মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৩ অপরাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৫৯)

  • Update Time : সোমবার, ২২ জুলাই, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

অর্ধেক জবাবদিহি দুনিয়াসুদ্ধ সবাই মেনে নিয়েছে এমনি ধরনের এক ভঙ্গিতে বলতে শুরু করলো আবার লুলু চৌধুরী, ‘তারপর ধরুন অনেক সময় অসময়ে ঘরে ফিরতে হয় আমাকে। অনেক সময় অনেক মহারথীর সঙ্গে সময়ও কাটাতে হয়। চাকরির খাতিরে আমি এসবে বাধ্য। এমন নয় এটা সময়ের অপচয়, এতে আপত্তি কিসের! আমার চাকরির ধরনটাই অমন। দুনিয়ায় হাজারো রকমের মানুষ। কতো রকমের মেজাজ, অহ- মিকা, তেত্রিশ কোটি কমপ্লেক্স, মাথা খারাপ হ’য়ে যায় ভাই-‘

একটু থেমে মৃদু হেসে লুলু চৌধুরী বললে, ‘কারো কান ধ’রে কাজ আদায় ক’রে নিতে হয়, কারো হাত ধ’রে; অনেক সময় গলাও ধরতে হয় অনেকের। যে উদ্দেশ্যে কান ধরা, সেই উদ্দেশ্যেই গলা ধরা। সব ব্যাপারটাই আগাগোড়া একটা টাঙ্ক, যা সম্পূর্ণই অফিশিয়াল। অবশ্য অনেকে এক্সপ্লয়টেশনও ব’লে থাকে; ব’য়েই গেল আমাদের। প্রিমিয়ামের মোটা অঙ্কের মূল্য ক’ষে পা বাড়াতে হয় আমাদের। এই যে ব্যাঙের ছাতার মতো চারদিকে গণ্ডায় গণ্ডায় কোম্পানি গজিয়ে উঠছে, ভূশ ভূশ ক’রে ফেঁপে উঠছে চোখের পলক না পড়তেই, এসব কি আর এমনি এমনিই! চাকরি চাকরিই, যে যার নিজের প্রতিভা দিয়ে কোম্পানির ভিত মজবুত ক’রে চলেছে; ঠুনকো অহমিকা, শস্তা চক্ষুলজ্জা, অমুকে ছুঁয়ে দিলো, জাত গেল, এসবের চেয়ে এফিশিয়েন্সি রিপোর্টের দাম আমাদের কাছে ঢের ঢের বেশি! পারলে বন্ধুদের বলবেন, নিরর্থক কষ্ট ক’রে তাঁরা যেন আমার জন্যে দুশ্চিন্তা না করেন, আমি চাই না আমার নিজের ভালোমন্দের ব্যাপারে অন্যেরা খামোকা মাথা ঘামাক’ খুবই বিরক্তিকর, তবু শুনতে হয় খোকাকে। সে চোখ কুঁচকে বললে, ‘আপনি গ্রাহ্যের মধ্যে না আনলেই হয়-‘

‘তাতো বটেই। তবু অনেক সময় এসব তেতো লাগে। হাজার হোক আমরা তো মানুষই!’

খোকা বললে, ‘আপনার এই শেষের কথাটি আপনার চাকরির জন্যে খুবই বেমানান, বিশেষ ক’রে এতোক্ষণ যা যা বললেন, যেভাবে বললেন, তা যদি মানতে হয়’

‘এতোক্ষণ যা বলেছি সেটাই ঠিক’ লুলু চৌধুরী জোরের সঙ্গেই বললে, ‘আমি যদি সাতহাত ঘোমটা টেনে ঘরে ব’সে থাকি আপনাদের বন্ধুরা আমাকে মাসোহারা দেবে? তাহলে না হয় তাই করা যাবে, আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচি তাহলে-‘

খোকা বললে, ‘জিগ্যেশ ক’রে দেখবো এক সময়।’

‘তাই করবেন, খুব জানতে ইচ্ছে ক’রে আমার’ হাসতে লাগলো লুলু চৌধুরী।

‘আসল কথা আপনি একজন মেয়েমানুষ, এটাই শেষ পর্যন্ত বুঝলাম।’ ‘আপনার কি সন্দেহ ছিলো এতে?’

খোকা বললে, ‘তর্ক ক’রে কোনো লাভ নেই, আপনি নিজেই জানেন, এসব কথা তুলে আপনি নিজেই হেরে গিয়েছেন।’

কিছু একটা ভেবে- অল্পক্ষণ পরেই লুলু চৌধুরী বললে, ‘আপনি তো কিছু করছেন না, চেষ্টা করছেন নাকি কোনোদিকে?’ ‘

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024