টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪-এর প্রথম সেমিফাইনালে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগোর তারোউবা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানকে এক রকম উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মত কোন বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার পুরুষ দল।
তারোউবার কঠিন এক উইকেটে আফগানিস্তান শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৫৬ রানে অলআউট হয়ে যায়। জবাবে নয় ওভারের মধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকা ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার নারী ক্রিকেট দল নারীদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছিল।
আফগানিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকা এমন এক উইকেটে সেমিফাইনাল খেললো, যেখানে ম্যাচের শুরু থেকে অসম বাউন্স ছিল, কোনও বল অনেক উঠে এসেছে, কোনও বল একদম নিচু হয়ে গেছে।
ম্যাচ শেষে আফগানিস্তানের অধিনায়ক রাশিদ খান বলেন, “টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যদি বলা হতো আমরা সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলবো, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। আমরা খুশি মনে মেনে নিতাম।”
রাশিদ বারবার ব্যাটিং ব্যর্থতার কথা বলছিলেন। তিনি বলেন আবার যখন এই ফরম্যাটে আফগানিস্তান বিশ্বকাপ খেলবে, আরও আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে হবে, মিডল অর্ডারে উন্নতি প্রয়োজন।
এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তান নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারিয়েছে। তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে চাপের মুখে ম্যাচ বের করে নিয়ছে।
দক্ষতার সাথে এবারে স্নায়ুচাপও ভালো সামলেছেন আফগান ক্রিকেটাররা।
ওদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মারক্রাম টসে হেরে নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছেন, কারণ এই উইকেটে তারাও ব্যাট করার সিদ্ধান্তই নিতেন।
(রশিদ খানের গুজরাট টাইটান্স সতীর্থ ডেভিড মিলার)
মারক্রাম বলেন, “আমরা এর আগে ফাইনাল খেলিনি কখনো, কিন্তু আমাদের মনে বিশ্বাস আছে”।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই এইডেন মারক্রামের অধিনায়কত্বেই অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল।
আফগানিস্তান ব্যাটিং লাইন আপের মূল চালিকা শক্তি ওপেনাররা। কিন্তু সেমিফাইনালে তাদের ওপেনারদের ব্যর্থতার কারণেই মূলত খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে আফগানদের।
দলটির ওপেনার দুইজন নিজেদের জুটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১১৫ রানের মধ্যে ৫৯ রান তুলেছিলেন।
আবার, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আফগানিস্তান তোলে ১৪৮ রান, ওপেনিং জুটিতেই এসেছিল ১১৮ রান।
আর সেমিফাইনালে এসে আফগানিস্তানের দুই ওপেনারের মধ্যে রহমানুল্লাহ গুরবাজ করেছেন শূন্য,আর ইব্রাহিম জাদরান করেছেন দুই রান।
এছাড়া প্রথম চার ওভারের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদা এবং মার্কো ইয়ানসেন আফগানিস্তানের ২০ রানের মাথায় চার উইকেট নিয়ে নেন।
(কাবুল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বড় পর্দায় খেলা দেখছেন আফগানিস্তানের ক্রিকেট সমর্থকরা)
আফগানিস্তানের ব্যাটিং ইনিংসের চতুর্থ ওভারে রাবাদা প্রথম বলে ইব্রাহিম জাদরানকে ফেরান, খানিকটা শর্ট লেন্থের বল উইকেটে পিচ করে আরও নিচু হয়ে এসে মিডল স্ট্যাম্পে লাগলো।
এই ওভারেই চতুর্থ বলে মোহাম্মদ নবী ক্লিন বোল্ড হন।
এই ডাবল উইকেট মেইডেনই আফগানিস্তানের জন্য বড় আঘাত নিয়ে আসে।
আর এ বিপর্যয় থেকে আফগানিস্তানের ব্যাটিং আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি, ৫৬ রানে গুটিয়ে যায় দলটির ইনিংস।
একমাত্র আজমতুল্লাহ ওমরজাই ১০ রান করেন, আর কেউই দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পারেননি।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইয়ানসেন এবং আনরিখ নরকিয়া তিনটি করে, রাবাদা এবং তাবরাইজ শামসি দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।
যে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের নকআউট পর্ব এলেই অদ্ভুতভাবে বিপর্যস্ত হওয়া শুরু করে সব সময়, সেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগোতে দেখা যায়নি।
(ফাইনালে জিতে চ্যাম্পিয়ন হলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে অপরাজিত থাকবে দলটি।)
সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলার ৩৩ বছরে এসে দক্ষিণ আফ্রিকা কোনও বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলো। এর আগে ফাইনালের ঠিক এক ধাপ পেছনে থেকে বাদ পড়েছিল সাতবার।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭, ২০১৫ এবং ২০২৩ সালে,আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে সেমিফাইনালে হেরে বিদায় নিয়েছিল প্রোটিয়ারা।
এবারের টুর্নামেন্টে দক্ষিণ আফ্রিকা টানা আট ম্যাচ জিতেছে। ফাইনালে জিতে চ্যাম্পিয়ন হলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে অপরাজিত থাকবে দলটি।
দক্ষিণ আফ্রিকা একের পর এক রোমাঞ্চকর ম্যাচে জয় পেয়েছে এবার।
আগে যেসব ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা কোনও না কোনও উপায়ে হেরে যেত, এবার স্নায়ুচাপ ধরে রেখে সেসব ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে মারক্রামের দল।
যেমন নেপালের বিপক্ষে দুই রানের জয়, বাংলাদেশের বিপক্ষে চার রানের জয়, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১২ রানে চার উইকেট হারিয়েও জয়।
এসব অর্জন মিলেই আজ দক্ষিণ আফ্রিকা ফাইনালের মঞ্চে।
এর আগে নারীদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১৮ রানে হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার নারী ক্রিকেট দল।
এর আগে ১৯৯৮ সালে ঢাকায় নকআউট ট্রফি নামে একটি শিরোপা জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, সেটাই দলটির শীর্ষ পর্যায়ে একমাত্র শিরোপা।
(৫৬ রানে অলআউট হওয়ার পর আফগানিস্তানের কোচ ও অধিনায়ক)
এদিকে, ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন আফগানিস্তানের প্রতি অন্যায় এবং অবিচার হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
বাংলাদেশের বিপক্ষে উত্তেজনাপূর্ণ এক ম্যাচে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করার পর, আফগানিস্তান ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগোতে মাঠে অনুশীলন করার সময় ও সুযোগ পায়নি।
ভন এক্স প্ল্যাটফর্মে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “সোমবার রাতে ম্যাচ খেলার পরে আফগানিস্তানের ত্রিনিদাদের ফ্লাইটেই চার ঘণ্টা দেরি হয়। তাই আফগানিস্তান এই মাঠে কোনও প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ পায়নি।”
একে ক্রিকেটারদের প্রতি অসম্মান দেখানো বলে দাবি করেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক।
ভন মনে করেন, ভারতকে বাড়তি সুবিধা দিতেই আফগানিস্তানের সাথে এমনটা করা হয়েছে, এই সেমিফাইনালটা গায়ানায় হওয়া দরকার ছিল।
ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৪শে জুলাই সুপার এইট পর্বের শেষ ম্যাচ খেলেছে, বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ২৭শে জুলাই রাতে প্রায় তিন দিন পরে সেমিফাইনাল খেলছে।
আফগানিস্তান সময় পেয়েছে মূলত এক দিন।
আর এখানেই আপত্তি ভনের।
বিবিসি নিউজ বাংলা
Leave a Reply