অনুবাদ : ফওজুল করিম
প্রথমে যা চোখে পড়ে এবং ব্যাপারটি লক্ষণীয় যে নীল সম্পর্কে রিপোর্ট লেখার জন্য ফরাসী কর্তৃপক্ষ নির্বাচন করলেন পিয়ের-পল দারাককে এবং তাকে আবার লিখতে হবে বৃটিশ বঙ্গ সম্পর্কে। ফ্রান্স অধিকৃত ভারতে মোটামুটি সফল একটি নীল শিল্প বিরাজমান থাকা সত্ত্বেও ফরাসী পশ্চিম আফ্রিকায় একেবারে নতুন নীল শিল্প গড়ে তুলতে চাওয়ারই বা কারণ কি? ফরাসী অধিকৃত ভারতে নীল শিল্প নয় কেন?
দক্ষিণ এশিয়া নিয়ন্ত্রণের যুদ্ধে পরাজিত হবার পর ফ্রান্স কোনো রকমে টিকে ছিল ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পন্ডিচেরিতে। এখানে নীল চাষ হত মোটামুটিভাবে: পন্ডিচেরিতে ১৮২৪ সালে নীলের ক্ষেত ছিল ১৯টি। পন্ডিচেরির কোনো প্রশাসককে রিপোর্ট প্রণয়নে নিয়োগ করা হল না কেন? আমরা বঙ্গদেশে প্রণীত রিপোর্টটির ভিত্তিতে ফরাসী ভারতে নীলচাষের উন্নয়ন না করে ফরাসী আফ্রিকার উন্নত নীলচাষ করতে গেল কেন?
এর কারণ দু’টি। ফরাসী কর্তৃপক্ষের ধারণা পন্ডিচেরির নীল শিল্প একেবারে অকেজো না হলেও বাংলার প্রতিযোগিতার সামনে টিকে থাকতে হলে তার প্রয়োজন ছিল সংস্কার ও উন্নতির। কথাটা অন্যভাবে বললে পন্ডিচেরীর উদাহরণ অনুসরণযোগ্য নয়। তা ছাড়া ফরাসী অধিকৃত ভারতের নীল শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ কোনো পরিবর্তনকে সহজে মেনে নিতে পারে না। প্রচলিত উৎপাদন পদ্ধতিতে কোনো রকম পরিবর্তন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তার চেয়ে অনেক যুক্তিসঙ্গত হবে একেবারে নতুন করে বাংলার উদাহরণ গ্রহণ করা। তারা মনে করলেন একেবারে হালের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগুলো কাজে লাগিয়ে নীল শিল্পকে নতুন একটা ভিত্তিভূমির উপর দাঁড় করাতে হবে।
পন্ডিচেরিতে নীল শিল্পের উন্নতির প্রধান অন্তরায় ছিল নীলকররা। সেখানে তাজা পাতা ব্যবহারের চাইতে তারা শুকনো পাতা ব্যবহার করতেন। অথচ বঙ্গদেশে নীল উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হত তাজা পাতা। পন্ডিচেরির নীলকররা পাতা পরিবর্তনের অনিচ্ছুক ছিলেন। তা ছাড়া পন্ডিচেরিতে নীলকররা সবাই ভারতীয়, বঙ্গদেশের একেবারে বিপরীত।
Leave a Reply