সারাক্ষণ ডেস্ক
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক, তবে তাঁদের চলমান আন্দোলন অযৌক্তিক বলে মনে করছে সরকার ও আওয়ামী লীগ। এর ব্যাখ্যায় সরকারের সূত্রগুলো বলছে, বিষয়টি যখন আদালতে বিচারাধীন, তখন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আদালতে আইনজীবী দিয়ে তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন করার বা পক্ষভুক্ত হওয়ার পরামর্শ সরকারের। কারণ, সরকার কোটার বিষয়ে আদালতের মাধ্যমেই একটা সমাধান চাইছে। সে জন্য আদালতের প্রক্রিয়া দ্রুত করার কোনো সুযোগ থাকলে, সে উদ্যোগও সরকার নেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।এতে এসব বিষয় আলোচনা হয়েছে বলে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্য চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন্নাহার।
আজ মঙ্গলবার গণসংযোগ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি চলমান ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘটের কর্মসূচি চলবে। তবে পরদিন বুধবার আবারও অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। আগামীকাল সংবাদ সম্মেলনে সেই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এদিকে চার মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এমন আলোচনাও এসেছে যে, কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাজনীতি ঢুকে পড়ছে। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো সক্রিয় হয়েছে। দলগুলো এই আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে। তবে শঙ্কা থাকলেও এবং কোনো রকম উসকানি দেওয়া হলেও সরকার সতর্ক থাকবে। এ ছাড়া প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় শিক্ষার্থীদের মিছিল ও অবস্থানের কারণে জনদুর্ভোগ হচ্ছে।
২২তম ইন্দো-রাশিয়া সামিটে যোগ দিতে দুই দিনের রাশিয়া সফরে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার (৮ জুলাই) তিনি মস্কো বিমানবন্দরে পৌঁছান। রাশিয়া সফরের পর মোদি যাবেন অস্ট্রিয়ায়। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে নরেন্দ্র মোদির এই সফরকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণভাবে দেখছে পুরো বিশ্বের কূটনীতি। ভারতে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর এটি মোদির প্রথম রাশিয়া সফর।
মস্কো বিমানবন্দরে মোদিকে স্বাগত জানান রাশিয়ার প্রথম ডেপুটি প্রাইমমিনিস্টার ডেনিস ম্যানটুরোভ। সেখানে মোদিকে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। একই গাড়িতে মোদি ও মানটুরোভ এরপর পৌঁছান মস্কোর হোটেলে। সেখানে মোদিকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা। বর্ণাঢ্য আয়োজনে নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানানো হয়।
মোদির রাশিয়া সফর নিয়ে এখন পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে গত বৃহস্পতিবার ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি জানান, ইউক্রেন আক্রমণের বিষয়ে একজোট হয়ে রাশিয়াকে জবাবদিহি করানোর বিষয়ে তার দেশ ভারতের সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ রাখছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিষয়টা স্পষ্ট যে মোদি ও ভ্লাদিমির পুতিনকে একসঙ্গে দেখে যুক্তরাজ্য বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেউই খুশি হবে না। কারণ ওই দুই দেশই মনে করে, ইউরোপে অস্থিরতার কারণ হলো ইউক্রেনে রুশ হামলা এবং এর জন্য দায়ী পুতিন।
গত রোববার মোদি এবং পুতিনের মধ্যে আলোচ্য বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ রাশিয়ার সরকারি সংবাদ চ্যানেল ভিজিটিআরকেকে বলেন, ‘এটা (মোদির) সরকারি সফর। আমরা মনে করি, আলোচ্যসূচির বাইরের বহু বিষয় নিয়েও দুই রাষ্ট্রপ্রধান কথা বলবেন।’রুশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলেও জানান তিনি।
টিভি চ্যানেলের সাক্ষাত্কারে পেশকভকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পশ্চিমা বিশ্ব মোদির রাশিয়া সফরকে কীভাবে দেখছে? জবাবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলেন, ‘ওরা হিংসায় জ্বলছে। তার মানে ওরা নিবিড়ভাবে এই সফরের দিকে নজর রাখছে। তাদের এই নজরদারিই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে।’
বিবিসি বলছে, মোদির রাশিয়া সফর একাধিক পশ্চিমা দেশের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আর কী অর্থ হতে পারে, সেই বিষয়ে সন্দিহান পশ্চিমা দেশগুলো।
লন্ডনের কিংস কলেজে সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের প্রফেসর ক্রিস্টোফ জাফরেলট জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির রাশিয়া সফরের ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে।
দেশের ছয় জেলার ওপর দিয়ে দুপুরের মধ্যে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ভোর ৫টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের নদীবন্দরগুলোর জন্য দেয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদের সই করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কুমিল্লা, নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্বদিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ০১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।’
এদিকে আবহাওয়া অফিসের অপর এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের সব বিভাগে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
সামনের দিনগুলোয় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যাবে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। বাংলাদেশের নামও এ তালিকায় রয়েছে। এফএও মনে করছে, বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরো নাজুক অবস্থানে ঠেলে দিচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া। রোহিঙ্গা সংকট এ চাপকে আরো বাড়িয়ে তুলছে।
এফএওর চলতি মাসে প্রকাশিত ‘ক্রপ প্রসপেক্টস অ্যান্ড ফুড সিচুয়েশন’ শীর্ষক ত্রৈবার্ষিক প্রতিবেদনে এ পর্যবেক্ষণ উঠে আসে। এর সঙ্গে একমত পোষণ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকট দীর্ঘ সময় ধরে থাকলে তা সমাজে শ্রেণীগত অবনমন নিয়ে আসে। নিম্ন আয়ের মানুষ পরিণত হয় দরিদ্রে। সর্বশেষ করোনার সময়ও এমন দেখা গিয়েছিল। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বড় অবনমন ঘটাচ্ছে। আবার অর্থ সংকটের কারণে সরকারের পক্ষেও সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলিয়ে সামগ্রিক খাদ্যনিরাপত্তাই চ্যালেঞ্জে পড়ে যাচ্ছে।
দীর্ঘ সময় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দুই অংকের ঘরে থাকায় প্রান্তিক মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় বড় অবনমন ঘটেছে উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশের মানুষের বড় একটি অংশ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় পড়ে গেছে। সরকার ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে বা খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি করলেও তা সবার জন্য যথেষ্ট নয়। আবার অর্থ সংকটে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী সম্প্রসারণের পথেও হাঁটতে পারছে না সরকার। চাহিদা, আমদানি ও উৎপাদনের তথ্য-উপাত্তের মধ্যেও বিভ্রাট রয়েছে। ফলে সঠিক নীতি গ্রহণ করা যাচ্ছে না। সরকারকে এখন বাজার ব্যবস্থাপনার দিকেও জোরালোভাবে নজর দিতে হবে।’
দেশের অর্থনীতিতে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আশঙ্কা তৈরি করছে রিজার্ভ তথা ডলার সংকট এবং টাকার ক্রমাগত অবমূল্যায়ন। আমদানি নিয়ন্ত্রণ প্রভাব ফেলছে শিল্প উৎপাদনে। কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করতে বেগ পেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ডলারের অভাবে ব্যাংকগুলোয় সময় ও প্রয়োজনমতো এলসি খুলতে পারছেন না তারা। একই সময়ে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগেও। এ দুই বছরে রিজার্ভের ক্ষয় থামাতে টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন ঘটানো হয়েছে। মুদ্রাটির বিনিময় ৮৪ থেকে বেড়ে এখন ১১৮ টাকা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এছাড়া দুই বছর ধরে দেশের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে। এ সময় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা গত এক যুগে সর্বোচ্চ।
এসব অর্থনৈতিক সংকট ও মূল্যস্ফীতি দেশের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতাকে আরো নাজুক করে তুলছে বলে এফএওর পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে আরো উঠে আসে, এ সংকটকে আরো ঘনীভূত করে তুলছে আবহাওয়ার বিরূপ তথা চরমভাবাপন্ন আচরণ। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেখা গেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে মিয়ানমার থেকে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সামগ্রিক খাদ্যনিরাপত্তাকে আরো চাপে ফেলে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গড়ে দেশের ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, দেশের অতিদরিদ্রদের মধ্যে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার হার ৭০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। দরিদ্রদের মধ্যে এ হার ২২ দশমিক ৯ শতাংশ আর মধ্যবিত্তদের মধ্যে ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
বগুড়ায় বাস-কাভার্ডভ্যান মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন ৮ জন। সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বনানীর লিচুতলার ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন-কাভার্ডভ্যানের চালক বরিশালের হিজলা গ্রামের হৃদয় (৩০), সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের জামাল হোসেন (৩৫), শামীম হোসেন (৪০) ও অজ্ঞাত এক নারী।
কুন্দুরহাট হাইওয়ে থানার ওসি আব্বাস আলী জানান, ‘ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নওগাঁগামী শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।’
তিনি আরও বলেন,‘নিহতদের মরদেহ শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহতরা হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসাধীন আছেন।’
Leave a Reply