বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন

৮৩’তে পা রাখছেন জীবন্ত কিংবদন্তী ফেরদৌসী রহমান

  • Update Time : শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪, ১২.২৪ এএম

সারাক্ষণ প্রতিবেদক

বাংলাদেশের গানের ইতিহাস যতোদিন থাকবে, ততোদিনই পরম শ্রদ্ধার সাথে যে শিল্পীর নাম মনে রবে তিনি আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনর গর্ব জীবন্ত কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান।

কিংবদন্তী ফেরদৌসী রহমানের হাত ধরেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে যাত্রা শুরু হয় গান শেখানোর অনুষ্ঠান ‘এসো গান শিখি’। এখন শরীর কিছুটা খারাপ বিধায় আপাতত ‘এসো গান শিখি’তে গান শেখাচ্ছেন না তিনি। তবে এখনো তিনি এই অনুষ্ঠান প্রচার হলে প্রবল আগ্রহ নিয়ে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন তিনি। দেখতে দেখতে জীবন চলার পথ ফেরদৌসী রহমান আজ ৮২’তে পা রাখছেন।

ফেরদৌসী রহমান বলেন,‘ দেখতে দেখতে জীবনের এতোটা বছর পেরিয়ে আজ ৮৩’তে পা রাখছি। এখন আসলে খুউব বেশি প্রয়োজন না হলে, জরুরী কাজ না থাকলে ঘরের বাইরে বের হইনা। ঘরে বসে যাদের গান ভালোলাগে মাঝে মাঝে তাদের গান শুনি। যেমন শাহনাজ রহমতুল্লাহ, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, কনকচাঁপা, শাকিলা জাফর, আলম আরা মিনু-এদের সবার কন্ঠে আমার গান শুনতে ভালোলাগে। শাহনাজ, রুনা, সাবিনার’তো মাইলফলক কিছু গান আছে, যার জন্য শ্রোতা দর্শক মনে রাখবে তাদের আজীবন।

পরবর্তীতে বাপ্পা মজুমদার, ন্যান্সি, কনা, লিজা, অপু আমান, ইউসুফ আহমেদ খানও ভালো করছে। তারপরও সবশেষে আমার একটা কিন্তু থেকে যায়। এখন যারা গান করছে তারা গানের গ্রামার জেনে গানের চর্চাটা করছেনা। বাকী সব ঠিকই করছে। গান আসলে সাধনার বিষয়। এর বিকল্প বা শর্টকাট কোন রাস্তা নেই। যে কারণে আমি কিন্তু কিছুদিন আগ পর্যন্তও বিটিভির এসো গান শিখি অনুষ্ঠানটি করেছি। যাতে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত আমি গানে আমার জ্ঞান টুকু দিয়ে যেতে পারি। যাইহোক আমি সবার দোয়া প্রার্থী।’

ফেরদৌসী রহমান জানান এরইমধ্যে তার ছেলে রুবাইয়াত দেশের বাইরে থেকে এসেছেন। বাবা মা’কে সময় দিচ্ছেন তিনি। একজন ফেরদৌসী রহমান, বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনের পথিকৃৎ। একাধারে একজন পল্লীগীতি, রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত ও প্লেব্যাক সিঙ্গার। সঙ্গীত জীবনের সাফল্যের ধারাবাহিকতা সেই যে ছোট্টবেলায় শুরু হয়েছিলো তা এখনো বহমান। জীবন চলার পথে গানে গানে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা, সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’সহ দেশ বিদেশের নানান পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন আমাদের দেশের সঙ্গীতাঙ্গনের এই গর্বিত ব্যক্তিত্ব।

সবার প্রিয় ফেরদৌসী রহমান জীবনের প্রথম রেডিও’র ‘খেলাঘর’ অনুষ্ঠানে গান করেন ১৯৪৮ সালে। ‘আসিয়া’ সিনেমাতে তারই বাবা পল্লী সম্রাট আব্বাসউদ্দিনের সুরে আব্দুল করিমের লেখা ‘ও মোর কালারে’ গানটি গান। অবশ্য তার আগেই ‘এদেশ তোমার আমার’ সিনেমা মুক্তির মধ্যদিয়ে একজন প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে তাঁর অভিষেক হয়।

ফেরদৌসী রহমানের জন্ম কোচবিহারে ১৯৪১ সালের ২৮ জুন। ফেরদৌসী রহমান বাংলাবাজার স্কুল থেকে এসএসসি, ইডেন কলেজ থেকে এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স, মাস্টার্স এবং পরবর্তীতে ইউনেস্কো ফেলোশিপ নিয়ে লণ্ডনের ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিক থেকে স্টাফ নোটেসন কোর্স সম্পন্ন করেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশেনর ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খালামনি হিসেবেও এখনো দারুণ জনপ্রিয় তিনি। ফেরদৌসী রহমান হারুনর রশীদ (হারুনুর না) পরিচালিত ‘মেঘের অনেক রং’ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তবে প্রয়াত রবিন ঘোষের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি ‘রাজধানীর বুকে’ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনার কাজ করেন প্রথম। প্রায় ২৬০টি সিনেমাতে গান গেয়েছেন তিনি।

তিনটি লং প্লে, ৫০০টি ডিস্ক রেকর্ড, প্রায় বিশটি ক্যাসেট’সহ পাঁচ হাজারেরও বেশি গান তার রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ১৯৬৬ সালের ২৬ অক্টোবর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রেজাউর রহমানের সঙ্গে ফেরদৌসী রহমানের বিয়ে হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024