সারাক্ষণ ডেস্ক
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচি ‘বাংলা ব্লকেডে’র কারণে গতকাল স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী শহর। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবারও শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচি চলবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববারের বাংলা ব্লকেডে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঢাকার বড় অংশ। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে শাহবাগ থেকে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য তাঁরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘট কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়ে বিকেল পাঁচটার দিকে বিদেশি অতিথিবাহী মাইক্রোবাস আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। ‘গো ব্যাক, গো ব্যাক’ স্লোগানে গাড়িটি পিছু হটে।
একদল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বিকেলে রাজধানীর চানখাঁরপুল মোড় অবরোধ করেন। এতে ওই সড়ক দিয়েও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপরও। সেখানেও তীব্র যানজট তৈরি হয়। বেলা পৌনে দুইটা থেকে রাজধানীতে যান চলাচলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন ঢাকা কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে দুপুর ১২টা থেকেই তাঁরা সেখানে জড়ো হতে থাকেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে অবরোধ তুলে নিয়ে তাঁরা কলেজে ফিরে যান। ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীরা রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন। আগারগাঁওয়ে সড়ক অবরোধ করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের সফরে আজ সোমবার চীনে যাচ্ছেন। তার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে কোনো চুক্তি হচ্ছে না। তবে অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাত, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল ইকোনমি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোসহ প্রভৃতি বিষয়ে ২০ থেকে ২২টি সমঝোতা স্মারকে সই হতে পারে। গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, চীন আমাদের বড় উন্নয়ন সহযোগী। চীনের অনেক বিনিয়োগ আছে। তারা আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে। উন্নয়ন ইস্যুটি প্রধানমন্ত্রীর সফরে প্রধান অগ্রাধিকার থাকবে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতাও অগ্রাধিকার পাবে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চীনের সহায়তা কামনা করবে ঢাকা। চীন থেকে বাজেট সহায়তা নেওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাজেট সহায়তা নয়, বরং চীনের সঙ্গে ব্যবসা ও অর্থনৈতিক খাতে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ সহযোগিতার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিস্তারিত তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে যাচ্ছেন। তিনি সোমবার (আজ) বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটযোগে ঢাকা ত্যাগ করবেন এবং চীনের স্থানীয় সময় বিকেল ৬টায় বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনারসহ যথাযথ অভ্যর্থনা জানানো হবে।
আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্ করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী সাংগ্রিলা সার্কেলে অনুষ্ঠেয় ‘সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না’ শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নেবেন। বাংলাদেশের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল সম্মেলনে যোগ দেবে। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী চাইনিজ পিপল’স পলিটিক্যাল কনসাল্টেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) ১৪তম জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুনিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। বিকেলে ঐতিহ্যবাহী তিয়েনআনমেন স্কয়ারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। রাতে তিনি বেইজিংস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় গভীর রাতে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সোমবার ভোর ৪টার জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সোমবার রাত ৩টার দিকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় খালেদা জিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্সে করে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এর আগে গত ২ জুলাই এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় বিএনপি চেয়ারপারসনকে। গত ২২ জুন গভীর রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেদিন রাতে মেডিকেল বোর্ড বৈঠক করে তার হৃৎপিণ্ডে পেসমেকার বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ওইদিন বিকালেই যন্ত্রটি সফলভাবে স্থাপন করা হয়।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।
বিদেশী উৎস থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী ঋণ না পেয়ে দেশের ব্যাংক খাতনির্ভরতা বাড়িয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদির চেয়ে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাড়ছে বেশি হারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, সদ্য বিদায়ী অর্থবছর শেষে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। এ ঋণের ১৮ দশমিক ২ শতাংশই পরিশোধ করতে হবে মাত্র এক বছরের মধ্যে। অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে সরকারের এমন ঋণের পরিমাণ ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জুনে এসে বিদেশী উৎস থেকে সরকারের নেয়া ঋণের স্থিতি ৭ লাখ ৯৯ হাজার ৫০৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে। আর ব্যাংক খাতসহ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। ডলারের হিসাবে দেশী-বিদেশী উৎস থেকে নেয়া ঋণ এখন ১৫ হাজার ৬৮৪ কোটি বা ১৫৬ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। জিডিপির অনুপাতে সরকারের নেয়া ঋণ ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ঋণের বিপরীতে সরকারকে এখন জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশের সমান সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
প্রতি তিন বছর পরপর সরকারের ‘মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল’ প্রণয়ন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী তিন অর্থবছরের ঋণ ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত কৌশলপত্রটি প্রকাশ করা হয়েছে ৩০ জুন। তাতে সরকারের ঋণ স্থিতি, ব্যয় ও ঝুঁকিসংক্রান্ত কৌশল কী হবে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। কৌশলপত্রে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া ঋণের মেয়াদপূর্তির সময় কম। এক বছরে ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ ঋণের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার কারণে এক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। ঋণ পরিশোধের চাপ কমাতে অভ্যন্তরীণ ঋণের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার সময় বাড়ানো প্রয়োজন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রতি বছরই সরকার বিরাট অংকের ঘাটতি রেখে বাজেট ঘোষণা করছে। তাতে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে, সেটিও পূর্ণ হচ্ছে না। এ কারণে অর্থবছর শেষে ঘাটতি বাজেটের আকার আরো বড় হচ্ছে, যা পূরণ করা হচ্ছে দেশী-বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নিয়ে। এতে সরকারের ঋণের স্থিতি দ্রুতগতিতে বাড়ছে। সরকার নিজেই ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের মতো দুষ্টচক্রে আটকে গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুন শেষে সরকারের মোট ঋণ স্থিতি ছিল ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা নেয়া হয়েছিল অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। বাকি ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকার ঋণ ছিল বিদেশী উৎসের। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ২০২৩ সালের জুনে এসে সরকারের মোট ঋণ স্থিতি ১৬ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। চলতি বছরের জুন শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার ৩৫ কোটি টাকায়। তবে এক্ষেত্রে মার্চ পর্যন্ত ঋণের প্রকৃত তথ্য নেয়া হলেও পরবর্তী তিন মাসে ঋণের তথ্য প্রাক্কলন করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অর্থনীতিতে “রোলওভার” বলে একটি কথা আছে। সরকারের পক্ষে দেশের ব্যাংক খাত থেকে নেয়া ঋণ রোলওভার করা সহজ। ট্রেজারি বিল-বন্ডের অকশন ডেকে মেয়াদ বাড়িয়ে নিলেই হলো। এক্ষেত্রে কেবল ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাজস্ব আয় দিয়ে এত পরিমাণ ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা সরকারের নেই। এজন্য ঋণের মেয়াদ নবায়ন করা হবে। সরকার আগে বিল-বন্ডের বিপরীতে ৬ শতাংশ সুদ দিলে সেটি এখন ১২ শতাংশ দিতে হবে। কিন্তু বিদেশী ঋণের ক্ষেত্রে রোলওভার করা অনেক কঠিন। এক্ষেত্রে সরকারকে যথাসময়ে বিদেশী ঋণ পরিশোধ করতে হবে।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সরকারকে আগামী এক বছরের মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া ঋণের ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে পরিশোধ করতে হবে এমন ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। এ ঘাটতি পূরণে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকার ঋণ নেয়া হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এক্ষেত্রে দেশের ব্যাংক খাত থেকে নেয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ। সে ক্ষেত্রে পরিশোধ করতে হবে এমন ঋণ ও নতুন মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ৪ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশলপত্রে বলা হয়, সরকারের বেশির ভাগ ঋণ স্থানীয় মুদ্রায় থাকার পাশাপাশি বিদেশী ঋণ পরিশোধের সময়সীমা দীর্ঘ হওয়ায় বিদ্যমান ঋণ পোর্টফোলিওর ঝুঁকি মাঝারি মাত্রার। সুদের হার বেশি হওয়ায় বিদেশী ঋণের তুলনায় স্থানীয় ঋণ বেশি ব্যয়বহুল। তবে বিদেশী ঋণের প্রতি উচ্চ নির্ভরতার কারণে বিনিময় হারজনিত ঝুঁকি সময়ের সঙ্গে বেড়ে গেছে। এক বছরে ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ ঋণের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় এক্ষেত্রে পরিশোধের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। ঋণ পরিশোধের চাপ কমাতে অভ্যন্তরীণ ঋণের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার সময় বাড়ানো প্রয়োজন।
সরকারের নেয়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণের সুদহার নির্ধারিত। তবে স্থানীয় উৎসের ক্ষেত্রে ঋণ নবায়নের সময় সুদহার নতুন করে নির্ধারণের গড় সময়সীমা ৩ দশমিক ৮ বছর, যেখানে বিদেশী ঋণের ক্ষেত্রে এ সময় ৮ দশমিক ৮ বছর। ফলে স্থানীয় ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। এক্ষেত্রে নির্ধারিত সুদহারের দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ ঋণের অনুপাত বাড়ানো প্রয়োজন বলে কৌশলপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
সদ্যবিদায়ী জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ হয়েছে। এর আগে মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। একই সঙ্গে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও তিন মাস ধরে তা ১০ শতাংশের বেশি আছে। জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ। গতকাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে মূল্যস্ফীতির এই চিত্র পাওয়া গেছে।
বিবিএসের তথ্যে দেখা গেছে, মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ, আগের মাস এপ্রিলেও তা ছিল দুই অঙ্কের ঘরে, ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। এদিকে জুন মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ
হয়েছে। বিবিএসের হিসাব অনুসারে, আগের মাস অর্থাৎ মে মাসে এই মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। এদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষকে ভুগতে হচ্ছে বেশি। জুনে শহর এলাকায় যেখানে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ, গ্রামে এই হার ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।
গ্রামাঞ্চলে জুনে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। অন্যদিকে শহর এলাকায় খাদ্য খাতে ১০ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে।
ওদিকে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭২ শতাংশের মানে হলো গত বছরের জুন মাসে যেসব পণ্য ও সেবা ১০০ টাকায় কেনা গেছে, চলতি বছরের জুনে সেই একই পণ্য ও সেবা কিনতে একজন ভোক্তাকে ১০৯ টাকা ৭২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় এই এক বছরে বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের কষ্ট সবচেয়ে বেশি বাড়ে। তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।
দুই বছর ধরে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এই পুরো সময় ধরে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি রয়েছে। এই কঠিন সময়েও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী হাসান মাহমুদ আলী। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে এবং রাজস্ব নীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে ফ্যামিলি কার্ড, ওএমএস ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন ছিল। পদক্ষেপ নিতে দেরি করায় এখন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে।
Leave a Reply