স্কেটস, বগলে ছেলেটা-৬
নীল ফলক অআঁটা ‘পাবলিক টেলিফোনে’ যখন সে পৌছল, দুটি মেয়ে তখন সেখানে দাঁড়িয়ে। একটি মেয়ে বোটে, চাঁদ-পানা গোল মুখ হাত দিয়ে মুখ আড়াল করে দ্রুত কথা বলে যাচ্ছিল রিসিভারে। অন্য মেয়েটি লম্বা, ঢিপ-ঢিপ চোখ, সখীর কানে অনবরত কী ফিস-ফিস করছিল আর হাসছিল।
‘কী বলছে রে? কী বলছে?’ এতই জোরে সে ফিস-ফিস করছিল যে তা যাতে অন্যপ্রান্তে শোনা না যায় তার জন্যে হাত দিয়ে রিসিভার চাপা দিতে হল সইকে। ‘সিনেমায় যেতে ডাকছে,’ চাঁদবদনী বললে তার কৌতূহলী সইকে। সখী ফের হি-হি করে উঠল এবং ফিস-ফিস করলে আরো জোরে, প্রায় ফিসফিসিয়ে চে’চানোর সামিল:
‘আর তুই বল যাব না! বলে দে যাব না!’ প্রত্যেকটা কথাই সে বলছিল দু’বার, যেন ভয় পাচ্ছিল দু’বার না বললে চাঁদবদনীর কানে যাবে না।
কয়েক সেকেন্ড ছেলেটা চুপ করে ওদের লক্ষ করলে। তখনো দম পাচ্ছিল না সে।
অবশেষে সুস্থির হল। রেগে বললে।
‘শেষ আমায় অ্যাম্পলেন্স ডাকতে হবে।’
মতোন করারতো। অন্তা ছেলেটার দিকে দু’ সখী চাইলে আক্রোশের দৃষ্টিতে আর যেটি হাসছিল আর ফিস-ফিস করছিল সেটি বিদ্রূপ করে বললে: ‘জানি তোর ‘অ্যালেন্স’। স্ফেটিঙে যেতে চাস তাই বল!’
এতক্ষণে ছেলেটার খেয়াল হল যে তার বগলে স্কেটস্ জোড়া: প্রতি মূহতে তা আজ তার জ্বালাটার ঘটিয়েছে। মেয়েদুটির একেবারে সামনাসামনি হয়ে সে জোরে ধমক দিলে:
‘থামাও বলছি, এক্ষুনি!!
‘সেটি হচ্ছে না!’ হাত দিয়ে রিসিভার চেপে খে’কিয়ে উঠল চাঁদবদনী, তারপর মুহূর্তের জন্যে হাত ফাঁক করে বললে, ‘কে একটা অসভ্য এসে আমাদের জনালাচ্ছে।
সবুজ চোখ হয়ে উঠল হিংস্র, কণ্টকিত। ওদিকে একটা লোক মরছে, আর এরা এদিকে হি-হি চালাচ্ছে, ন্যাকামি করছে। ঢিপ-চোখাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ছেলেটা রিসিভার কেড়ে নিলে তার সখীর কাছ থেকে। আচমকা এই কাণ্ডটায় মেয়েদুটো। চিল্লিয়ে উঠে ছুটে পালাল।
‘নচ্ছার কোথাকার!’ চে’চালে একজন।
‘অসভ্য!’ সায় দিলে দ্বিতীয়া।
কানে রিসিভার ঠেকালে ছেলেটা। অচেনা একটা ছেলের গলা শোনা গেল:
‘তাহলে তোমরা সিনেমায় আসছ তো? চুপ করে আছ যে?’
ছেলেটার মনে হল, কথাটা যেন ভেসে আসছে অন্য এক জগত থেকে নিরুদ্বেগ, কল্যাণময় এক জগত।
হাতলে চাপ দিলে সে, সঙ্গে সঙ্গেই চুপ করে গেল সিনেমায় নিমন্ত্রণকর্তা।
০৩ নম্বরে ডায়াল করল ছেলেটা।
রিসিভারে শোনা গেল এক তরুণীর গলা:
‘অ্যাম্বুলেন্স। বলুন-‘
ব্যাপারটার আকস্মিকতায় অপ্রস্তুত হয়ে ছেলেটা ভেবে পেল না কী বলে শুরা করবে। কণ্ঠস্বর অধীর হয়ে আবার বললে।
‘অ্যাম্বুলেন্স! কী হল?’
‘মানে, একটা লোকের অবস্থা খুব খারাপ,’ বললে ছেলেটা।
‘নাম?’ জিজ্ঞেস করলে নির্বিকার কণ্ঠস্বর।
‘কার নাম?’
‘রুগীর।’
‘রুগী নন, উনি জখম হয়েছেন।’
‘কোথায় জখম হলেন?’
ফ্রন্টে, ওরেলের কাছে।’
অ্যাম্বুলেন্সের লোকেরা নিশ্চয় এত সব বিদঘুটে কথা শুনতে অভ্যন্ত যে ‘ওরেল’ এখানে এল কোথেকে সেটা জিজ্ঞেস করারও প্রয়োজন বোধ করল না।
অধীর কণ্ঠস্বর জিজ্ঞেস করলে:
‘লোকটা রয়েছে কোথায়?’
‘বাড়িতে।’
‘ঠিকানা?’
থতমত খেলে ছেলেটা। ঠিকানাটা তো তার জানা নেই। সেই কথাই সে বললে:
‘ঠিকানা জানি না।’
‘তাহলে অ্যাম্বুলেন্স ডাকছিস যে? যাবে কোথায়, গাঁয়ে তোর ঠাকুর্দার কাছে? ঠিকানা জেনে ফোন করিস।’
কানেকশন বন্ধ হবার শব্দ হতে লাগল রিসিভারে। ‘অ্যাম্পলেন্স’ রিসিভার নামিয়ে রাখল। ছেলেটাও রিসিভার নামিয়ে রেখে চেয়ে দেখলে। মেয়েদুটি নেই। নিশ্চয় এই অসভ্য ঢ্যাঙা ছেলেটা সত্যি কথাই বলেছিল দেখে তারা চুপি-চুপি কেটে পড়েছে। অন্য কোনো পাবলিক টেলিফোনে গেছে নাকি?..
বেরিয়ে এল ছেলেটা। নিজের অসহায়তায়, ছুটে আসার সময় বাড়ির নম্বরটা খেয়াল করে নি বলে নিজের ওপরেই রাগ হচ্ছিল তার। তাছাড়া গলির নামটাও সে সঠিক জানে না: গন্তানি অথবা দেগতিয়ারুনি এই রকম কিছু একটা হবে…. এখন একটাই উপায়- ছুটে গিয়ে ঠিকানাটা জেনে আসা। ছটতেই যাচ্ছিল ছেলেটা, এমন সময় দূর থেকে কানে এল অ্যাম্বুলেন্স গাড়ির হন।
Leave a Reply