স্কেটস, বগলে ছেলেটা-১
মার্চ মাসের রোদ-ঢালা দিনে শহরের কার্নি’স-পাইপের ঝুলন্ত বরফ গলতে শুরু করে। রুগ্ণ শীতার্ত মাটিকে তারা ফোঁটা ফোঁটা ওষুধ খাওয়ায়।
স্কেটস্ নিয়ে একটি ছেলে হে’টে যাচ্ছে।
ছেলেটা রোগা, ঢ্যাঙা। কিছুই ওর মাপসই নয়। সবই ছোটো। কী করার ট্রাউজারটা গোড়ালি অবধি। ওভারকোট কোনোক্রমে হাঁটু পর্যন্ত। হাত পকেটে
ঢোকানো, কিন্তু কব্জিটা আঢাকা, হাওয়ায় লাল হয়ে উঠেছে: আন্তিনটা খাটো।
গলাটাও তার লম্বা, রোগা। মাফলারে তা ঢাকা পড়েছে মাত্র আধখানা। ডোরাকাটা সবুজ রঙের মাফলার, আর তার সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো জায়গাটিতেই বেগুনী কালির দাগ।
মনে হবে যেন গতকাল তার পোষাক সবই মাপসই ছিল, কিন্তু রাতারাতি খুবই বেড়ে উঠেছে, নতুন পোষাক কেনার সময় পায় নি।
হাত ওর পকেটে ঢোকানো, স্কেটস্ জোড়া বগলের তলে।
কেমন যেন ও বেঢপ, নড়বড়ে। সমতল জায়গাতেই হোঁচট খাচ্ছে, ধাক্কা লাগছে পথচারীদের সঙ্গে, কখনো ছুটছে লাফাতে লাফাতে, কখনো গাড়ি দেখে থেমে যাচ্ছে রাস্তার মাঝখানটাতেই। চোখ ওর সবুজ, মারমুখী।
বখাটে চাউনি আর বেপরোয়া ভঙ্গিতে ওকে মনে হয় ছটফটে ডানপিটে, ছেলেপিলেদের মধ্যে থাকলে যে বেশ চালায়, কিন্তু একলা পড়লে ভেবে পায় না কাঁ করবে।
ওভারকোটের একটা বোতাম নেই। খানিকটা কাপড় সমেত তা ছে’ড়া। একেবারে জীর্ণ টুপিটায় একটা কান ঢাকা পড়েছে, অন্য কানটা ঠাণ্ডায় অনাবৃত। খুলে-আসা জুতোর ফিতে লোটাচ্ছে ফুটপাতে: ও নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় নেই।
বগলদাবা স্কেটস্ জোড়াটাই শুধু তার নিখুত, পরিপাটী। কালো জুতোর সঙ্গে তা পেতলের রিভেট দিয়ে আঁটা। জুতো জোড়াও ঠিক ‘স্যান্ডউইচ’ করে চামড়ার কালো বেল্টে বাঁধা। এ কোনো মেয়েলী ‘তুষার-কন্যা’ স্কেটস নয়, রীতিমতো গুরুগম্ভীর পুরুষালী ‘ব্রিটিশ স্পোর্টস’ স্কেট্স্। ছ’চলো মজবুত তার ডগা।
তা পরে ছোটার সময় বরফের গুঁড়ো ঠিকরোয় নানা দিকে, যেভাবে ফুলকি ছোটে ঘোড়ার নালে। জোর ছুটতে ছুটতে হঠাৎ একেবারে থেমে যাওয়া যায়, অনেকখন পিছলে যাওয়া যায় রিঙ্কের বরফে।
এই পরিপাটী, সযত্ন-রক্ষিত স্কেটস্ জোড়ার সঙ্গে একেবারেই মানায় না তার বোতাম-ছোঁড়া খাটো ওভারকোট আর এক কান ঢাকা জীর্ণ টুপিটা।
বরফ-গলা ঠান্ডা এক ফোঁটা জল পড়ল ছেলেটির গালে। খোলা হাতটা দিয়ে সেটা সে মুছল, তারপর গলন্ত বরফটার দিকে বিরক্তির দৃষ্টিতে চেয়ে ঢুকে গেল গলিতে।
Leave a Reply