নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সৈনিক অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু মারা গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত প্রসিকিউটর এডভোকেট সৈয়দ হায়দার আলী মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন। গোলাম আরিফ টিপু বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। মৃত্যুকালে তিনি তিন মেয়ে , স্ত্রী,আত্মীয়স্বজন ও অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। দুই দফা জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ,প্রধানবিচারপতি ওবায়দুল হাসান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: আবু আহমেদ জমাদার শোক প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়াও শোক প্রকাশ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক , পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড: হাসান মাহমুদ , একাত্তরের ঘাতক দালাল নিমুল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ,জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ,বাংলাদেমের কামিউনিষ্ট পার্টির সভাপতি শাহ আলম ও সাধারন সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের সাধারন সম্পাদক বজলূর রশীদ শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রথম জানাজা অনুষ্টিত হয় মিনিষ্ট্রার এপার্টমেন্টে , এর পর দ্বিতীয় দফা জানাজা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অনুষ্টিত হয়। সেখান থেকে মরদেহ কমিউনিষ্ট পার্টি অফিসে নেয়া হয়। কমিউনিষ্ট পার্টি অফিসে শ্রদ্ধা জানানোর পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাশ আনা হয়। সেখানে তাকে দেয়া হয় রাষ্ট্রীয় সন্মান গার্ড অব অনার। এছাড়া ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পরিবার-স্বজন, সহকর্মী ও বিশিষ্টজনরা। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী বকরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ভাষাসৈনিক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের চিফ প্রসিকিউটর একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট আইনজীবী গোলাম আরিফ টিপুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘গোলাম আরিফ টিপুর মৃত্যু দেশের আইন অঙ্গণের জন্য এক অপূরনীয় ক্ষতি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।’রাষ্ট্রপতি মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার এক শোক বার্তায় শেখ হাসিনা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদন জানান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিঞ্জপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর এডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান । তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। দীর্ঘদিন ধরে গোলাম আরিফ টিপু বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গোলাম আরিফ টিপুর ১৯৩১ সালের ২৮ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কমলাকান্তপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আফতাব উদ্দিন আহমদ ছিলেন জেলা রেজিস্ট্রার। তিনি ছিলেন ৯ ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। গোলাম আরিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বাম ধারার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সৈনিক। ১৯৫২ সালে রাজশাহীতে বাংলা ভাষা আন্দোলন তার নেতৃত্বেই সংগঠিত হয়। তিনি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের রাজশাহী অঞ্চলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০১৯ সালে একুশে পদক প্রদান করে। গোলাম আরিফ টিপু ১৯৫৮ সালে একজন আইনজীবী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি একাধিকবার রাজশাহী আইনজীবী সমিতির সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে গোলাম আরিফ টিপুকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
Leave a Reply