সারাক্ষণ ডেস্ক
ধারাবাহিকভাবে কমছে গ্যাসের উৎপাদন। একসময় দিনে আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস উৎপাদন করা হলেও এখন তা ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। এতে সরবরাহ–সংকট বাড়ছে। বড় গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন বাড়ানো না গেলে সরবরাহ আরও কমতে পারে।
যদিও কূপ খনন করে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে সরকার। এতে গ্যাসের মজুত কিছুটা বাড়ছে।
চলমান গ্যাস–সংকটের এমন পরিস্থিতিতেও দেশের সবচেয়ে বেশি মজুত থাকা তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে কমছে উৎপাদন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি বিভাগের অবহেলা ও অদক্ষতা এর জন্য দায়ী। কারিগরি পরিকল্পনা ও দক্ষ প্রযুক্তির অভাবে মজুত থাকার পরও উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। অথচ কম মজুত থাকা বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে কয়েক গুণ উৎপাদন বাড়িয়ে তা শেষ করা হয়েছে।
২০১৮–১৯ অর্থবছরে গড়ে গ্যাস উৎপাদন ছিল দিনে ২ হাজার ৬৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট। পরের বছর এটি কমে হয় ২ হাজার ৪২৩ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০২২–২৩ অর্থবছরে দিনে উৎপাদন হয় গড়ে ২ হাজার ২০১ মিলিয়ন ঘনফুট।
ঢাকাসহ দেশের ২০ জেলার ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়সহ বজ্রবৃষ্টির আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস। আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপিতে বলা হয়, রাজশাহী, দিনাজপুর, পাবনা, রংপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, যশোর, কুষ্টিয়া, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট জেলার ওপর ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
তাই এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিসের অপর এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের সব বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
গাজা থেকে ইসরাইলের বিভিন্ন এলাকায় মুহুর্মুহু রকেট হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসলামিক জিহাদ। অনেক এলাকা থেকে পালিয়েছে বাসিন্দারা।
সোমবার গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলে দফায় দফায় ওই রকেট হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর জানিয়েছে, সোমবার গাজা থেকে ইসরাইলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে প্রায় ২০টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়, যা গত সাত মাসের মধ্য গাজা থেকে চালানো সবচেয়ে বড় হামলা। তবে এ হামলায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখা বলেছে, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শত্রুর অপরাধের প্রতিক্রিয়ায় গাজা সীমান্ত লাগোয়া ইসরাইলি কয়েকটি সম্প্রদায়ের দিকে রকেট নিক্ষেপ করেছে তাদের যোদ্ধারা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইসরাইলি ফোন নম্বরগুলো থেকে তারা বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ সংক্রান্ত কিছু ক্ষুদেবার্তা পেয়েছেন।
কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ হতে পারে ইসরাইলি বাহিনী ওই এলাকায় ফিরে আসবে। যদিও কয়েক সপ্তাহ আগে এলাকাটি হামাসের হামলার শিকার হয়।
অন্যদিকে, সোমবার ইসরাইলি অধিকৃত পশ্চিম তীরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সোমবার তুলকারম শহরে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানে এক নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছেন। একই এলাকায় একদিন আগে ইসরাইলি হামলায় ইসলামিক জিহাদের এক সদস্য নিহত হন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গাজার কিছু এলাকা থেকে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের সদস্যরা ইসরাইলি বাহিনীর ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে। দখলদার ইসরাইলি সেনাবাহিনী কয়েক মাস আগেই সেসব এলাকা ত্যাগ করেছে।
দেশে বিদ্যুৎ খাতে সক্ষমতা বাড়াতে বেসরকারিভাবে নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা করেছিল আনলিমা মেঘনাঘাট পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেড। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ২৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ডে (বিডা) নিবন্ধন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। এটি ছিল বিডায় ২০২১-২২ অর্থবছরে নিবন্ধিত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগের ঘোষণা। ওই ঘোষণার পর সময় পেরিয়েছে তিন বছর। এখনো ভূমি উন্নয়নসংক্রান্ত কাজ ছাড়া প্রকল্পের আর কোনো কাজ সেভাবে এগিয়ে নিতে পারেনি আনলিমা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানোর জন্য পর্যাপ্ত গ্যাসের সংস্থান না থাকা, যন্ত্রপাতি আমদানিতে ডলারের সংকট এবং বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের বিপরীতে উচ্চ সুদের কারণে প্রকল্পটি নিয়ে ‘ধীরে চলো নীতি’তে চলছে কোম্পানিটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনলিমার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সোহাগ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক নানা সংকটের কারণে কাজের গতি এখন কম। এ অবস্থায় আমরা ভাবছি, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আগে গ্যাস প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় চুক্তি হলে তারপর যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলার উদ্যোগ নেয়া হবে। এ কারণে প্রকল্পের গতি এখন ধীর।’
দেশে গত তিন অর্থবছরে (২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত) নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধনের পরিমাণ কমেছে ব্যাপক মাত্রায়। এমনকি এ সময় শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকেও নতুন বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি তেমন একটা আসেনি। এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের ভাষ্য হলো ডলার সংকট, উচ্চ সুদহার ও বিনিয়োগ পরিবেশে বিদ্যমান অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা তাদের ঘোষিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন নতুন বিনিয়োগ নিয়েও তারা এগিয়ে আসতে পারছেন না।
বিডার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যক্তি খাতের স্থানীয় বিভিন্ন শিল্পে মোট ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে। এর অধিকাংশই এসেছে ২০২১-২২ অর্থবছরে, যার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে ৮৩ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে বিনিয়োগ নিবন্ধিত হয়েছে ৩৮ হাজার ৮২২ কোটি টাকার। এ অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিনিয়োগ কমেছে ৩৩ শতাংশের বেশি। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আট মাসে বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে আগের অর্থবছরের মোট নিবন্ধিত প্রস্তাবের অর্ধেকেরও কম।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের তারল্য সংকট ও উচ্চ সুদহার বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থায়ন প্রক্রিয়াকে চাপে ফেলেছে। আবার ডলার সংকটে শিল্প খাতে মেশিনারিজ ও কাঁচামাল আমদানিতে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রারও সংস্থান করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বিদেশীর মতো স্থানীয় বিনিয়োগ আকর্ষণও এখন দিন দিন আরো কঠিন হয়ে পড়ছে।
বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর হলে দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়বে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ী নেতারা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিনিয়োগ পরিবেশ আরো বিনিয়োগবান্ধব করতে হবে। এজন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে। আর সুদহারের প্রতি নজর দিতে হবে।’
২০২০ সালের এপ্রিলে দেশে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করে দেয়া হয় ৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের শুরুতে সর্বোচ্চ সুদের এ সীমা তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তার পর থেকে প্রতি মাসেই সুদহার বেড়েছে। এপ্রিলে এসে ঋণের সুদহার ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর সুদহার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করে ফেলে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের অনেক ব্যাংকে ঋণের সুদহার এখন ১৬-১৭ শতাংশ।
এছাড়া দুর্নীতি, ঘুস ও জ্বালানি সংকটের মতো বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলোও দেশে বিনিয়োগ পরিবেশকে আরো সংকটপূর্ণ করে তুলছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘১০ বছর ধরে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২৩-২৪ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এখন এক বছরের মধ্যে তা ২৭ শতাংশের ওপরে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। কারণ এখন সরকার ব্যাংক থেকে সব টাকা নিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি-ঘুস বাড়ছে। বড় বড় প্রকল্পের অবকাঠামোয় বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এমন নেতিবাচক পরিস্থিতিতে কীভাবে বিনিয়োগ বাড়বে?’
বিডায় ২০২১-২২ অর্থবছরে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ নিবন্ধনটি ছিল বসুন্ধরা গ্রুপের। ওই ঘোষণা অনুযায়ী, বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেডে গ্রুপটির ৭৫ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা। গত তিন অর্থবছরে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের ঘোষণা। এছাড়া গ্রুপটি বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স লিমিটেডে ১২ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল। দুটি প্রকল্পে বসুন্ধরা গ্রুপের ৮৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ নিবন্ধিত রয়েছে। প্রকল্পের অগ্রগতি ও উৎপাদন শুরুর সম্ভাব্য সময় নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
দেশে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ১০ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল সামিট গ্রুপ। দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ সক্ষমতার এ টার্মিনালের বিনিয়োগ প্রস্তাব বিডায় নিবন্ধিত হয় ২০২১-২২ অর্থবছরে। টার্মিনালটি নির্মাণ হওয়ার কথা কক্সবাজারের মহেশখালীতে। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে সামিটের চুক্তিও হয়েছে। এখনো প্রকল্পটির মাঠ পর্যায়ে কোনো কাজ শুরু হয়নি বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে।
ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের আওতায় ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল ল্যাবএইড গ্রুপ। এ হাসপাতাল নির্মাণে কোম্পানিটি মোট ৭৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ঢাকায় একটি ক্যান্সার হাসপাতালে ৫০০ কোটি টাকা এবং দেশের ছয়টি বিভাগে ক্যান্সার সেন্টার স্থাপনে বাকি অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা ছিল গ্রুপটির।
ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য ভবন নির্মাণে ২০০ কোটি টাকা এবং যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ১৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। হাসপাতালের জন্য আরো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির প্রয়োজন থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি এখন ডলার সংকট ও এলসি জটিলতায় বাকি ১২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারছে না। ব্যাংক থেকে টাকা পেতে জটিলতা তৈরি হওয়ায় ঢাকার বাইরে বিভাগীয় সেন্টার স্থাপন করা যাবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে ল্যাবএইডের।
জানতে চাইলে ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য যখন বিনিয়োগ করেছি, তখন দেশে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান ছিল ৮৫ টাকা। ব্যাংকের সুদহারও ছিল এখনকার চেয়ে অনেক কম। সরকার এখন ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে বেশি। তাই ব্যাংক আমাদের অর্থ দিতে পারছে না। ক্যান্সার হাসপাতালে বাকি ১২০ কোটি টাকা বিনিয়োগে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। বিভাগীয় সেন্টারগুলো হয়তো এখন করা যাবে না। কারণ থেরাপি দেয়ার জন্য একটি লিনেট মেশিন আনতে ৩০-৪০ কোটি টাকা প্রয়োজন হয়। কিন্তু ব্যাংক এলসি করতে পারছে না।’
বিডার আওতায় বিনিয়োগের শীর্ষ তালিকায় ২০২১-২২ অর্থবছরে তৃতীয় শীর্ষ প্রস্তাব এসেছিল ঢাকা ফ্লাই এয়ারলাইনস লিমিটেডের। তাদের বিনিয়োগ ঘোষণা ছিল ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। এছাড়া শীর্ষ তালিকার অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে উনবা পেপার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড ৯ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা, বেস্ট সার্ভিসেস লিমিটেড ৯ হাজার ১৭৩ কোটি, হেলথ কেয়ার ফর্মুলেশন লিমিটেড ৮ হাজার ৪১৩ কোটি ও ইকরাম ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড ৮ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছিল। এ তালিকার আরেক প্রতিষ্ঠান রিমার্ক এইচবি লিমিটেডের বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল ১১ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকার। যদিও প্রতিষ্ঠানটি এ বিনিয়োগ করতে পারেনি।
দিল্লি না বেইজিং- কার প্রতি ঝুঁকছে ঢাকা? পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি তথা বিশ্ব বাস্তবতায় এশিয়ার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও চীনের মধ্যে কাকে বেশি কাছে টানছে উভয়ের বন্ধু বাংলাদেশ বা কার প্রতি বেশি আকর্ষণ বোধ করছে? সেই প্রশ্ন এখন সর্বত্র। এ নিয়ে খোলামেলাই কথা বলছেন পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত সাবেক মন্ত্রী, সচিবরা। তবে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা পেশাদার কূটনীতিকরা এ নিয়ে কথা বলতে বরাবরই সতর্ক। তারা প্রায়শই বাংলাদেশের ‘ব্যালেন্স ফরেন পলিসি’র বয়ান হাজির করার চেষ্টা করেন। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন। পেশাদাররা এমনটাও বলেন যে, উদ্ভূত পরিস্থিতি বা ঘটনা বিবেচনায় বাইরে থেকে যে কারও মনে হতে পরে যে, বাংলাদেশ একটি বন্ধু রাষ্ট্রের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছে। কিন্তু হয়তো পর্দার আড়ালে অন্য বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে নিঃশব্দে ভিন্ন কিছু হচ্ছে! আর এর মধ্য দিয়ে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টাই প্রতিনিয়ত করে চলেছে ঢাকা। অর্থনীতিসহ নানা সংকটে জর্জরিত বাংলাদেশ পশ্চিমা দুনিয়ার মতামতকে অগ্রাহ্য করে জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন করে ফেলেছে। যার মধ্য দিয়ে ৩০০ আসনের মধ্যে ২২২ আসন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ দফায় সরকারে ফিরেছে। বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জয় পাওয়া রেকর্ডসংখ্যক স্বতন্ত্র এমপি কার্যত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছেন।
যদিও তাদের বেশির ভাগ সরকারের ডামি প্রার্থী ছিলেন। অবশ্য অফিসিয়াল বিরোধী দল হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে কোনোমতে ১১ সিট পাওয়া জাতীয় পার্টি! যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, কানাডাসহ পশ্চিমা বন্ধুদের রিজারভেশনের মধ্যে অনুষ্ঠিত ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনে যুদ্ধবন্ধু ভারত এবং উন্নয়নবন্ধু চীনের জোরালো সমর্থন ছিল। যা দেশ দু’টির প্রতি বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে দায়বদ্ধ করেছে বলে মনে করেন সমালোচকরা। আর সে কারণেই ১০ দিনের ব্যবধানের দু’দফা নয়াদিল্লি সফর এবং সেই সফরের এক মাসের মধ্যেই পূর্ব-নির্ধারিত তারিখ ৮ই জুলাই বেইজিং যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের বিদ্যমান নানা সংকট থেকে উত্তরণে দেশ দু’টির কাছে বড় সহযোগিতা পাওয়ার আশা সরকারের। কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও চীনের মধ্যে কোন দেশের কাছ থেকে কি ধরনের সহায়তা নিচ্ছে বাংলাদেশ? তার সবটা খোলাসা না হওয়ায় রাজনীতিতে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা চলছে। যার অনেকটাই সত্য বা সত্যের কাছাকাছি এমন ধারণা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পেশাদাররা। তবে তারা এটা বলার চেষ্টা করেন যে, চাওয়া-পাওয়ার হিসেবে বাংলাদেশের ঘাটতি বা সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে কিন্তু পরস্পরবিরোধী বা প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভারতের কোনো খেলায় বাংলাদেশ কখনই পার্ট হয় না। উদাহরণ হিসবে তারা বলেন, লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা-প্রাণহানির ঘটনাকালেও উভয়ের বন্ধু বাংলাদেশ কারও পক্ষাবলম্বন না করে শান্তির বার্তা প্রচার করেছে।
বাংলাদেশের ঝুঁকে পড়া নিয়ে কেন এত উদ্বেগ: চীন না ভারত কার প্রতি বাংলাদেশ ঝুঁকছে? এমন প্রশ্ন উঠেছিল সরকারপ্রধানের সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে। প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিল্লি সফরের পর বেইজিং সফর প্রস্তুতির প্রসঙ্গে প্রশ্নটি এসেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তারপরও এ নিয়ে কথাবার্তা বন্ধ হয়নি। অতি সম্প্রতি ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এক নিবন্ধে বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি খোলাসা করেই বলেন, এটি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতের সংবাদ মাধ্যম ইকোনমিক টাইমসে লেখা নিবন্ধে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের গভীরতার কথাও তুলে ধরেন। এদিকে ব্যাক টু ব্যাক প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিল্লি সফর এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে বেইজিং সফরের প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সদ্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকছে না। এ নিয়ে কারও ভয়ের কোনো কারণ নেই। মোমেন মনে করেন- ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে কোনো খাদ নেই। এ বন্ধুত্ব অক্ষুণ্ন এবং অটুট। মোমেনের মতে, মালদ্বীপের পর বাংলাদেশে চীনের প্রভাব বাড়ছে মর্মে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা অমূলক। তিনি দাবি করেন বাংলাদেশ চীনের প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছে না। চীন কেবলমাত্র বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী। তারা শুধু এ দেশের কিছু প্রজেক্টে সহযোগিতা করছে। চীন থেকে বাংলাদেশ যা পেয়েছে তা জিডিপি’র ১ শতাংশের কম উল্লেখ করে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা নয়। তার মতে, বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকছে- এটা একটা প্রোপাগান্ডা মাত্র।
ঢাকায় ‘রাষ্ট্রীয় অতিথি’র মর্যাদা পাওয়ার চেষ্টা চীনের মন্ত্রীর, সতর্ক ছিল বাংলাদেশ: এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ সফরে আসেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি নেতা ও আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও। সঙ্গে ছিলেন ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল। চীনের রাজনীতিতে অত্যন্ত ইনফ্লুয়েনশিয়াল ব্যক্তিত্ব লিউ ঢাকায় আসার পর প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছেন। বৈঠক হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে। চীনের ওই অতিথির সম্মানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করেছিলেন। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ওই ভোজ-বৈঠক হয়। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ওই নেতা তার প্রত্যাশা অনুযায়ী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সাক্ষাৎ পেয়েছেন। রাষ্ট্রীয় প্রোটোকল বিবেচনায় সেটি পাওয়ার কথা ছিল না, তারপরও তা করা হয়েছে। তারপরও চীনের চাওয়া ছিল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক তথা লাঞ্চের আয়োজন, যা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে গেছে ঢাকা। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে আমন্ত্রণ না জানানোর মধ্য দিয়ে খানিকটা ব্যালেন্স রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে বলে দাবি করেন এক কূটনীতিক।
Leave a Reply