সারাক্ষণ ডেস্ক
বছরের পর বছর যায়, মন্ত্রী-মেয়রের পরিবর্তন হয়, কিন্তু বৃষ্টির মৌসুমে রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয় না। টানা কিছুক্ষণ ভারী বৃষ্টি হলে ঢাকার কোনো না কোনো এলাকা ডুববে—এটি যেন নিয়ম হয়ে গেছে। অথচ গত চার বছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে কমপক্ষে ৭৩০ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু এর সুফল কতটা পাওয়া গেছে, তা গতকাল শুক্রবার সকালের তিন ঘণ্টার বৃষ্টি দেখিয়ে দিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৬০ মিলিমিটার। এরপরও অবশ্য হয়েছে, তবে তা ভারী বৃষ্টি ছিল না। কিন্তু সকালের বৃষ্টিতেই ধানমন্ডি, গ্রিন রোড, নিউমার্কেট, মতিঝিল, আরামবাগ, কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, দক্ষিণখান, কল্যাণপুর, বিজয় সরণি, মালিবাগ, মৌচাকসহ রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকার সড়ক ডুবে যায়। অনেক বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। কোথাও পানি ছিল হাঁটুসমান, কোথাও প্রায় কোমরসমান।
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে অনুষ্ঠিত সবশেষ ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষার আগের রাতে চুক্তিতে রাজি হওয়া পরীক্ষার্থীদের নির্ধারিত স্থানে নিয়ে তাদের প্রশ্ন ও উত্তর মুখস্ত করানো হয়। পরে সকালে নিজ নিজ কেন্দ্রে গিয়ে ওই প্রার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রশ্ন পেয়ে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেওয়া ওই প্রার্থীরা উত্তীর্ণও হয়েছেন। প্রিলিমিনারিতে পাস করার পর চুক্তিতে থাকা প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল চক্রটি।
শুক্রবার (১২ জুলাই) রাত ৯টায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে প্রশ্নফাঁসের আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হয়েছে।
চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদনে দেখানো হয়, পিএসসির কর্মচারী সাজেদুল ইসলাম সাজু ৪৬তম বিসিএসের প্রশ্নফাঁসকাণ্ডের মূলহোতা। তার কাছে থেকে ৪৬তম বিসিএস প্রিলির প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষায় অংশ নেন মাহমুদুল হাসান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের এক শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি নাটোরে। সম্প্রতি মাহমুদুল বাংলাদেশ টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন হিসেবে কাজ শুরু করেছেন।
৪৬তম বিসিএসের প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনা স্বীকার করেন মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেছেন, ‘পিএসসির কর্মচারী সাজেদুল ইসলাম সাজু আমাকে মোহাম্মদপুর থেকে একটি বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আমাকে সকালের দিকে ২০০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্ন দেন। ওইটা আমি পড়লাম। পড়ার পর হলে গিয়ে দেখি কমন পড়ছে। এক লাখ টাকার বিনিময়ে এ চুক্তি হয়েছিল।’
এ বিসিএসে প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দেওয়া রুবেল নামে আরও এক প্রার্থী চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে বলেছেন, ‘পরীক্ষার আগের রাতে মাহমুদুল (ঢাবির সাবেক ছাত্র) ভাই আমাকে আইডিবির সামনে আসতে বলেন। সেখান থেকে তারা আমাকে গাড়িতে করে মোহাম্মদপুর নিয়ে যান। মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় আমাদের রাত ৯-১০টার দিকে প্রশ্ন পাঠিয়ে দেন। ওই বাসায় আরও লোকজন ছিলেন। তারা আমাদের সারারাত ওই প্রশ্নগুলো সমাধান করিয়েছেন। তারপর আমাদের সকালে ছেড়ে দিয়েছেন। পরে আমরা সবাই যে যার কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি।’
রুবেল আরও বলেন, ‘প্রিলির জন্য ওই রাতে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ প্রশ্ন পড়ানো হয়েছে। প্রিন্ট করা কাগজে ওই প্রশ্নগুলো সরবরাহ করা হয়। মোহাম্মদপুরের বাসার যে রুমে আমি প্রস্তুতি নিয়েছি, সেখানে ৮-৯ জন ছিলেন। আর ওই বাসায় আমার মতো আরও ১০০ জন প্রশ্ন পেয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন। আমার সঙ্গে ২ লাখ টাকায় প্রশ্ন পাওয়ার বিষয়ে চুক্তি হয়।’
মাহমুদুল ও রুবেল ছাড়াও আরও ৬ জন শিক্ষার্থীর তথ্য উঠেছে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানে। যারা প্রশ্নপত্র পেয়ে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস করেছেন।
সরবরাহ সংকটের অজুহাতে দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। ১৫ দিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ভারত থেকে আমদানির পরও কমছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম। উলটো আরও বাড়ছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চট্টগ্রামে খুচরা বাজারে ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা দরে। আমদানি করা পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম। শুধু পেঁয়াজ নয়-চাল, ডিম, আলুসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজিই মিলছে না বাজারে। বেগুনের কেজি সেঞ্চুরি পার করেছে। প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। ভোক্তাদের অভিযোগ-প্রশাসনের কঠোর মনিটরিংয়ের অভাবে দিন দিন অস্থির হয়ে পড়ছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। কোনো পণ্যের দাম কমার লক্ষণ নেই। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমে থাকলেও বাজারের কোথাও এ দামে বিক্রি হচ্ছে না। বেশিরভাগ পণ্যই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। আলু বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের দ্বিগুণের চেয়ে বেশি দামে। অথচ আলু সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
তবে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার চেয়ে পণ্য সরবরাহ কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই সে পণ্যের দাম বাড়ে। সম্প্রতি অতি বৃষ্টির কারণে উত্তরবঙ্গ থেকে পেঁয়াজ আসতে সমস্যা হচ্ছে। ৩ মে এক প্রজ্ঞাপনে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার কথা জানায় ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা ডিরেক্টোরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি)। এতে বলা হয়, প্রতি টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য (মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস- এমইপি) ৫৫০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে দেশের স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হলেও উচ্চ শুল্কের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া দেশি পেঁয়াজের সরবরাহও আগের চেয়ে কমেছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা বলছেন, দেশের স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হলেও উচ্চ শুল্কের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া দেশি পেঁয়াজের সরবরাহও আগের চেয়ে কমেছে। এছাড়াও কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে পরিবহণ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে পেঁয়াজের দাম দিন দিন বাড়ছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ভালোমানের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দামে। আর খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। যা আগে ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকার কমে। পাইকারি বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকার বেশি দামে। খুচরা বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে আলুর দাম অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এখন কেজিপ্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। কিছু দোকানে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামের আড়তদারদের অভিযোগ-উত্তরবঙ্গের আলু ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দেশি ও আমদানি করা রসুনের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ২১০ টাকা। আর আমদানি করা রসুনের দাম পড়ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা।
বাজারদর : চট্টগ্রামে কাঁচা বাজারে হঠাৎ করে বেগুনের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি বেগুন ইতোমধ্যে সেঞ্চুরি পার করেছে। বাজারে লম্বা বেগুন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কিছুদিন আগেও ছিল ৮০-৯০ টাকায়। আর সবুজ গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। কালো গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।
বন্যার কারণে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৭১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে রংপুর বিভাগের তিন জেলায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে ৪৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সিলেট জেলায় বন্ধ রয়েছে ২৭৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ জেলায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ৬৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কোনো কোনো স্কুল বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় এবং কোনো কোনো স্কুল বন্ধ রয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হওয়ায়।
প্রাথমিক শিক্ষা রংপুরের বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় এ বিভাগের চার জেলার ১৬টি উপজেলার ৪৪০টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ৫০টি বিদ্যালয় বন্যার্তদের আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকিগুলোয় পাঠদান বন্ধ রয়েছে পানি ওঠার কারণে। কুড়িগ্রাম জেলায় পাঠদান বন্ধ আছে ২৮১টি বিদ্যালয়ে। এর মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ২৫টি বিদ্যালয়।
এর বাইরে গাইবান্ধার চার উপজেলার পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ আছে ১৪৮টি বিদ্যালয়ে। এর মধ্যে ২৫টি বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রংপুর জেলার চার উপজেলায় ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। লালমনিরহাট জেলায় পাঠদান বন্ধ আছে একটি বিদ্যালয়ে।
বন্ধ থাকা বিদ্যালয়গুলোর একটি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দীঘলকান্দি চরে অবস্থিত দীঘলকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মূল ভবনে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আটদিন ধরে বিদ্যালয় বন্ধ আছে।’ কবে নাগাদ পাঠদান শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন করে যমুনা নদীর পানি বেড়েছে। পানি না কমা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। শুধু পানি কমলেই হবে না, শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে বসা এবং পাঠদানের পরিবেশ সৃষ্টি হতে আরো কিছুটা সময় লাগবে।’
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের নায়ের চরে অবস্থিত গৌড়মোহনহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জোবেদা খাতুন বলেন, ‘আমাদের স্কুল উঁচু স্থানে অবস্থিত। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ১০টি পরিবার এখানে আশ্রয় নিয়েছে। তারা যাওয়ার পর পাঠদান শুরু হবে।’
রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় দেশের অন্যান্য এলাকার মতো রংপুর অঞ্চলে বৃহস্পতিবার ৪৮ ঘণ্টায় ভারি বর্ষণ হতে পারে।
প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়ি ঢল ও অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে বিভাগে এখন পর্যন্ত ৪৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ আছে। এর মধ্যে ৫০টি বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে সিলেটেও। জেলায় কুশিয়ারা তীরবর্তী প্রায় পাঁচ হাজার গ্রাম এখনো বন্যাকবলিত। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো ব্যবহৃত হচ্ছে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে।
সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, জেলায় ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ২৭৩টিতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
সিলেট জেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় ৬৭৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে। বন্যার কারণে ৬৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ থাকা ৬৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ওসমানীনগর উপজেলায় ২১টি, বালাগঞ্জ উপজেলায় ১৪, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় পাঁচ, জকিগঞ্জ উপজেলায় পাঁচ, বিয়ানীবাজার উপজেলায় ১১, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় আট ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় দুটি।
সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশেদ বলেন, ‘বন্যার কারণে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় ২৭৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। আমরা বন্যা-পরবর্তী পাঠদানের বিশেষ পরিকল্পনা করে রেখেছি।’
সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘বন্যার কারণে ৬৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা বন্ধ রয়েছে। শিখন ঘাটতি পূরণে এখনই কিছু ভাবা যাচ্ছে না, আগে পানি কমতে হবে। খুললেই এ নিয়ে ঘাটতি পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
এদিকে মাসখানেকের বেশি সময় ধরে ক্লাসরুম থেকে দূরে থাকা শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে ভাবতে হবে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, বন্যা-পরবর্তী পাঠদানের বিশেষ পরিকল্পনা করে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে হবে।
সিলেট সরকারি এমসি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হায়াতুল ইসলাম আখঞ্জি বলেন, ‘যে সময় বন্যা হানা দিয়েছে, সেটি একজন শিক্ষার্থীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের এমনিতেই প্রকৃতির সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধ করে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। এর মধ্যে দফায় দফায় বন্যা শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি করেছে। বিশেষ করে কুশিয়ারা তীরবর্তী এলাকার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবার নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছে। এদের নিয়ে ভাবতে হবে। শিখন ঘাটতি পূরণে প্রয়োজনে শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের মাঝে আলোচনা হতে পারে। না হয় এ ঘাটতি শিক্ষার্থীদের ভিত দুর্বল করে দেবে।’
আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট নিয়ে ভয়ঙ্কর জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে অটোমোবাইল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে গোপনে ভুয়া আন্তর্জাতিক পারমিট সরবরাহ করে প্রতারণা করছে। তাদের দেয়া এসব পারমিটের উপর আস্থা রেখে বিদেশে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা। শুধুমাত্র নাম, ছবি, ঠিকানা আর রক্তের গ্রুপ লিখে দিলেই টাকার বিনিময়ে মেলে ভুয়া পারমিট। একদল দালাল চক্রের যোগসাজশে এসব পারমিট সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বৈধ পারমিটও দিচ্ছে নিজেদের মর্জিমতো ফি নির্ধারণ করে। এসব নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে অটোমোবাইল এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলি ফুয়াদ পাশা বাবুলের নেতৃত্বে। বিষয়টি অনুসন্ধান করতে একটি আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট করতে দেন এই প্রতিবেদক। পরে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে মাত্র ৪ দিনের মধ্যে অটোমোবাইল এসোসিয়েশনের একটি আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট মিলে। তবে আসলের মতো দেখতে সেই ড্রাইভিং পারমিটটি ভুয়া।
আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট পেতে চালককে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-বিআরটিএ কর্তৃক বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হয়। সেই লাইসেন্সের উপর ভিত্তি করেই আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট দেয়া হয়। তবে এজন্য নতুন করে কোনো পরীক্ষা দিতে হয় না। আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট নিতে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে তা পূরণ করতে হয় এবং বিআরটিএ এর ড্রাইভিং লাইসেন্স এর সত্যায়িত ফটোকপি জমা দিতে হয়। এ ছাড়া প্রয়োজন হয় পাসপোর্টের ফটোকপিও। নির্ধারিত ফি এর বিনিময়ে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট দেয় অটোমোবাইল এসোসিয়েশন। তবে এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ভুয়া পারমিট দিচ্ছে তারা। এমনকি মানবজমিন প্রতিবেদককে দেয়া ভুয়া পারমিটের বিনিময়ে আবেদন, লোকাল লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি কিংবা পাসপোর্টের ফটোকপিও জমা নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। ওই আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিটে ভুল নাম ও ভুল ঠিকানা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া পারমিটে দেয়া বিআরটিএ এর এক কর্মকর্তার জাল স্বাক্ষরও ব্যবহার করেছে অটোমোবাইল এসোসিয়েশন। মিরপুর সার্কেলে কর্মরত বিআরটিএ এর ওই কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, আমার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। এটা নিয়ে আমি বিব্রত। এটা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আগে ২৫০০ টাকা ফি নিয়ে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট দিতো অটোমোবাইল এসোশিয়েশন। তবে বিআরটিএকে না জানিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো ফি বাড়িয়ে দিয়ে পারমিটগুলো ইস্যু করছে। খাতা কলমে ফি নির্ধারণ করেছে ৪৭০০ টাকা। তবে প্রতিটি পারমিটে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। কিন্তু গ্রাহককে ৪৭০০ টাকার রশিদই ইস্যু করা হচ্ছে। মোহাম্মদ হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী মানবজমিনকে বলেন, আমি মালয়েশিয়ার জন্য তাদের কাছে পারমিট করতে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে ভুয়া পারমিট দিয়েছে। মালয়েশিয়া পুলিশ এটা চেক করার পর ধরা খেয়েছি। তখন আমাকে ১৫ হাজার টাকার মতো জরিমানা করেছিল। তিনি বলেন, আমার প্রবাসী আরেক বন্ধুও তাদের থেকে পারমিট নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা খেয়েছিল। তারটাও ভুয়া ছিল। পরে ওই দেশে নতুন করে ট্রেনিং করে লাইসেন্স নিতে হয়েছে। নাঈম নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ওমানে আমার কাজের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে ড্রাইভিং করার জন্য অটোমোবাইল এসোসিয়েশন থেকে পারমিট করিয়েছিলাম। কিন্তু ওমানের এক সার্জেন্ট আমার থেকে পারমিট নিয়ে সফটওয়ারে মিলিয়ে দেখে এটার কোনো অস্তিত্ব নাই। পরে ওটা তারা নিয়ে নষ্ট করে ফেলে। আমি তো আগে বুঝিনি ওটা ফেক।
Leave a Reply