বিবিসি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত সপ্তাহে তার দুর্বল বিতর্কের জন্য ভ্রমণ জনিত ক্লান্তিকেই দায়ী করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন নির্বাচনি বিতর্কের আগে বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি ভ্রমণের কারণে তিনি ক্লান্ত ছিলেন এবং এ কারণে তাকে ‘খুব বেশি স্মার্ট’ দেখা যায়নি। “আমি আমার কর্মকর্তাদের শুনিনি…এবং এরপর মঞ্চেই প্রায় ঘুমিয়ে পড়ছিলাম,” বলেছেন তিনি।
একাশি বছর বয়স্ক মি. বাইডেন তার শেষ ভ্রমণ শেষ করেছিলেন গত পনেরই জুন, যা সাতাশে জুনের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে।
মি. বাইডেনের মন্তব্য এমন সময় আসলো যখন তার দলের অভ্যন্তরেই নভেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে তার মানসিক সুস্থতা নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এবং টেক্সাসের একজন ডেমোক্র্যাটিক দলীয় কংগ্রেসম্যান তাকে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোরও আহবান জানিয়েছেন।
“আমি আশাবাদী তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বেদনাদায়ক ও কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন,” লয়েড ডগেট মঙ্গলবার বলেছেন এক বিবৃতিতে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বৃহস্পতিবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কের সময় কিছু ক্ষেত্রে জবাব দিতে সংগ্রাম করতে দেখা গেছে।
“এটা কোনো অজুহাত নয়, তবে এটি একটি ব্যাখ্যা,” মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভার্জিনিয়ায় একটি ব্যক্তিগত তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে বলছিলেন তিনি।
তিনি তার পারফরমেন্সের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বলেন তার পুনরায় নির্বাচিত হবার জন্য এটি সহায়ক নয়।
মি. বাইডেন গত মাসে দুই সপ্তাহে ইউরোপে দুটি আলাদা ভ্রমণে গিয়েছিলেন।
ইতালি থেকে রাতভর ভ্রমণ করে ফিরে এসে পনেরই জুন তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে একটি তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ওই দিনই তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিরে আসেন।
এর আগে হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, বিতর্কের দিন মি. বাইডেন ঠান্ডায় আক্রান্ত ছিলেন।
তবে মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নিজে তার কোনো অসুস্থতার কথা বলেননি। হোয়াইট হাউজের একজন মুখপাত্র বলেছেন বিতর্কের সময় তিনি ঠান্ডার কোনো ওষুধ সেবন করেননি।
মি. ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিতর্কের প্রস্তুতি নিতে মি. বাইডেন ক্যাম্প ডেভিডেও ছয় দিন কাটিয়েছেন। এটি ওয়াশিংটন ডিসির বাইরে প্রেসিডেন্টের অবকাশ কেন্দ্র।
মি. বাইডেনের শিডিউল বা দৈনিক কর্মসূচির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে প্রেসিডেন্টের দিন শুরু হয় বেলা এগারটায় এবং প্রতিদিন ঘুমের জন্য সময় পান।
আলজেরিয়ায় ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফায় ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট (এফআইএস) বড় ধরনের বিজয় পায়। দ্বিতীয় ও শেষ দফার নির্বাচন ছিল ১৬ জানুয়ারি। কিন্তু এর আগেই দেশটির সেনাবাহিনী নিজেদের নিয়ন্ত্রিত সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে ঘোষণা দেয়, এই নির্বাচনপ্রক্রিয়া চালানো অসম্ভব।
সেনাবাহিনীর এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে আলজেরিয়ায় একটি অর্থহীন যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল অভিজাততন্ত্রের স্বার্থ রক্ষা করে যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দখল। আর এর শিকার হয়েছিলেন মোহাম্মদ বউদিয়াফ। ১৯৯২ সালের ২৯ জুলাই বক্তৃতা দেওয়ার সময় দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন এই প্রেসিডেন্ট।
এ ঘটনার বিস্তারিত জানা যায় মোহাম্মদ সামরাউইয়ের লেখা ‘ক্রনিকেল অব দ্য ইয়ার্স অব ব্লাড আলজেরিয়া’ বইয়ে। সামরাউই ছিলেন সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ১৯৯২ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট চাদলি বেনজেদিদকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে সংঘটিত অভ্যুত্থানে তিনিও অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে দেশ ছেড়ে জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন তিনি।
সামরাউই তাঁর বইয়ে লিখেছেন, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আলজেরিয়ার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণকারী প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সংঘটিত অনেক হত্যাকাণ্ডের তথ্য তাঁর হাতে এসেছে।
বউদিয়াফের হত্যাকারী কে
১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনের সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন চাদলি বেনজেদিদ। পরের বছর ১১ জানুয়ারি তাঁকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। আর এই অভ্যুত্থানকে আইনি রূপ দিতে ১২ জানুয়ারি পদক্ষেপ নেয় সেনাবাহিনী। তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদ (এইচসিএস) ‘ঘোষণা’ দেয় এই নির্বাচনপ্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা অসম্ভব।
ওই ঘোষণার দুই দিন পর এইচসিএস সিদ্ধান্ত নেয় আগামী দুই বছর দেশটি পরিচালনা করবে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এইচসিই (হাউত কমিটে ডি ইটাত)। এর প্রধান হবেন বউদিয়াফ। তিনি ১৬ জানুয়ারি দেশে ফিরবেন। এই তারিখে তাঁর দেশে ফেরা কোনো কাকতালীয় বিষয় ছিল না। কারণ, সেদিন ছিল দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের তারিখ।
সেই বছরের ১০ জানুয়ারি জেনারেলদের নির্দেশে আলী হারুন নামে একজন বউদিয়াফের সঙ্গে দেখা করতে মরক্কো যান। বউদিয়াফকে দেশে ফিরিয়ে আনতে রাজি করানোই ছিল উদ্দেশ্য।
মোহাম্মদ বউদিয়াফের জন্ম ১৯১৯ সালের ২৩ জুন, আলজেরিয়ার মসিলা শহরে। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফরাসি সেনাদের হয়ে লড়াই করেছেন। কিন্তু ১৯৫০ সালে তিনি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। ১৯৫৪ সালে তিনি ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টে (এফএলএন) আহমেদ বেন বেলার সঙ্গে যোগ দেন। ১৯৫৬ থেকে ’৬২ সাল পর্যন্ত ফরাসিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশকে স্বাধীন করেন তাঁরা।
এরপর নতুন অস্থায়ী সরকারের প্রেসিডেন্ট হন বেন বেলা আর বউদিয়াফ ছিলেন উপপ্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনি বেন বেলার স্বৈরশাসন মেনে নিতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে তিনি বেশ কয়েক মাস কারাবন্দী থাকার পর নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। ১৯৬৩ সালে তিনি মরক্কো চলে যান। সেখানে তিনি ইট-কারখানা গড়ে তুলেছিলেন। তবে তিনি দেশের বাইরে থেকেও এফএলএন দলের নেতাদের নানা দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার ছিলেন।
সেনাবাহিনী বউদিয়াফকে ‘সাজানো’ প্রধান হিসেবে দেখতে চাইলেও তাঁকে তারা ‘হাতের পুতুল’ বানাতে পারেনি। এ কারণেই ২৯ জুন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মেদ বউদিয়াফ আন্নাবাতে একটি সরকারি সফরে বক্তৃতা করার সময় তাঁর দেহরক্ষীর হাতে নিহত হন। এটি ছিল রাজধানীর বাইরে তাঁর প্রথম সরকারি সফর।
সামরাউই বইতে লিখেছেন, ‘হত্যাকারী ছিলেন ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের (ডিআরএস) স্পেশাল ইন্টারভেনশন গ্রুপের (সিআইএস) সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট লেম্বারেক বউমারাফি; যিনি আবদেলহাক নামে পরিচিত ছিলেন। আন্নাবাতে সেই অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দলের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে তিনি যোগ দিয়েছিলেন।
এর কিছুদিন আগে জিআইএফ-এর প্রধান মেজর বেলুইজা হামাউ স্বাক্ষরিত একটি ব্যক্তিগত মিশনের আদেশের কপি পেয়েছিলেন ডিআরএসের কাউন্টার-স্পাইনেজ ডিরেক্টরেটের (ডিসিই) প্রধান স্মাইন লামারি। এরই ধারাবাহিকতাতেই বউমারাফিকে সেই নিরাপত্তা দলে নেওয়া হয়।
বউদিয়াফ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জেনারেল তৌফিক, স্মাইন লামারি এবং লারবি বেলখেইর ছিলেন বলে দাবি করেন সামরাউই।
যেভাবে হত্যা করা হয়
ভূমধ্যসাগরীয় বন্দরনগরী আন্নাবাতে প্রেসিডেন্ট বউদিয়াফের অনুষ্ঠানস্থলে হট্টগোল তৈরি করতে গ্রেনেড ছুড়ে মারেন বউমারাফি। এরপর তিনি পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে প্রেসিডেন্টকে গুলি করেন। সেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অস্ত্র ফেলে দেয়াল টপকে ৪০০ মিটার দূরে এক বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। সেখান থেকে নিজেই ফোন করে পুলিশের হাতে নিজেকে তুলে দেন।
আলজেরিয়ার বার্তা সার্ভিসেস এপিএস জানিয়েছিল, বক্তব্য দেওয়ার সময় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে প্রেসিডেন্টকে দুবার গুলি করা হয়। যিনি গুলি করেন তাঁর পরনে ছিল দাঙ্গা স্কোয়াড বাহিনীর পোশাক। তাদের ভাষ্য ছিল, বউদিয়াফের দেহরক্ষীরা হামলাকারীকে হত্যা করেছে। তবে ক্ষমতাসীন হাই স্টেট কমিটি পরে জানিয়েছে, হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনার দিন আলজেরিয়ার টেলিভিশনের ফুটেজে দেখানো হয়, বউদিয়াফকে স্ট্রেচারে করে মিলনায়তন থেকে বের করে আনা হচ্ছে। তখনো তিনি বেঁচে ছিলেন। এরপর মিলনায়তনে দ্বিতীয়বার গুলির শব্দ পাওয়া যায়। বউদিয়াফের গায়ে যখন গুলিটি লাগে, তখন তিনি জীবনের উপলব্ধি নিয়ে কথা বলছিলেন। তখন তিনি বলছিলেন, ‘আমরা জানি, জীবন খুব ছোট। আমাদের সবাইকে মরতে হবে।’
ঘটনার তিন সপ্তাহ পর যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের এক খবরে বলা হয়েছিল, বউদিয়াকে তিনটি গুলি করা হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি তাঁর মাথায় ও একটি পিঠে লাগে। সেই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সেই বছরের জানুয়ারিতে পার্লামেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় ও শেষ ধাপেও ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্টের জয় ছিল নিশ্চিত। নির্বাচন বাতিল করে বউদিয়াফকে ক্ষমতায় আনার কারণে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে এই দলটির হাত ছিল বলে প্রথমে সন্দেহ করা হয়েছিল। বিশেষ করে এই দলের সমর্থক, যাঁরা দেশের বাইরে ছিলেন, তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।
এরপর বউদিয়াফের হত্যাকাণ্ডের কিছু ভিডিও টেপ দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়, এখানে কর্তৃপক্ষের হাত আছে। কারণ, ভিডিও ফুটেজে কিছু কাটছাঁট করা হয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ঘটনার সময় চারটি টেলিভিশনের ক্যামেরা দৃশ্য ধারণ করেছিল।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আলজেরিয়ান টেলিভিশন সার্ভিসের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র ইন্ডিপেনডেন্টকে নিশ্চিত করেছে, ক্যামেরাগুলোতে হত্যার পুরো ঘটনাই ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বউদিয়াফের গায়ে যখন গুলি লাগে কিছু দৃশ্য কেটে দেওয়া হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তাঁর মাথায় গুলি লাগার পর মগজ ছিটকে বেরিয়ে আসে।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, বউমারেফকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এই ভিডিওতে বউমারেফ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কিছু কথা বলেন। কিন্তু সেসব কথা শুনলে তিনি জাতির কাছে নায়কে পরিণত হতে পারেন, এমন ভয়ে তা প্রচার করা হয়নি।
নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, রাজধানী আলজিয়ার্সের শহরতলির আইন নাদজা সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এপিকে জানিয়েছিল, বউদিয়াফকে চিকিৎসার জন্য এখানে আনা হয়েছিল। তখনো তিনি বেঁচে ছিলেন। অথচ সরকারি বেতারে বেলা ১টায় ঘোষণা করেছিল, প্রেসিডেন্ট মারা গেছেন। কিন্তু তিনি এই ঘোষণার তিন ঘণ্টা পর মারা যান।
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিক
বিবিসি
যুক্তরাজ্যে চৌঠা জুলাই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সাধারণ নির্বাচন। প্রত্যাশিত সময়ের আগেই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনের ফল কী হতে পারে এ নিয়ে নানা জরিপ ও অনুমান দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে।
অনুমান করা হয়েছিল শরতে (অক্টোবর নাগাদ) ভোট হতে চলেছে বলে, যদিও তা হয়নি।
একাধিক কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন।
ভোটের ময়দানে লড়তে আসা প্রতিদ্বন্দ্বীরা আপাতত প্রচারে ব্যস্ত। ইতোমধ্যে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে জনতার জরিপে উঠে এসেছে বিভিন্ন ট্রেন্ডও।
সারা বিশ্বে প্রতিদিন উৎপাদিত খাদ্যের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ নষ্ট বা অপচয় হয়। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই পরিমাণটি অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারলে ১৫ কোটি ৩০ লাখ ক্ষুধার্ত মানুষ পেট ভরে খেতে পারবে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) যৌথ প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, এই বিপুল পরিমাণ খাদ্য অপচয়ের কারণে যাদের খাদ্যের প্রয়োজন, তারা তা পাচ্ছে না এবং পরিবেশে বাড়তি কার্বন নি:সরণ হচ্ছে।
প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, নিম্ন-আয়ের দেশের মানুষ সারা বছর যে পরিমাণ খাদ্য খেতে পান (ক্যালরি মানে), উৎপাদিত খাদ্য খামার থেকে দোকান ও বাড়িতে পৌঁছানোর সময়য় তার দ্বিগুণ পরিমাণ (ক্যালরি) নষ্ট হয়।
এ ছাড়া, খামার থেকে খাদ্য টেবিলে পৌঁছানোর প্রক্রিয়ায় অপচয়ের পরিমাণ কমালে ‘২০৩০ সালের মধ্যে কৃষিখাত থেকে গ্রিন হাউস গ্যাস নি:সরণ চার শতাংশ কমানো ও ১৫ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে অপুষ্টি থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ নিঃসন্দেহে এটি একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে যারা খাদ্য উৎপাদন করেন এবং যাদের জন্য তা উৎপাদন করা হয়, তাদের উভয়কেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’
বর্তমানে বিশ্বের মোট গ্রীনহাউস গ্যাস নি:সরণের ২০ শতাংশই আসে কৃষিখাত ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম থেকে।
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অংশ হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে মাথাপিছু খাদ্য অপচয়ের পরিমাণ ৫০ শতাংশ কমানোর অঙ্গীকার করেছে।
তবে উৎপাদনকারীদের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের কোনো বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা নেই।
পচনশীল হওয়ার কারণে ২০২১ থেকে ২০২৩ এর মধ্যে খাদ্য অপচয়ের অর্ধেকেরও বেশি ছিল ফল ও সবজি।
২৫ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল খাদ্য-শস্য।
এফএও’র প্রাক্কলন মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে ৬০ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকবে।
প্রতিবেদন মতে, ‘খাদ্য অপচয় কমাতে পারলে আরও বেশি মানুষের আওতায় আরও বেশি খাদ্য আসবে এবং সার্বিকভাবে খাদ্যের দাম কমে আসবে। যার ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ আরও ভালো করে খেতে পারবে।’
২০৩০ সালের মধ্যে খাদ্য অপচয় অর্ধেকে কমিয়ে আনতে পারলে নিম্ন আয়ের দেশে খাদ্য খাওয়ার পরিমাণ ১০ শতাংশ, নিম্ন-মধ্যবিত্ত দেশে ছয় শতাংশ ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত দেশে চার শতাংশ বাড়বে।
ভারতের উত্তর প্রদেশের হাতরাসে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে নারী ও শিশুসহ অন্তত ১০৭ জন নিহত হয়েছেন।
পুলিশ মনে করছে, অনুষ্ঠানস্থলে অনেক মানুষ থাকায় একপর্যায়ে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। এরপর অনেক মানুষ একসঙ্গে সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়।
এই আয়োজনটি যে সময়ে চলছিল তখন প্রচণ্ড গরম ছিল বলেও জানিয়েছে দেশটির পুলিশ।
ইন্সপেক্টর জেনারেল (আলীগড় রেঞ্জ) শলভ মাথুর বলেন, ‘এটি ছিল ধর্ম প্রচারক ভোলে বাবার সৎসঙ্গ সভা।’
অবশ্য, অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কয়েকজন জানিয়েছেন, সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার পর সবাই বের হওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করায় এ ঘটনা ঘটেছে।
ইটাহের সিনিয়র সুপারিন্টেনডেন্ট অব পুলিশ রাজেশ কুমার বলেছেন, হাতরাসের সিকান্দ্রারাও থানার সীমানার মধ্যে পদদলিত হয়ে নিহতদের মধ্যে তিনটি শিশুও রয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই নারী।
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু পদদলিত হয়ে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছেন। আগ্রার অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিচালক এবং আলীগড়ের কমিশনার এই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি বলেছেন, ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply