আসাদ মান্নান
দূরন্ত মেঘের পিঠে মাঝে মাঝে চোখ মেলে দেখি
মোহিনী নারীর মতো মনোরম শরীর দুলিয়ে
নগ্ন পায়ে হেঁটে যাচ্ছে আমার না-লেখা কবিতাটি;
কুয়াশায় হতাশায় তাকে পেতে আশার আলোয়
টকটকে পূর্ণিমায় কত ঘোর অমাবস্যা নামে;
মন্দিরে মন্দিরা বাজে– নিরালোকে দীপাবলি জ্বেলে
অপেক্ষার উপকূলে চন্দ্রালোকে শব্দের আগুন
জ্বালিয়ে দিয়েছে এক অলৌকিক রহস্যের দেবী।কবিতার জন্য আমি নারী আর নদীর পেছনে
কত যে ছুটেছি! ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়ে
পড়ে আছি
শূন্যতার কোলে; শূন্য থেকে মহাশূন্যে ডানাহীন
উড়ন্ত মেঘের পিঠে চড়ে চৈতন্য রহিত এক
অন্ধ তীরন্দাজ ছুটছে– কেউ তাকে থামাতে পারে না:
অন্ধকারে ধীরে ধীরে দৃষ্টি জুড়ে পর্দা সরে যায়:
আমাদের যতীন বাবুর ওই বাঁশ বাগানের
মাথার উপরে দেখি মাধবী লতার মতো
বাঁকা
একফালি খুকু চাঁদ ওঠে একা একা; আচানক
দেখা গেলো তার বুকে দুর্নিবার প্রমত্ত ঝড়ের
ঘূর্ণি তালে আদিগন্তে দুলে ওঠে কবির নিখিল;
রহস্যের জাল বুনতে বুনতে সে আসে নীরব স্রোতে
গা ভাসিয়ে, যেন এক নিরুদ্বিগ্ন শাদা রাজহাঁস,
বাতাসে কম্পন তুলে ভেসে যাচ্ছে পরম নিশ্চিন্তে।তারপর দেখতে দেখতে দীর্ঘ উপত্যকা পার হয়ে
জীর্ণ শীর্ণ নদীতীরে বেলা ডুবে যায় — খেলা শেষ:
আমার হলো না আর লেখা সেই প্রিয় কবিতাটি,
যে কবিতা লিখতে গিয়ে হারিয়েছি নিজস্ব নারীকে ।
কী সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে এখন! তবু কেন
নিশ্চল গোধূলি নামে ঢিলে ঢালা মেঘের যোনিতে;
বুকের ভেতরে বয়ে যাচ্ছে এ কেমন লু হাওয়া!
বালুঝড়ে লণ্ডভণ্ড মরূদ্যান বসতি খামার–
মাঝে মাঝে এ রকম হয় — কবিতা উটের মতো
গ্রীবাটা বাঁকিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে অগোচরে ;
কখনো বা মাথার খোড়লে ঢুকে কৃমির মতন
নড়াচড়া করে ; আবার কখনো দেখি হিমাগারে
এক মৃত কাছিমের মতো চিৎ হয়ে পড়ে আছে —
সব কিছু তচনচ হয়ে যাচ্ছে,– আমি
সুন্দরের
পাপড়ি ছুঁয়ে কবিতাকে উঠে আসতে বলেছি যখন
সে তখন আমার উঠোন ছেড়ে চলে গেছে দূরে
বহু দূরে হাজার শতাব্দী দূরে মেঘের ওপারে —
আমার হলো না আর কবিতার সঙ্গে সহবাস:
চালাক চতুর আর ধোঁকাবাজ খ্যাতির বেপারী
বেহায়া পিরীতি নিয়ে ফুর্তি করে প্রেমের ডাঙায়;
তুমি প্রিয় শব্দপীর! কবিতার ধ্যানী মহাদেব
আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাও তোমার আশ্রমে।
Leave a Reply