শিবলী আহম্মেদ সুজন
বদন-খাস
বদন শব্দের অর্থ শরীর। হয়তঃ এ জাতীয় মসলিন দ্বারা শুধু শরীরের জামা তৈরী হত বলেই একে বদন-খাস বলা হত। বদন-খাসও সূক্ষ্মতার জন্য বিখ্যাত ছিল, কিন্তু এর বুনন খুব গাঢ় বুনটের (closetexture) ছিলনা। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪ গজ পর্যন্ত ছিল এবং চওড়া দেড় গজ; এর সুতার সংখ্যা ছিল প্রায় ২২০০ এবং ওজন ছিল প্রায় ৩০ তোলা।
সর-বন্দ
ফার্সী শব্দ সর (মাথা) এবং বন্দ (বাঁধা) থেকে সর-বন্দ শব্দের উৎপত্তি। সর-বন্দ মাথার পাগড়ীরূপে ব্যবহৃত হত। ইহা দৈর্ঘ্যে প্রায় ২০ থেকে ২৪ গজ পর্যন্ত ছিল এবং চওড়ায় আধা গজ থেকে ১ গজ পর্যন্ত ছিল। এর সুতার সংখ্যা ছিল প্রায় ২১০০ এবং ওজন ছিল প্রায় ৩০ তোলা। ইংরেজ কোম্পানী সর-বন্দ মসলিন বহুল পরিমাণে রপ্তানী করত এবং ইংল্যান্ডের মেয়েরা সর-বন্দ দ্বারা জামা, রুমাল বা গলাবন্দ (scarf) তৈরী করে ব্যবহার করত।
সর-বুটী
ফারসী শব্দ সর (মাথা বা উপরিভাগ) এবং বুটী বা বুটীদার শব্দ থেকেই সর- বুটী নামের উৎপত্তি। এ জাতীয় মসলিনে কয়েক নাল সুতা মুচড়িয়ে বুটী বা গোটা তৈরী করা হত বলেই একে সর-বুটী নাম দেওয়া হয়েছিল। সর-বুটাও পাগড়ী রূপে ব্যবহৃত হত। এর পরিমাণ, ওজন এবং সুতার সংখ্যা সর-বন্দের মতই ছিল।
কামিছ
আরবী শব্দ কামিছ (জামা) থেকেই এ নামের উৎপত্তি। মুসলমানদের কোরতা তৈরীর জন্য কামিছ মসলিন ব্যবহৃত হত। কোরতা ও জামার মত কিন্তু সে যুগে কোরতার দৈর্ঘ্য পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আজকালও আরবী শিক্ষিত লোকেরা সাধারণতঃ ঐরূপ কোরতা ব্যবহার করে। কামিছ মসলিন দৈর্ঘ্যে ২০ গজ ও চওড়ায় ১ গজ ছিল। এর সুতার সংখ্যা ছিল ১৪০০ এবং ওজন ছিল প্রায় ২৫ তোলা।
ডোরিয়া
ডোরাকাটা বা দাড় বিশিষ্ট মসলিনকে ডোরিয়া বলা হত। তাঁতে বুননের সময়েই দুই বা ততোধিক সুতা এক সাথে জোট পাকিয়ে ডোরা তৈরী করা হত। সাধারণতঃ ভোগা বা সিরঞ্জ জাতীয় তুলা থেকেই ডোরিয়া তৈরী হত এবং এর দ্বারা ছেলে মেয়েদের পোশাক তৈরী করা হত। ডোরিয়া দৈর্ঘ্যে ১০ থেকে ১২ গজ ও চওড়ায় ১ থেকে দেড় গজ পর্যন্ত ছিল। এর সুতার সংখ্যা ১৫০০ থেকে ২১০০ পর্যন্ত উঠা-নামা করত।
চার-কোনা
চার-কোনা বিশিষ্ট ছককাটা বা চারকোনা ঘরবিশিষ্ট ডিজাইন করা মসলিনকে চার-কোনা বলা হত। চার-কোনা মসলিন দ্বারা জামা তৈরী হত। চার- কোনা এবং ডোরিয়া মসলিনের আকার, ওজন এবং সুতার সংখ্যা প্রায় সমান ছিল, পার্থক্য শুধু এই যে, ডোরিয়ার ডোরা বা লাইনগুলি লম্বালম্বি ছিল আর চার- কোনার ছকগুলি চার কোন বিশিষ্ট ছিল। হয়তঃ উভয় প্রকারের মসলিনের বুনন প্রণালীও একই ছিল।
জামদানী
যেসব মসলিন তাঁতেই নক্সা করা হত, তাকে জামদানী বলা হত। জামদানী নানা প্রকারের ছিল। জামদানীর দাম অত্যন্ত চড়া ছিল এবং দেশী-বিদেশী ধনীদের কাছে জামদানীর বেশ চাহিদা ছিল। মোগল বাদশাহদের জন্য তৈরী মলবুস খাসের একটি বিশিষ্ট অংশ জামদানী দ্বারা পূরণ করা হত। এর দ্বারা নানা প্রকারের জামা তৈরী করা হত। আজকালও ঢাকায় জামদানী তৈরী করা হয় তবে এগুলি সেকালের জামদানীর নিকৃষ্ট সংস্করণ।
Leave a Reply