মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৬ অপরাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৬১)

  • Update Time : বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

‘কিছুই যায় আসে না ওতে। ওর গুডবুকে না হয় নামটাই কাটা যাবে তোর, তাতে আর কি! শুনলি না কিভাবে কথা বললে? কখনো খুলে মেলে জোর গলায় অভিযোগ তুলবে না ও, বিচার চাইবে না; এমনভাবে কথা বলবে যেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজের মতামতগুলোকেই নিছক যাচাই ক’রে নিচ্ছে। ও জানতো যেকোনো মুহূর্তে আমি এসে তুলে নিয়ে যাবো তোকে। হাতে বেশি সময় থাকলে দেখতিস সমস্ত ব্যাপারটা তোর কাছে কেমন অফিশিয়াল ক’রে তুলতো। একটা আস্ত ছ’তলা কোম্পানির পাকস্থলীতে আইঢাই ক’রে মরতিস তখন। ছেড়ে দে। ওকে নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কোনো লাভ নেই, ওর আর আমাদের পথ তো আর এক নয়, ওর পথে ও চলবেই-‘

খোকা বললে, ‘এখন আলাদা হলেও, এক পথও তো হ’তে পারে? ধর এজেন্সি একটা নিলাম, তখন?’

‘বলেছে নাকি এসব?’

‘তা-না হ’লে আর বলছি কেন?’

‘সর্বনাশ! দ্যাখ কেমন ঘাড়ে চাপে এবার, সকাল সন্ধ্যা পাগল ক’রে

তুলবে তোকে!’

অনেকক্ষণ পর খোকা বললে, ‘এইভাবেই হন্টন মারবি নাকি?’

‘রিকশা নে, ভালো লাগছে না কিছু। চল কোথাও গিয়ে বসি দু’দণ্ড!’ এক একবার ঘরে ফেরার ইচ্ছে উকি মারছিলো খোকার মনে। রঞ্জুর কাছে জবাবদিহি করতে হবে আজ। সেজখালাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব’লে দিয়েছিলো রঞ্জু বারবার। কিন্তু মুরাদকে ছেড়ে এই মুহূর্তে হুট ক’রে চলে যাওয়াও তার পক্ষে অসম্ভব। গাছের ভিজে পাতার গায়ে নিরুপদ্রব জ্যোছনার আলোর মতো এক নরোম উজ্জ্বলতায় চিকচিক করছে মুরাদের চোখমুখ। মাঝে মাঝে চলকে উঠছে, নিজেকে চেপে রাখতে পারছে না, কিছু একটা প্রবলভাবে তোলপাড় ক’রে চলেছে তার ভিতর, বুঝতে বাকি থাকে না খোকার।

খোকা বললে, ‘কোথায় যাবি? কোনো বারে নয় কিন্তু!”

‘সেরকম পয়সা কোথায়!’

‘পয়সা আছে, কিন্তু ইচ্ছে নেই।’

‘তা বটে, ইচ্ছে থাকলে পয়সা থাকে না। আউটার স্টেডিয়ামের দিকে যাওয়া যাক বরং-

‘ওদিকে বেজায় ভিড়ভাট্টা। মিটিং হুটোপুটি আর খেল তামাশায় কাদার মতো বজবজ করছে মাঠটা। যে শালার মুখে সবেমাত্র বুলি ফুটেছে সেও একচোট বক্তিমে না ঝেড়ে যাচ্ছে না; সাধে কি আর বলে হজ্জতে বঙ্গাল! আমি দেখলাম, শালার বিকেলে মাঠে খেলা দেখার মতো একদল লোকের মিটিং-এর নেশা আছে; আসনগেড়ে ব’সে পুটুর পুটুর ক’রে চিনেবাদাম ভেঙে গালে পোরে আর লেকচার শোনে, হাত তুলতে বললে হাত তোলে, শ্লোগান দিতে বললে শ্লোগান দেয়, আপার চেম্বার খালি আর কি!’

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024