাদের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত বছর শেষে তা ৪ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। চলতি বছর খেলাপি ঋণ আদায় পরিস্থিতি বেশ ভালো। প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত গ্রাহকদের কাছ থেকেও টাকা আদায়ে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি।’
বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের সূচনা হয়েছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির হাত ধরে। ১৯৮৩ সালে কার্যক্রম শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশে গড়ে উঠেছে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ধারার ইসলামী ব্যাংক। এর মধ্যে পাঁচটিই প্রচলিত ধারা থেকে ইসলামী ধারায় রূপান্তর হয়েছে। প্রচলিত ধারার ১১টি ব্যাংক চালু করেছে ইসলামী ব্যাংকিং শাখা। আরো ১৪টি প্রচলিত ধারার ব্যাংক উইন্ডো চালুর মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত তিন দশকে প্রচলিত ধারার ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ইসলামী ধারার ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু প্রথমবারের মতো গত দুই বছরে এ ধারার ব্যাংকগুলো পিছিয়ে পড়েছে। এ সময়ে প্রচলিত ধারার ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে অনেক কম।
ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও এ ধারার ব্যাংকগুলো হলো সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।
দেশের ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশকিছু নীতি ছাড় পায়। যেমন গ্রাহকদের জমাকৃত অর্থ সুরক্ষার জন্য প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোকে আমানতের ১৩ শতাংশ অর্থ স্ট্যাটিউটরি লিকুইডিটি রেশিও বা বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) হিসেবে রাখতে হয়। যদিও ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এসএলআর রাখতে হয় মাত্র ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আবার প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের আমানতের সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। কিন্তু ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে আমানতের ৯২ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বা বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। বর্ধিত এ সীমা লঙ্ঘন করে এ ধারার ব্যাংকগুলো এখন আমানতের ৯৯ শতাংশই গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে দিয়েছে।
Leave a Reply