অমিতাভ ভট্টশালী
বাংলাদেশের পিরোজপুরের মানুষের সহায়তা চেয়ে এক ভারতীয় নারী একটি ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছিলেন এ বছর জুন মাসের গোড়ায়। তার আকুতি ছিল যে প্রায় আশি বছর আগে ফেলে আসা একটা বাড়ির খোঁজ যদি পিরোজপুরের কেউ দিতে পারেন।
‘বঙ্গ ভিটা’ নামের ফেসবুক পেজের সেই পোস্টে শ্বেতা রায় নামের ওই ভারতীয় নারী লিখেছিলেন পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার হারজি গ্রামের কথা।
গত চার বছরে ওই ‘বঙ্গ ভিটা’ ফেসবুক পেজটি ভারত আর বাংলাদেশের পাঁচশোরও বেশি পরিবারকে খুঁজে দিয়েছে তাদের হারিয়ে যাওয়া শিকড়ের সন্ধান।
“গ্রামের পাশে একটা খাল আর খালের পাশেই বাড়ি ছিল,” ফেসবুকে লিখেছিলেন মিজ রায়।
সেটা ছিল তার মায়ের বাবা, অর্থাৎ দাদু মহাদেব দাসের বাড়ি। কাজটা ছিল একরকম ‘খড়ের গাদায় সুঁচ খোঁজার’ মতো।
মাত্র ১৮ দিনের মাথায় খুঁজে পাওয়া যায় পিরোজপুরে মি. দাসের ফেলে আসা বাড়ির সন্ধান, চলে আসে সেখানকার ছবি।
বিবিসি বাংলাকে তিনি জানাচ্ছিলেন, “দাদুর কাছে ছোট থেকেই ওই গ্রামের বাড়ির কাহিনী শুনতাম। এর আগে পূর্ব বঙ্গে আমার ঠাকুমার পৈত্রিক বাড়ি খুঁজে পেয়েছিলাম আমরা। তাই এবার আমি আর মা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে দাদুর বাড়িটা খোঁজা শুরু করি।“
তিনি বলছিলেন, “বঙ্গ ভিটায় আমার পোস্টটা দেখে প্রথম যিনি যোগাযোগ করলেন, তিনি হলেন ফজলে আলি খানের নাতির নাতি। এই ফজলে আলি খানই আমার দাদুর পরিবারকে স্বাধীনতা-পূর্ব দাঙ্গার সময়ে বন্দুক নিয়ে রাত জেগে পাহারা দিতেন। এই ভদ্রলোক নিজের নাম জানাতে চান না অবশ্য। এরপরে এমন একজনের সাহায্যে সব তথ্য পাই, যিনি আবার বাড়িটির বর্তমান বাসিন্দাদের পরিচিত।“
“দাদু তো ভাবতেই পারে নি যে এতবছর পরে আবার তাদের ফেলে আসা বাড়ির ছবি দেখতে পাবে। ওই ছবিগুলো দেখে একবারেই চিনতে পেরেছে। বারবার বলছিল বাড়িটা, পাশের খালটা এখনও আছে, তবে একটা বটগাছ ছিল, সেটা কেটে ফেলা হয়েছে,” জানাচ্ছিলেন ব্যাঙ্গালুরুতে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসাবে কর্মরত শ্বেতা রায়।
আবার ভারত থেকে বাংলাদেশে চলে যাওয়া আব্দুস সেলিম ওই ‘বঙ্গ ভিটা’ পেজের মাধ্যমেই জানতে পারেন যে পশ্চিমবঙ্গের যে স্কুলে তিনি পড়াশোনা করতেন, সেখানকার এক প্রিয় মাস্টারমশাই কয়েক বছর আগেই মারা গেছেন।
মেয়ের সঙ্গে মহাদেব দাস (বাঁয়ে), পিরোজপুরে মি. দাসের পৈত্রিক বাড়ি (ডানে)
একইভাবে বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলার নূর আহমেদ রিন্টু বা কলকাতার দেবাশীষ ভট্টাচার্য অথবা ঢাকার সুরঞ্জনা মায়া ওই পেজের মাধ্যমেই খোঁজার চেষ্টা করছেন বা খুঁজে পেয়েছেন তাদের ফেলে আসা পৈত্রিক ভিটা বা সীমান্তের অপর পাড়ে হারিয়ে যাওয়া বন্ধু বা আত্মীয়দের।
কলকাতার বাগুইআটি এলাকার বাসিন্দা, রেলের অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার দেবাশীষ ভট্টাচার্যের বাবা-মায়েরা ১৯৪৮ সালে ভারতে চলে এসেছিলেন। প্রথমে থাকতেন মুর্শিদাবাদে, পরে কলকাতার কাছেই।
“উদ্বাস্তু পরিবার তো, ছোট থেকেই দেখতাম পুরো সংসারটাই এলোমেলো একটা অবস্থায়। অথচ আত্মীয় স্বজনরা বাড়িতে এলে গল্প হত যে দেশের বাড়িতে দশ একর জমি ছিল, পুকুর ছিল – কত কিছু। আমার তখন থেকেই মনে হত এত কিছুই যখন আমাদের ছিল তাহলে এরকম উদ্বাস্তু জীবন কেন আমাদের? মনের মধ্যে অভিমান হত খুব,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. ভট্টাচার্য।
ছোটবেলা থেকে জ্যাঠা, বাবা, কাকাদের কাছে শোনা ‘দেশের বাড়ি’র ইতিহাস, কিছু পুরনো চিঠিপত্র, আর একরাশ অভিমান – এসবই গতবছর পর্যন্ত সঙ্গী ছিল মি. ভট্টাচার্যের।
এরকমই একটা পর্যায়ে তার ইচ্ছা হয় যে নিজের শিকড়টা খুঁজে পেতে।
‘বঙ্গ ভিটা’ পেজে গতবছর ১৮ই জুন তিনি লিখেছিলেন : “আমার পূর্বপুরুষের জন্মভিটা আজকের বাংলাদেশের বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার বাটাজোরে, আমার পিতামহের নাম জানকীনাথ ভট্টাচার্য। জানকীনাথ বাটাজোর পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার ছিলেন। আমাদের বাড়ি বাটাজোর পোস্ট অফিস থেকে ৫০০ মিটার দূরে একটি বড় দিঘীর পাড়ে ছিল। বাড়িটি ছিল তিন একর জমিতে,ঠাকুর বাড়ি নামে পরিচিত ছিল।“
পোস্টের শেষে তিনি লিখেছিলেন যে বরিশালের ‘বন্ধু’রা যদি খোঁজ দিতে পারেন যে ‘পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি’ এখন কেমন আছে। একটা ছবি দেখার পরে কখনও বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছার কথাও লেখেন তিনি।
এরপরেই ওই পোস্টে শুরু হয়ে যায় ‘খোঁজ’। ‘আরিয়ান আদ্রিতাত’ নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী তার বন্ধু ইমন রহমানকে ট্যাগ করে লেখেন ‘বন্ধু, উনার ভিটেটা খুঁজে দিতে পারবি?’
অনিমা মজুমদার রাই লেখেন , “বেনাপোল সীমান্ত থেকে বরিশালের বাসে গিয়ে বাটাজোর বাস স্ট্যান্ডে নেমে যেকোনো মিষ্টির দোকানে জিজ্ঞাসা করলে সহজেই ভিটা খুঁজে পাবেন।“
‘সুবর্ণা শাড়ি’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয় যে এক বান্ধবীর শ্বশুরবাড়িও ওই গৌরনদী গ্রামেই। তার সেই বান্ধবী ২০১৬ সালে একাই গিয়ে শ্বশুরবাড়ি খুঁজে পেয়ে সেখানকার মাটি নিয়ে এসে উপহার দিয়েছেন শ্বশুরকে।
পোস্ট করার একদিন পরে ‘উদয় শঙ্কর’ ট্যাগ করেন ‘তুহিন ফরিদ’কে, জবাবে মি. ফরিদ জানান যে তিনি সেদিনই সশরীরে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন মি. ভট্টাচার্যের পৈত্রিক ভিটায় আর সেখানকার ছবিও তুলে পাঠিয়েছেন, আবার বর্তমান বাসিন্দাদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথাও বলিয়ে দিয়েছেন।
দেবাশীষ ভট্টাচার্য বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন যে তিনি কল্পনাও করতে পারেন নি যে মাত্র একদিনের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যাবে পৈত্রিক ভিটা।
“পুরো পরিবারে সে যেন একটা আবেগের বিস্ফোরণ ঘটল। আমরা বিশ্বাসই করতে পারি নি যে ওই বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে, তা-ও এত দ্রুত। ওখানে দুটি পরিবার এখন বাস করে, তাদের সঙ্গে কথাও হয়েছে আমাদের,” জানাচ্ছিলেন দেবাশীষ ভট্টাচার্য।
বঙ্গ ভিটার মাধ্যমে শিকড় খুঁজে পাওয়ার পোস্ট
ঢাকা আর সিলেটে মিলিয়ে মিশিয়ে থাকেন সুরঞ্জনা মায়া। তার বাবার বাড়ি ছিল মুর্শিদাবাদের জঙ্গীপুরে। তার বাবা, রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা আবুহেনা বাজলুল বাসিতের ডাক নাম ছিল টুনু।
“মুর্শিদাবাদের কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পরে বাবা ৫৩-৫৪ সালে ঢাকায় চলে আসেন পড়াশোনা করতে। তখন পূর্ব পাকিস্তানে আমাদের কোনও আত্মীয় স্বজন থাকত না। আমার ঠাকুমা নিজের গয়না বিক্রি করে ছেলেকে পড়তে পাঠিয়েছিলেন।”
”খুব কঠিন লড়াই করতে হয়েছিল বাবাকে। চাকরি নিয়েছিলেন, অনেক জায়গায় ঘুরে শেষে আবার ঢাকায় যখন আসেন, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাইট ক্লাসে ভর্তি হয়ে এমএ পাশ করেন, পরে আইন পাশ করেন,” বিবিসিকে বলছিলেন সুরঞ্জনা মায়া।
তার বাবা মাঝে মাঝেই মুর্শিদাবাদে যেতেন, শেষবার গেছেন ১৯৭৫ সালে।
মিজ মায়ার কথায়, “মা চলে যাওয়ার পর থেকে বাবা মাঝে মাঝেই ভীষণ ডিপ্রেশনে চলে যেতেন। আমি আর আমার বোন তখন বাবাকে মুর্শিদাবাদের গল্প বলতাম। বাবার এক বন্ধু দিলীপ কাকার কথা বলতাম। ওই নামটা শুনলেই বাবার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠত, বলতে শুরু করত দিলীপ কাকার কথা। আমরা তো সেই ছোট থেকে শুনে আসছি যে দিলীপ কাকা ১৭ বার বইজু বাওরা সিনেমাটা দেখেছিলেন! তবে বাবা একেবারেই মুর্শিদাবাদ যেতে চাইতেন না।”
“তার মনে গ্রামের যে ছবি মনে আছে, সেটাই হয়ত ধরে রাখতে চাইতেন। বোধহয় একটা ভয় ছিল যে যদি গিয়ে দেখেন যে সব কিছু পাল্টিয়ে গেছে, সেটা বাবার মনে ভীষণ কষ্ট দেবে,” জানাচ্ছিলেন সুরঞ্জনা মায়া।
গ্রামে আত্মীয়দের সঙ্গে হঠাৎই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বাবা মারা যাওয়ার পরে, ২০১৭ সাল থেকে। ওই আত্মীয়দের আবারও সুরঞ্জনা মায়া ফিরে পেয়েছেন ‘বঙ্গ ভিটা’য় পোস্ট দিয়েই।
মুর্শিদাবাদে ফেলে আসা বন্ধুর কথা যেমন মনে পড়ত মি. বাসিতের, তেমনই ছোটবেলার স্কুলের এক প্রিয় শিক্ষকের কথা খুব মনে পড়ত পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা থেকে বাংলাদেশে চলে যাওয়া আব্দুস সেলিমের।
তিনি পশ্চিমবঙ্গের বাগদা এলাকার চরমণ্ডল গ্রাম থেকে ১৯৯৫ সালে চলে গিয়ে এখন বাস করেন ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরে।
মি. সেলিম বলছিলেন, “আমি যে সিন্দ্রানী সাবিত্রী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়েছি, সেখানে খুব প্রিয় ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন মুহম্মদ ওয়াজ নবী মণ্ডল স্যার। ওই স্কুলে ছোটবেলায় ভর্তির পরীক্ষার সময়ে তিনিই আমাকে সাহস যুগিয়েছিলেন। এরপরে স্কুলে যতদিন পড়েছি তিনিই আমার প্রিয় স্যার ছিলেন। পরে শুনেছিলাম উনি প্রধান শিক্ষকও হয়েছিলেন।”
“আমি তারপর বেশ কয়েকবার গ্রামের বাড়িতে গেছি। সেখানে এখনও আমার তিন চাচা থাকেন। স্কুলেও গিয়েছিলাম, কিন্তু কোনওবারই স্যারের সঙ্গে দেখা হয় নি।”
”এদিকে আমি বঙ্গ ভিটা পেজটা অনেকদিন ধরেই ফলো করতাম। প্রতিদিন নিয়ম করে একবার অন্তত পোস্টগুলো দেখতাম। অনেকেই তো নিজের পৈত্রিক বাড়ি, অন্য দেশে হারিয়ে যাওয়া বন্ধু খুঁজে পাচ্ছে, একদিন মনে হল আমিও পোস্ট দিয়ে দেখি যদি স্যারের খোঁজ পাওয়া যায়!” বলছিলেন আব্দুস সেলিম।
তার ওই পোস্টেই আরেক শিক্ষক জানান যে মি. সেলিমের প্রিয় শিক্ষক ওয়াজ নবী মণ্ডল কয়েক বছর আগেই মারা গেছেন।
সেই রাতে ঘুমোতে পারেন নি মি. সেলিম।
শুধু পুরনো বাড়ি বা বন্ধু নয়, অন্য দেশে হারিয়ে যাওয়া মানুষকেও খুঁজে দিচ্ছে বঙ্গ ভিটা
ভারত আর বাংলাদেশ বা অন্য কোনও দেশে ছড়িয়ে পড়া মানুষদের শিকড় কোথায়, তা খুঁজে দিতেই সাইফুল ইসলাম ‘বঙ্গ ভিটা’ ফেসবুক পেজটি তৈরি করেন ২০২০ সালে।
আদতে নীলফামারি জেলার বাসিন্দা মি. ইসলাম এখন বাংলাদেশ সরকারের চাকরি সূত্রে ঢাকায় থাকেন। আর তার নেশা হল শিকড়ের সন্ধান করে বেড়ানো।
তিনি বলছিলেন, “আমরা তো এই ইতিহাস জানি যে ৪৬-৪৭ এর দাঙ্গার সময়ে পূর্ব বঙ্গের উচ্চবর্ণের হিন্দুদের ওপরে কী হত্যালীলা হয়েছে, তারা তাদের প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে চলে গেছেন। আবার দেশভাগের পরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশেও বহু মানুষ এসেছেন ভারত থেকে।”
“এই যে বাংলাদেশের নানা জায়গায় এত পরিত্যক্ত হিন্দুদের বাড়ি পড়ে আছে, সেসব নিয়ে আমি অনেকদিন ধরেই গবেষণা চালাই। জানার চেষ্টা করি যে এইসব প্রাচীন বাড়িগুলি কাদের, তাদের পরিবারের সদস্যরা এখন কোথায় এসব খুঁজে বার করার চেষ্টা করি। এই করতে করতেই বঙ্গ ভিটার জন্ম,” জানাচ্ছিলেন মি. ইসলাম।
পেজটি তৈরি হওয়ার পর থেকে গত চার বছরে ৭৩ হাজার ফলোয়ার হয়ে গেছে সেটির।
তিনি বলছিলেন, “বহু মানুষ ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন নিজের শিকড়ের সন্ধানে। তাদের স্থানীয় সহায়তা দরকার হয় ফেলে যাওয়া বাড়ি বা গ্রাম খুঁজতে। এমন একটা নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার প্রতিটিতে তৈরি করতে চেয়েছি, যেখানে প্রতি জেলায় অন্তত একজন করে থাকবেন, যিনি ভারত থেকে শিকড়ের খোঁজে আসা মানুষদের সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবেন।”
“স্থানীয়ভাবে গাইড যেমন করবেন তারা, আবার আর্থিক সামর্থ্য যাদের নেই, তাদের থাকা খাওয়ারও ব্যবস্থা করবেন, এমন একটা বন্ধু চক্র বানাতে চাই আমি,” বলছিলেন সাইফুল ইসলাম।
তার কথায়, গত চার বছরে শ পাঁচেক মানুষকে অন্য দেশে ফেলে আসা পৈত্রিক বাড়ি খুঁজে দিয়েছে তার সৃষ্ট ‘বঙ্গ ভিটা’ পেজটি।
“এর বাইরেও বহু মানুষ নিজের গ্রাম বা বাড়ির সন্ধান পেয়ে আমাদের জানান, ছবি পাঠান। অনেকগুলো আমরা পাবলিশও করে উঠতে পারি না,“ বলছিলেন মি. ইসলাম।
তবে মি. ইসলাম এটা স্বীকার করছিলেন যে তার পেজে ভারতীয়রাই বেশি খোঁজ করছেন পূর্ব বঙ্গে ফেলে আসা নিজের শিকরের। তুলনায়, ভারত থেকে যারা বাংলাদেশ বা পূর্ব পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন, এরকম মানুষের মধ্যে ফেলে আসা পৈত্রিক ভিটা বা বন্ধুদের খুঁজে বার করার ইচ্ছা কিছুটা যেন কম বলেই মনে হয়।
ভারতের দেবাশীষ ভট্টাচার্য বা বাংলাদেশের আব্দুস সেলিমের চোখেও এই ফারাকটা নজরে এসেছে।
আবার এটাও নজরে পড়ে যে বাংলাদেশের মানুষ যত বেশি উদ্যম নিয়ে ভারতীয়দের ফেলে আসা বাড়ি খুঁজে দেন, দরকার হলে সশরীরে গিয়েও খুঁজে দেন, উল্টোদিকে কোনও বাংলাদেশি যখন ভারতে ফেলে যাওয়া ভিটা খোঁজার অনুরোধ জানিয়ে পোস্ট করেন, একই পরিমাণ উদ্যম নিতে কিন্তু দেখা যায় না ভারতের মানুষদের।
কিন্তু সেই তুল্যমূল্য বিচারে না গিয়েও সুরঞ্জনা মায়া বলছিলেন, “ওই পেজের প্রতিটা পোস্ট আমি পড়ি, শিকড় খোঁজার এই আর্তি দেখে নিজের সঙ্গে আইডেন্টিফাই করতে পারি। চোখে জল চলে আসে অনেক পোস্ট পড়ে।
“এই পেজটা যেন দুটো দেশের মানুষকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে। কত মানুষের আশা যে পূর্ণ করছে এরা,” জানাচ্ছিলেন সুরঞ্জনা মায়া।
ঠিক যেমন শ্বেতা রায়, তার মা-মাসিদের, তার দাদুর আশা পূর্ণ হয়েছে পৈত্রিক বাড়ির ছবি দেখে। তবে এবার আর শুধু ছবি নয়, তারা ভাবছেন সবাই মিলে পরের বছর বাংলাদেশে গিয়ে নিজের চোখেই দেখে আসবেন ফেলে আসা বাড়ি, ছিন্ন হয়ে যাওয়া শিকড়টা।
বিবিসি নিউজ বাংলা
Leave a Reply