পিয়ের পল দারাক ও ভেলাম ভান সেন্দেল
অনুবাদ : ফওজুল করিম
বঙ্গদেশে প্রথমে যে ধরনের নীল প্রস্তুত করা হত উৎকর্ষতার বিবেচনায় তা ছিল সেন্ট ডোমিঙ্গোর মতই। আজকাল বাংলাদেশে যে রকম ও যত রকমের নীল প্রস্তুত হয় সেগুলো ছিল তার থেকে অনেক নিচু মানের। এখনকার এই উৎকর্ষতার মূলে রয়েছে। বিশ বছর ধরে হরেকরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পুঁজি বিনিয়োগের ফল। বঙ্গদেশে উৎপাদিত নীলের উৎকর্ষতার মান এখন যে পর্যায়ে উপনীত হয়েছে তাতে কেউ যদি বলে এ নীল সর্বোতকৃষ্ট তা একেবারে অসমিচীন হবে না।
নীল উৎপাদনে বাংলার আজ এমন স্থান যে গোটা দুনিয়ার নীলের চাহিদার একটা বড় অংশ সে একাই মেটাতে পারে। মাত্র তিরিশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ নীলের জমির পরিমাণ বার্ষিক দশ লক্ষ বিঘায় উন্নীত করেছে। এতে চাষ করার জন্য প্রয়োজন হয় ১,০১,৬৬৬টি লাঙ্গল আর ২৫ হাজার জোড়া বলদ। এতে অতিবাহিত হয় ৮০ লাখ শ্রম-দিন। এইসব সম্মিলিত উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ এখন বছরে নীল উৎপাদন করে ৮০ হাজার মণ নীল।
নীলচাষের জমির বৈশিষ্ট্য
বঙ্গদেশে নীলের জমি দুই প্রকার: এক রকম হল বালুকাঘটিত আর এক রকম হল এ্যালুমিনিয়ামঘটিত। এ ধরনের মাটি মেটেল নামে পরিচিত। প্রতি বছর বন্যার ফলে মাটিতে পলিমাটির যে আস্তর জমে তাই বালুকাঘটিত। এই পলিমাটিতে কতটা পুরু হয়ে জমবে তার ঠিক নেই। মাটিতে বালির চাইতে পলির পরিমাণ বেশি হলে সে মাটি নীল চাষের জন্য যথোপযুক্ত। এ রকম মাটিতে লক্ষ্যাদি বাড়ে দ্রুত গতিতে। বিশেষভাবে নীল মওশুমের শেষদিকে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে বপণ করলে ফলতে বেশি দিন লাগে না। সাধারণতঃ এই বন্যা প্রভাবিত মাটি নীলচাষের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত।
পলি আবৃত মাটিতে যত দ্রুত ফলন ঘটে এ্যালুমিনিয়ামঘটিত মাটিতে ততটা নয়। কিন্তু নীল গাছই হোক বা অন্য রঞ্জকের গাছই হোক এ্যালুমিনিয়ামঘটিত মাটিতে ফলন হয় বেশি। এই দুই ধরনের মাটির আর একটি পার্থক্য হল অধিক বৃষ্টিপাত ঘটলে মেটেল মাটির চাইতে বালিকাঘটিত মাটিতে ফলন হয় ভাল, আবার শুকনো মওশুমে ফলন ভাল। নীল রঞ্জকের উৎপাদনের ক্ষেত্রে মেটেল মাটি আর বালিমাটির ফলনের পার্থক্য হল ছয় আর চার। এজন্যে চালাক নীলচাষী এই দুই রকম জমিতেই নীলের চাষ করে।
Leave a Reply