শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১০৫)

  • Update Time : শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

মীরজাফর সিংহাসনে আরোহণ করিয়া প্রথমে হীরাঝিলের প্রাসা- দেই বাস করিয়াছিলেন। কিন্তু তথায় তিনি অধিক কাল বাস করেন নাই; কিছুকাল পরে, ভাগীরথীর পূর্বতীরে কেল্লামধ্যে আলিবদ্দীর প্রাসাদে আসিয়া বাস করেন। নবাব হওয়ার পূর্ব্বে জাফরাগঞ্জের প্রাসাদ তাঁহার আবাস-স্থান ছিল, কিন্তু মসনদে উপবেশন করার পর, স্বীয় জ্যেষ্ঠপুত্র মীরণকে জাফরাগঞ্জের প্রাসাদ দান করা হয়। মীরণের বংশধরেরা অদ্যাপি তথায় বাস করিতেছেন। মীরণের বংশধরেরা জাফরাগঞ্জের প্রাসাদ অধিকার করায়, নূতন নবাব আর তথায় গমন করেন নাই। তিনি মুর্শিদাবাদ-কেল্লার মধ্যস্থিত আলিবন্দীর প্রাসাদে আসিয়াই বাস করেন।

গবর্ণর ভান্সিটার্ট মীরজাফরকে পদচ্যুত করিয়া, মীর কাসেমকে মসনদ প্রদান করেন। ভালিটার্ট মীরজাফরকে হীরাঝিলের প্রাসাদে বাস’ করিবার জন্য অনুরোধ করিয়াছিলেন। । কিন্তু মীরজাফর তাহাতে সম্মত না হইয়া, স্বীয় প্রিয়তমা ভার্য্যা মুণি বেগমের সহিত কলিকাতাক্ব আসিয়া চিতপুরে বাস করেন।

মীরকাসেমের সহিত যখন ইংরেজদিগের বিবাদ আরম্ভ হয়, সেই সময়ে। মীর কাসেম জগৎশেঠদিগকে ইংরেজদিগের পক্ষপাতী জানিয়া, তাঁহাদিগকে বন্দী করিয়া মুঙ্গেরে পাঠাইবার জন্য বীরভূমের ফৌজদার মহম্মদ তকী- খাঁকে আদেশ দেন। মহম্মদ তকী খাঁ শেঠদিগকে প্রথমতঃ হীরাঝিলের প্রাসাদে বন্দী করিয়া রাখেন। পরে মুঙ্গের হইতে নবাবের প্রেরিত লোক উপস্থিত হইলে, তাহাদের হস্তে তাঁহাদিগকে সমর্পণ করেন।

ইহার পর হইতে আর হীরাঝিলসম্বন্ধে কোন ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ দেখা যায় না। এক্ষণে সে প্রাসাদ কালগর্ভে অন্তর্হিত। মীর- জাফরের সময় হইতেই তাহা ভগ্নদশায় পতিত হয়। ইহার উপকরণ লইয়া কেল্লার মধ্যস্থিত অনেক প্রাসাদ ও অন্যান্য লোকের অনেক অট্টা- লিকাদি নির্মিত হইয়াছিল। জাফরাগঞ্জের পর পারে অ্যাপি তাহার কিছু কিছু চিহ্ন রহিয়াছে। হীরাঝিল ভাগীরথীর সহিত মিশিয়া গিয়াছে; কেবল তাহার পোস্তার কিয়দংশ ও একটি পয়ঃপ্রণালীর নিদর্শন ভাগীরথীর জলাপসরণে এখনও দেখিতে পাওয়া যায়।

সিরাজ উদ্দৌলার প্রাসাদকে সাধারণে লালকুঠী বলিত। সে প্রাসাদের অধি- কাংশই বিলুপ্ত; কেবল এন্তাজ মহাল-নামক চত্বরের ভিত্তির কিঞ্চিৎ ভগ্নাবশেষ আজিও বর্তমান আছে। পশ্চিম পার্শ্বের ভিত্তিটি সম্পূর্ণ আছে। পূর্ব্ব পার্শ্বের সমস্ত ভিত্তি ও উত্তর দক্ষিণের কিয়দংশ এক্ষণে ভাগীরথী- গর্ভস্থ। এই ভিত্তি উত্তর-দক্ষিণে দৈর্ঘ্যে প্রায় ১২৫ হস্ত হইবে, পূর্ব্ব পশ্চিমেও সম্ভবতঃ তাহাই ছিল; কিন্তু ভাগীরথীস্রোতে ভাঙ্গিয়া যাওয়ায়, এক্ষণে কেবল উত্তর দক্ষিণে, দুই পার্শ্বেই প্রায় ৭৫ হস্ত মাত্র অবশিষ্ট আছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024