দুপুরে গ্রেট হলে চীনা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দেবেন বাংলাদেশ সরকারপ্রধান। বিকেলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিপাক্ষিক এই সফর শেষে বুধবার (১০ জুলাই) রাতে দেশে ফিরবেন তিনি।
সারাক্ষণ ডেস্ক
রেলওয়ের একটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গত সোমবার গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ জনের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তা-কর্মচারী ছয়জন। এর মধ্যে পাঁচজন এখনো কর্মরত। আরেকজনকে ১০ বছর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।
যে পাঁচজন এখন কর্মরত রয়েছেন, তাঁদের সবার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। এর মধ্যে তিনজনের ক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছিল পিএসসি। যে কারণে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। একজনকে ঢাকার প্রধান কার্যালয় থেকে সিলেটে বদলি করা হয়। আরেকজনকে বরখাস্ত করা হলেও আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি দায়িত্ব ফিরে পান।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া সাংবিধানিক সংস্থা পিএসসির বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছেন উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম। আরও আছেন সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, কর্মচারী (ডেসপাচ রাইডার) মো. খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম। এ ছাড়া রয়েছেন পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী।
এই ছয়জনের মধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার বিষয়টি পিএসসির নিজস্ব তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৪ সালে চাকরিচ্যুত হন সৈয়দ আবেদ আলী। বরখাস্ত হয়েছিলেন খলিলুর রহমান। বদলি করা হয়েছিল জাহাঙ্গীর আলমকে। আর পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হয়নি আবু জাফরকে।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় পিএসসির যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম এসেছে, দেখা যাচ্ছে তাঁরা আগেও এ ধরনের গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন সময় পিএসসির নিজস্ব অনুসন্ধান ও তদন্তেই তা বেরিয়ে এসেছে। পিএসসির ভেতরেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটি চক্র কাজ করছে। এর মধ্যে কেউ ধরা পড়েছেন, কেউ এখনো আড়ালে রয়ে গেছেন। বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক সংস্থা পিএসসি কেন ফৌজদারি মামলা করেনি, সেই প্রশ্নও তুলেছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় অপরাধ স্বীকার করে গতকাল মঙ্গলবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ছয়জন। এর মধ্যে পিএসসির সাবেক ও বর্তমান কর্মচারীই তিনজন। তাঁরা হলেন সৈয়দ আবেদ আলী, খলিলুর রহমান ও সাজেদুল ইসলাম।
বেইজিংয়ের ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’-এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। এখানে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
বুধবার (১০ জুলাই) সকালে গ্রেট হলে পৌঁছালে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। শুভেচ্ছা বিনিময় এবং দুই দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরিচয় পর্বের পর সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অভিবাদন মঞ্চে যান চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং।
অভিবাদন মঞ্চে শেখ হাসিনা ও লি কিয়াং-কে সশস্ত্র সালাম দেয় চীনের সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল। এ সময় দু’দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানিয়ে তোপধ্বনি দেওয়া হয়। পরে দুই প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর প্যারেড পরিদর্শন করেন।
শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় ভাবে অভ্যর্থনা জানানোর পর দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন দুই প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা এবং লি কিয়াংয়ের মধ্যেকার বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে চাচ্ছেন এবং তার আগ্রাসন ইউক্রেনে থামবে না। তাই ইউক্রেনই পুতিনকে থামাতে যা করা লাগবে এবং তা করতে হবে।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ন্যাটোর ৭৫তম শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
বাইডেন বলেন, পুতিন ইউক্রেনকে সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত করতে এবং ইউক্রেনের সংস্কৃতি ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চান।
বাইডেনের এই বক্তব্য ওয়াশিংটন ডিসির রোনাল্ড রিগ্যান ইনস্টিটিউটে ন্যাটোর সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া হয়। এখানে ১৯৪৯ সালে ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই সম্মেলন বাইডেনের রাজনৈতিক জীবনের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নির্বাচনি বিতর্কে ভালো করতে না পারায় তিনি চাপের মুখে আছেন। নিজের দলের সমর্থকদের বিশ্বাস ফেরাতে এই সম্মেলনে বাইডেনকে প্রমাণ করতে হতো যে, তিনি এখনো নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
বাইডেন ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর আইনপ্রণেতাদের প্রশংসা করে বলেন, ন্যাটো আগের চেয়ে এখন আরও শক্তিশালী। তিনি উল্লেখ করেন, ন্যাটোর ৩২ সদস্য দেশের মধ্যে ২৩টি দেশ নিজেদের মোট দেশজ উৎপাদনের ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করতে পারছে। এভাবে তিনি ট্রাম্পের সমালোচনারও জবাব দেন। ট্রাম্প বলেছিলেন, ন্যাটোর যেসব সদস্য দেশ তাদের প্রতিরক্ষা খাতে যথাযথ ব্যয় করতে পারে না, সেসব দেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসবে না।
বাইডেন আরও ঘোষণা দেন- যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, রোমানিয়া ও ইতালির সঙ্গে মিলে ইউক্রেনের জন্য আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও কৌশলগত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাঠাবে।
এদিকে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিনিধি পরিষদের আইনপ্রণেতারা ও সিনেট সদস্যরা ওয়াশিংটনে পৃথক বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকে বাইডেনকে প্রার্থী রাখা নিয়ে মতবিরোধ বিদ্যমান ছিল। বাইডেন বৃহস্পতিবার একক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে, যা নিয়ে সবার নজর এখন সেখানে।
ন্যাটো সম্মেলনে বক্তব্যে বাইডেন ন্যাটোর গুরুত্ব ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেন এবং ইউক্রেনকে সমর্থনে অটল থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ১২৭-এর (বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ ১৯৭২) বলে ১৯৭২ সালে পরিপূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে যাত্রা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুরু থেকেই দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বিবেচিত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নামেই, বাস্তবে এটি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান।’
এ বিষয়ে আইএমএফের বক্তব্য হলো বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ-১৯৭২-এর ১০, ১৫ ও ৭৭ ধারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য অর্জনে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণের সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিশেষ করে মধ্যমেয়াদে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পথে এটি অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে। এছাড়া আদেশটির ৮২ নম্বর ধারাও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরকারের নিয়ন্ত্রণের অধীন করে তুলেছে।
এর মধ্যে ধারা ১০ অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা গভর্নরের ওপর ন্যস্ত। আর সরকার চার বছরের জন্য যে কাউকে গভর্নর নিযুক্ত করতে পারেন। মেয়াদ শেষে তার পুনর্নিয়োগের সুযোগও আছে। আর আদেশের ১৫ (১) ধারায় বলা হয়েছে, গভর্নর বা ডেপুটি গভর্নর যদি এমন কোনো কাজ করে থাকেন, যাতে তার ওপর প্রদত্ত আস্থা লঙ্ঘিত হয় অথবা যদি তার স্বীয় পদে বহাল থাকাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বার্থের পরিপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা যায়, তাহলে সরকার তাকে অপসারণ করতে পারবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক তথা দেশের ব্যাংক খাতের নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদ। আইন অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ সদস্যদের নিয়োগ দেয় সরকার। আর বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশের ৭৭ ধারায় দেয়া ক্ষমতাবলে সরকার চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ বাতিলও করে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের বাধ্যবাধকতা পালনে ব্যর্থ হয়েছে, এমনটি মনে করলেই হলো। আদেশের ৮২ (২) ধারা অনুসারে, বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যত বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মীদের বাজেট, বেতন এবং ক্ষতিপূরণও সরকারের অনুমোদনসাপেক্ষে হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ-১৯৭২-এর ৩৮ (এ) ধারা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক সংসদের কাছে দায়বদ্ধ। যদিও গত এক যুগে কোনো গভর্নর সংসদের জবাবদিহিতার মুখে পড়েছেন, এমন নজির দেখা যায় না। এ অবস্থায় আইনি সীমাবদ্ধতাগুলো পর্যালোচনার ভিত্তিতে আইএমএফ বলছে, নীতিগত সমন্বয় জরুরি হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসনকে অগ্রাধিকার দেয়া বাঞ্ছনীয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য কৌশলগত পরামর্শ দিয়ে গত ২৮ জুন ‘টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিপোর্ট’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইএমএফ। ২০২৩ সালের ১৩-১৭ আগস্ট সংস্থাটির সাউথ এশিয়া রিজিওনাল ট্রেনিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স সেন্টারের (এসএআরটিটিএসসি) প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শনের পর সে আলোকে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এ প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে আইনি সীমাবদ্ধতাগুলো তুলে ধরা হয়। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান কার্যপদ্ধতির মূল্যায়ন করে বেশকিছু সুপারিশও করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইনে যে স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন বাংলাদেশ ব্যাংকে দেয়া হয়েছে, সেটিও কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পাশ কাটিয়েও এখন দেশের ব্যাংক খাতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হচ্ছে।
১৯৯৩-২০০৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ব্যাংক খাত পরিচালনা ও নীতি প্রণয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা শুধু আইনের বিষয় নয়। যে আইনগুলো আছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন কতটা হচ্ছে, সেটি নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আইন অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু যারা পদে আছেন, তাদের মানসিকতার ওপর আইনের যথাযথ প্রয়োগ নির্ভর করে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আইনি কাঠামো তৈরি না করেই আশির দশকে দেশের বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের ভুল। পরবর্তী সময়ে এ ব্যাংকগুলো খারাপ হয়ে যায়। এ নিয়ে ২০০২ সাল-পরবর্তী সময়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। বেসরকারি ব্যাংকের ৭০ জন পরিচালককে ব্যাংকের ঋণ ফেরত দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। এর অন্যথায় পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করা হয়। ওই সময় ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল, পরিচালকদের মেয়াদসহ বেশকিছু বিষয়ে আইন-কানুন শক্ত করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ভালো পথে চলতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু গত দেড় দশক ব্যাংক খাত ক্রমাগত খারাপের দিকে গেছে।’
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরেও এসএআরটিটিএসসির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যপদ্ধতি মূল্যায়ন করে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছিল। এ বিষয়ে আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, এসএআরটিটিএসইর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার সময় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এসএআরটিটিএসইর মূল্যায়নের পর থেকে স্বায়ত্তশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাসন ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ সংশোধন করা হলেও সংস্থাটির সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসন সীমিত রয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডারের ১০, ১৫ ও ৭৭ নং বিধান অনুসারে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ করতে পারে। সে সঙ্গে এ আদেশের ৮২ নং ধারা অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অগ্রাধিকার খাতে (গ্রামীণ ক্রেডিট ফান্ড, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেডিট ফান্ড, এক্সপোর্ট ক্রেডিট ফান্ড) ঋণ দেয়ার জন্য আর্থিক প্রক্রিয়া সম্পর্কিত বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশের বিধানগুলো পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। আধা-আর্থিক প্রকৃতির এ ধরনের কর্মকাণ্ড তারল্য ব্যবস্থাপনাকে জটিল এবং আর্থিক নীতির প্রচারকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে এগুলো নতুন মুদ্রা ব্যবস্থার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। সে সঙ্গে এ স্কিমগুলোর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে এমন যেকোনো ভর্তুকি আর্থিক হিসাবের মাধ্যমে আরো ভালোভাবে পরিচালনা করা যেতে পারে।
আইএমএফ বলেছে, সুদহারসংক্রান্ত তিন ধরনের রেট বা হারের সহাবস্থান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে। এ তিন ধরনের রেট হচ্ছে ব্যাংক রেট, পলিসি রেট ও ‘স্মার্ট’ (এর মধ্যে ‘স্মার্ট’ সুদহার বাজারভিত্তিক করে দেয়ায় বাতিল হয়ে গেছে’)। বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশের ২১ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয় ব্যাংক রেট। এছাড়া বিধিবদ্ধ সংরক্ষিত তারল্য (সিআরআর) সম্পর্কিত শাস্তির ভিত্তি হিসেবেও এটি কাজ করে। পলিসি রেট হলো নতুন মুদ্রানীতির অংশ। অন্যদিকে নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়নের সময় চালু করা হয়েছিল ‘স্মার্ট’। দাপ্তরিক কাজে এমন কয়েক ধরনের হার থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ জটিল হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মত না হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের যথেষ্ট আইনি স্বাধীনতা আছে। তবে সে আইনের বাস্তব প্রয়োগ হচ্ছে না।
এ অর্থনীতিবিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকারের চাওয়ার ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হচ্ছে। ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার বিষয়ে আমরা সেটির প্রতিফলন দেখছি। ব্যাংক খাত থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ চাচ্ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটিই ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। অথচ সরকারের কথা না শোনার জন্য আমাদের কোনো গভর্নরকে পদচ্যুত করা হয়েছে, এমন নজির নেই।’
বেইজিং সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ (বুধবার রাতে) দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পূর্বনির্ধারিত সূচি মতে, চীনে দ্বিপক্ষীয় সফর শেষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সরকারপ্রধানের ঢাকা ফেরার কথা ছিল। কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে ঠিক কী কারণে প্রধানমন্ত্রী চীন সফরটি সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফেরার এমন সিদ্ধান্ত নিলেন এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সে বিষয়ে সরকারের তরফে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য বা ভাষ্য প্রচার হয়নি। সরকারপ্রধানের সফরসঙ্গী হিসেবে বেইজিংয়ে অবস্থান করা একজন কর্মকর্তা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মানবজমিনকে বলেন, ৮ই জুলাই বেইজিংয়ে পৌঁছার পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ই জুলাই দেশে ফেরার ব্যবস্থা নিতে সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। রাষ্ট্রাচার বিভাগ তৎক্ষণাৎ সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়, সে অনুযায়ী বেইজিংয়ের স্থানীয় সময় বুধবার রাত ১০টায় বিমান উড্ডয়নের ক্লিয়ারেন্স পাওয়াসহ অন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। পরিবর্তিত সূচি মতে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটটি বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে রওনা করে বাংলাদেশ সময় বুধবার মধ্যরাতে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। স্মরণ করা যায়, বুধবার দিনের শুরুতে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এবং বিকালে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হবে প্রধানমন্ত্রীর। দুই বৈঠকের মাঝে ২০ থেকে ২২টি চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের সহযোগিতা কামনা: এদিকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারের রাখাইনে ফেরাতে বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধানের চীন সফরের দ্বিতীয় দিনে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সফরসঙ্গী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ তথ্য জানান।
Leave a Reply