সারাক্ষণ ডেস্ক
জ্যামেইকার কিংসটনের সেলেনা ওং ১৯৮৮ সালের নতুন বছরে তার পরিবারের জন্যে একটি স্পেশাল ডেজার্ট বানাতে চেয়েছিলেন। মিসেস ওং , যার পূর্ব পুরুষ উণবিংশ শতাব্দীতে চায়না থেকে এই দ্বীপ দেশটিতে এসেছিলেন যারা আসলে বংশগত ভাবেই বেকারী বানাতে জানতেন এবং বাড়ি থেকে বিক্রিও করতেন।
তিনি বলেন, স্ট্রবেরী দিয়ে একটা ছোট কেক বানানোর কথা ভাবছিলাম যা জ্যামাইকাতে আসলেই খুব জনপ্রিয়। তার বানানো লিচু কেক তার পরিবার তথা জাতীয়ভাবেই খুব জনপ্রিয়তা পেয়ে গেল খুব কম সময়ের মধ্যেই।
এই বাড়িতে তৈরী জ্যামােইকার সবেচেয়ে জনপ্রিয় ডেজার্টটি গ্রোসারী শপ এবং পেষ্ট্রি শপগুলোতে বিক্রি হওয়া শুরু হলো। এমনকি এটি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আমেরিকায় ও আমেরিকার কিছু দ্বীপেও এটি সংস্কৃতির একটা অংশ হয়ে গেল। জ্যামাইকান-আমেরিকান অঞ্চল এমনকি মিয়ামিতেও এটি জনপ্রিয়তা পেয়ে গেল।
১৯৭৮ সালে কে চেন , ৮৪, জ্যামেইকা থেকে মিয়ামীতে অভিবাসী, যিনি একটি জনপ্রিয় ভিডিও ফ্রানচাইজ করতে আসলেন। এর পূর্বে , মিসেস চেন যিনি ঊনবিংশ শতাব্দিতে চায়না থেকে জ্যামেইকাতে অভিবাসী হয়েছিলেন , ছিলেন একজন দর্জি, ফুল সংগ্রাহক, বিউটিশিয়ান, নাইটক্লাব মালিক এবং একজন বিউটি কুইন। যিনি মিস চাইনিজ জ্যামেইকান ক্রাউন পেয়েছিলেন ১৯৫০ সালে। কিন্তু অনেক ক্যারিবিয়ান নারীদের মতো তিনি পরিবার ও বন্ধুদের জন্যে অধিক টাকা উপার্জনের জন্যে তিনি বিভিন্ন প্রকার ডেজার্ট তৈরী করতেন । ব্লাক কেক, পোন, এমব্রোসিয়া এবং অবশ্যই লিচু কেক তিনি তৈরী করতেন।
তার কাস্টমারদের কাছে খুবই একটা জনপ্রিয় “স্পেশাল উপলক্ষ্য কেক” তৈরী করতেন বিশেষ করে ডাবল সাইজের একটি। যেটি অন্তষ্টিকৃয়ার উপলক্ষ্যে তৈরী করেছিলেন।
নিকি স্টুলজ, যিনি তার মিয়ামির বাড়ির বাইরে লিচু কেক বিক্রি করতেন, তিনি এখনো ম্যারিয়েটাতে যেখানে তিনি সদ্য চলে গিয়ে আবাসন করেছেন সেখানে এই ব্যবসাটা চালিয়ে যাবেন বলে মনস্থির করেছেন।
নিকি স্টুলজ, যার পরিবার ১৮শ’ শতকে চায়না থেকে জ্যামেইকাতে অভিবাসী হয়েছিলেন, বলেন, “এক বছরে আমি ১৩০০ কেক বিক্রি করেছি।” লিচু সাধারনত চায়না বংশোদভূত সন্তানদের কাছে খুবই পরিচিত যাদের পরিবার ১৮০০ শতকে শ্রমিক হিসেবে প্রথম ক্যারিবিয়ান দ্বীপে আসে। এবং তারা কিউবা, জ্যামেইকা এবং ত্রিনিদাদে এসে ইক্ষু ক্ষেতে কাজ করতেন।
আজও চায়না থেকে এই দ্বীপে অভিবাসন চলছে তাদের সকল নিজস্বতাকে ছেড়ে এসে। ‘‘ইট ক্যারিবিয়ানের” লেখিকা ভার্জিনিয়া বার্ক বলেন, এই কেক গত ১৫ বছর ধরে আমার মায়ের জন্মদিনে তার কাছে সবচেয়ে প্রিয় একটা জিনিস।
শিশুবেলায় মনে করতে পারেন সেই পুরোনো স্মৃতি যখন তিনি জ্যামেইকার চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ক্যানড লিচু খেতেন। যদিও ১৮শ শতকে লিচু গাছের চারা চায়না থেকে জ্যামেইকাতে আনা হয়েছিল, তবুও ফ্রেস ফলটিা কেকে ব্যবহার করা হতোনা।
কারন, লিচু গাছগুলো সত্যিকারে গাছের মতো বেড়ে উঠতোনা,মিস ওং বলেন । কিন্ত বেশীরভাগ জ্যামেইকান তাজা লিচু খাওয়া ছাড়তেননা । জ্যামেকার ওচো রিয়সের এলিস ইয়প, যার বিছানা, বুটিক এবং সকালের নাস্তার ব্যবসা আছে, তিনিও চাইনিজ-জ্যামেইকান নাইটে লিচু কেক সরবরাহ করেন। কারন এটি জ্যামেইকানদের কাছে একটি ক্রেজ।
তার পালক পিতার জ্যামেইকা আইসক্রীম কোম্পানী ১৯৪০ সালে একটি লিচু আইসক্রীম প্রস্তুত করেন। মি. স্টুলজ , একজন ঘরোয়া বেকার , তিনি বলেন, এই কেকটি ভীষন জনপ্রিয় কারন এটি খুবই তরতাজা। ।অনেক লিচু কেক বেকারদের মতো তিনি তার প্রস্তুতপ্রণালী গোপন রাখেন।
তিনি আরো বলেন, এটা দেখতে খুবই সাধারন কিন্তু আসলে তা নয়। মিস ওং এখন তার সফল লিচু কেক ব্যবসার জন্যে গর্বিত। তিনি বিবাহ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে কেক তৈরী করে ভীষন খ্যাতি পান । তিনি কিংস্টনে একটি ডেজার্ট শপ খুলেছেন। এবং বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্যে হুলু সিরিজ “ ব্লাক কেক” তৈরী করেছেন। তিনি আরো বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রী, অভিনেতা, শিল্পিদের জন্যেও কেক তৈরী করেছি। এককথায়, এটি জ্যামেইকানদের জন্যে সত্যিই একটা বিশেষ কেক বটে।
Leave a Reply