সারাক্ষণ ডেস্ক
৪ জুলাই ব্রিটেনের জনগন যে ভোট দিয়েছে সেই ভোটের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, ভবিষ্যতে লেবার সরকারের সাফল্য কতটা। বৃটেনের যে বিপুল সংখ্যক মানুষ লেবারদের ভোট দিয়েছে তার প্রায় অর্ধেক ভোটই হচ্ছে কনজারভেটিভদের বিপরীতে লেবারকে ভোট দেয়া, লেবার পার্টির সমর্থক হিসেবে নয়। । এই ধরনের নির্বাচনে সবথেকে বড় ভয় মানুষ একটা বিশাল পরিবর্তনের আশা নিয়ে ভোট দেয়। কারন নির্বাচনের পূর্বদিন পর্যন্ত মানুষ যাদের সঙ্গে ছিল তাদের প্রতি একই হতাশ হয়ে যায় যে নিউটনের সূত্র ভেঙ্গে এখানে বিপরীত শক্তিতে অর্থাৎ হতাশার বিপরীতে আশাটা অনেক বেশী হয়ে যায়।লেবাররা যেমন আকাশচুম্বি মেজরিটি পেয়েছে মানুষের আশাও তাদের কাছে তেমনি। মানুষ মনে করছে তাদের দেশের অর্থনীতি যে তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে সেটাতো দূর হবেই পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনের স্বাস্থ্য, যানবাহনের জ্বালানী পেনশন এই ধরনের সমস্যাগুলো লেবাররা দ্রুতই ঠিক করে ফেলবে।
এর থেকে কম সময় হলেও ১৯৯৭ সালে লেবাররা এবারের নির্বাচনের চেয়েও আরো ৬ টি আসন বেশী নিয়ে ক্ষমতায় েএসেছিল। সেবারও মানুষের আশা ছিল এরকমই। ১৯৯৭ এবং ২০২৪ এর নেতা টনি ব্লেয়ার ও কিয়ের স্টারমারের মন্ত্রীসভা গঠনের একটা অদ্ভূত মিল দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশ মন্ত্রীই তরুণ।
তারুন্য অবশ্যই শক্তি, তবে ব্লেয়ারের তরুন মন্ত্রী ও এমপিরা শেষ অবধি ভাল পারফরমেন্স করতে পারেননি। ব্লেয়াও ব্যর্থতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে চলে যান। ২০২৪ এ লেবার নেতা কিয়ের স্টারমার ,তিনি ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একজন শিক্ষক। তিনি নিশ্চয়ই সাফল্যের পথে হাঁটার আগে তার দলের অতীতের এই ল্যান্ডমার্ক ব্যর্থতার পাশাপাশি একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে বারকয়েক পড়বেনই । কারন তার দেশের বর্তমানের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্যে যে সার্ভিস সেক্টরকে সংকোচন করা হয়েছে, ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে, সরকার অনেক বেশী ঋণ নিয়েছে এখান থেকে বেরিয়ে আসার কমিটমেন্ট তার দল নির্বাচনী নীতিতে এনছে। এছাড়া তার দলের আরো উচ্চাকাংখা“গ্রীন ইকোনমি” প্রতিষ্ঠা করা। উপরে উল্লেখিত সবগুলো বিষয়ই হচ্ছে মাল্টি বিলিয়ন পাউন্ড প্লান। বাস্তবতায় এবং এই প্লান যে কতটা একই সমতলে সেটা এই রাষ্ট্র বিজ্ঞানী প্রধানমন্ত্রীর জন্যে একটা প্রধান চিন্তার কারন। এর সমাধানের রোড ম্যাপটি ঘোষণার পরে সফলতার বাস্তব হিসাব নিকাশ আরো সহজ হবে।
অর্থনীতিকে প্রথমেই একটা গতি দেয়ার জন্যে অনেকেই মনে করেছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান এবং কর্মসংস্থানের জন্যে , বাণিজ্যের জন্যে এই ইউনিয়ন সকল চলাচলকে স্বাধীনতা দেবে। এবং এই একক মার্কেট সবধরনের ট্যারিফ ও ট্যাক্স এর বাঁধা উঠিয়ে কর্মসংস্থান ও ব্যবসায়ে স্বাধীনতা দেয়া হবে।
লেবার নেতা এখনি সেখানে যাচ্ছেননা। তিনি কিছু নতুন বাণিজ্য চুক্তি যেমন পশুজাত ও উদ্ভিদ জাত খাদ্যের একটা সীমিত চলাচলকে চালু করতে চাচ্ছেন।এর ফলে ব্রিটেনের খাদ্য রপ্তানী হয়তো ইউরোপীয় ইউনিয়নে কিছুটা বাড়বে। কিন্তু সেটা তাদের অর্থনীতিতে খুব সামান্যই যোগ করবে।
লেবার সরকার তাদের পরিকল্পিত আবাসন প্রক্রিয়ায় শহরের উপকন্ঠে বা গ্রামগুলিতে আবাসন তৈরীর উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছে। এটা মূলত: শহর এলাকার আবাসন সমস্যার থেকে উত্তরণ ঘটানোর একটা পন্থা বলে তারা মনে করছে। কিন্তু এটা দ্রুত সেইসব ভোটারদেরকে হতাশ করবে যারা পরিবেশ রক্ষার জন্যে দেশে আরো বেশী সবুজ স্পেস রাখতে চায়।
চিকিৎসা খাতে তারা হাসপাতাগুলিতে সিটিস্ক্যান, এমআরআই এর মতো দামী ইকুপমেন্টগুলোকে ডাবল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাশাপাশি মেন্টাল হেলথ সুরক্ষায় যে নতুন ডাক্তার নিয়োগের যে কর্মসূচি আছে এটার চাপ বাজেট কতটা নিতে পারবে তাও একটা বড় প্রশ্ন।
এর পরে কনজারভেটিভ সরকার ইউক্রেন, আফগানিস্তান এবং হংকং থেকে পড়তে আসা ছাত্রদের তাদের স্বজনদের আনার যে অনুমতি দিয়েছিল লেবার সরকার সেটাকে কমাবে। এর ফলে হয়তো ব্রিটেনে অভিবাসীর সংখ্যা কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়া কি হবে সেটা অবশ্যই বিবেচ্য। এধরনের নীতিতে গেলে লেবার পররাষ্ট্রনীতির টপ বস ডেভিড ল্যামি খুব সহজেই ট্রাম্পের নীতির অক্ষাংশে ঢুকে যেতে পারবে। কিন্তু ঐ নীতির সাথে লোবার উদার অক্ষাংশকে তিনি কিভাবে মেলাবেন সেটা একটা বড় গ্রে এরিয়া হিসাবে তার সামনে আসবে। সর্বোপরি, লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার এর সঙ্গে মি. ট্রাম্পের সম্পর্ক খুব গভীর নয় তাই মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল পর্যন্ত বর্তমানের এই লেবার সরকারকে অনেক কিছুর জন্যেই অপেক্ষা করতে হবে।
Leave a Reply