নিজস্ব প্রতিবেদক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোঃ নূরুল হক বলেছেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসাপাতাল সম্পূর্ণরূপে চালু করতে বিদ্যমান আইনে নতুন সংযোজন প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাশা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রেখে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে দেশী বিদেশী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংযুক্ত করা, প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়াসহ অপরিহার্য কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিদ্যমান আইনে নতুন সংযোজন প্রয়োজন হবে।
বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সুপার স্পেশাইলাজড হাসপাতালের মতো শুধুমাত্র সেবামূলক এক একাধিক বিশেষ হাসপাতাল চালু করতে হলে সে বিষয়ে আইনগতভাবে নতুন সংযোজনের মাধ্যমে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধান বিচারপতি, মাননীয় এ্যাটর্নি জেনারেলসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে প্রান্তিক পর্যায়ে সঠিক রোগ নির্ণয় ও সেবা কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে প্যারাক্লিনিক্যাল সাইন্স এর শিক্ষক, চিকিৎসকদের নিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটি অব প্যাথলজিস্ট এর ৩২তম জাতীয় সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাননীয় উপাচার্য একথা বলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কোনো যন্ত্রপাতিই এখন পর্যন্ত নষ্ট হয়নি। তাই এটা নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচার না করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ করছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাননীয় স্বাস্থ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা এমপি বলেন, এ্যানেসথেশিওলজিস্ট ও প্যাথলজিস্টরা পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করেন বলেই তাদের বিষয়টা মানুষ সেভাবে জানতে পারেনা। কিন্তু ফিজিশিয়ান্স ও সার্জনদের মাধ্যমে রোগীদেরকে সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়সহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে এ্যানেসথেশিওলজিস্ট ও প্যাথলজিস্টদের ভূমিকা অপরিহার্য। আজকের এই সম্মেলন দ্রুত পরিবর্তনশীল চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরীক্ষালব্ধ জ্ঞান সমন্বিত করা প্রয়োজন। অর্জিত জ্ঞান সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়, উদ্ভাবনী চিকিৎসা ও রোগী কল্যাণের দিক তরান্বিত করবে এবং জটিল চিকিৎসা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যাপক পরিসর তৈরি হবে।
আজকের সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলাতানা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোঃ নূরুল হক। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব প্যাথলজিস্ট এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. এএন নাসিম উদ্দিন আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোকাররম আলী। বক্তব্য রাখেন সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম দেওয়ান, অর্গানাইজিং কমিটির মেম্বার সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. দেবতোষ পাল। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অর্গানাইজিং কমিটির চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। সম্মেলনে দ্বিতীয় পর্যায়ে ছিল বৈজ্ঞানিক অধিবেশন। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান, সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলানসহ দেশের বিশিষ্ট শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৮ইং সালে সোসাইটি অব প্যাথলজিস্ট এর সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আবার দীর্ঘ ৬ বছর পর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এবারে সম্মেলনের মূল বিষয় ছিল প্যারাক্লিনিক্যাল অনুষদের সকল বিভাগগুলোকে একিভূত করা, এই বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে বায়োকেমিস্ট্রি, ল্যাবরেটরি মেডিসিন, মাইক্রোবায়োলজি, প্যাথলজি ও ভাইরোলজি। বাংলাদেশের রোগীদের রোগ নির্ণয়ের জন্য এই বিভাগগুলো নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সঠিক চিকিৎসা নির্ভর করে সঠিক রিপোর্ট এর উপরে। আর তাই সঠিক রিপোর্ট তৈরি করার জন্য তারা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এই বিভাগগুলোর বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজগুলো ও হাসপাতালে পরিচালনা করার লোকবলের অনেক অভাব রয়েছে।
তাই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই জেলা, এমনকি উপজেলা পর্যায়ে যদি ল্যাবরেটরি বিশেষজ্ঞ থাকে তাহলে রোগীদের ঢাকায় আসার প্রয়োজন হবে না। বর্তমানে ৩৭টি সরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আছে, বেসরকারী পর্যায়ে রয়েছে ৬৭টি মেডিক্যাল কলেজ। তাতে ছাত্র-ছাত্রী পড়ানোর মতো শিক্ষকসহ প্রয়োজনী জনবল পরিমাণ মতো নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোড় গোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। তবে দোড় গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে হলে অবশ্যই প্রান্তিক পর্যায় থেকেই সঠিক রিপোট তৈরি করে সঠিক রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। আর এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হলে প্যারাক্লিনিক্যাল অনুষদের সকল বিভাগগুলো যেমন বায়োকেমিস্ট্রি, ল্যাবরেটরি মেডিসিন, মাইক্রোবায়োলজি, প্যাথলজি ও ভাইরোলজি বিষয়ে শিক্ষকসহ প্রয়োজনীয় জনবল তৈরি ও নিয়োগের কোনো বিকল্প নাই।
Leave a Reply