সারাক্ষণ ডেস্ক
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে রোববার দিবাগত মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে আসা এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের শুরু হয় রোববার রাত ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে।
ঘণ্টাখানেক পর হলগুলো থেকে মিছিল নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। রাত ১২টার দিকে টিএসসিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী সমবেত হন। বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দেন। আধা ঘণ্টা পর তাঁরা আবার টিএসসিতে চলে যান।
বছরের পর বছর ধরে বিসিএসের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা আমাদের জন্য কষ্টের। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুবিধা নিয়ে ক্রিমিনাল/বাটপাড়রা বিসিএসের মতো চাকরিতে চলে যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। এতে প্রকৃত মেধাবীরাই বঞ্চিত হন।
এ সংক্রান্ত এক রিট মামলার শুনানিকালে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ মন্তব্য করেন।
আদালত বলেন, বিসিএসের মতো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেন বারবার ফাঁস হবে। এটাই উদ্বেগের। পিএসসিতে যারা আছেন তারা কেন প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে পারছেন না। যদি না পারেন তাহলে এরা দায়িত্ব পালনে অযোগ্য।
সম্প্রতি বিসিএসের মতো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ‘সারডা সোসাইটির’ মুরাদ ভুঁইয়া। তিনি আদালতে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসে যারা জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন করতে হবে। ২৪ থেকে ৪৫তম বিসিএসের পরীক্ষায় আবেদ আলী কর্তৃক প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুবিধা নিয়ে যারা বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করতে হবে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে এই তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
এ পর্যায়ে আদালত বলে, তালিকা কীভাবে খুঁজে বের করবেন? রিটকারী বলেন, আবেদ আলী ও তার গংরা এই তালিকার বিষয়টি জানেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুজ্জামান বলেন, বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। আবেদ আলী অনেকের নামও বলেছে। হাইকোর্ট বলেন, ‘বেনজীরের মতো এতটা পাওয়ারফুল নয় আবেদ আলী। তবে ফাঁসকৃত প্রশ্ন যাদের কাছে বিক্রয় করা হয়েছে এবং যারা এর পেছনে রয়েছেন তারা পাওয়ারফুল। তদন্ত সংস্থা কি তাদের গ্রেফতারের ক্ষমতা রাখেন? যদি গ্রেফতারের ক্ষমতা নাই থাকে তাহলে সেভাবেই আদেশ দেওয়া হবে।’
হাইকোর্ট বলে, বেনজীর দেশের বাইরে গেছেন। নিশ্চয়ই কোনো না কোনো চ্যানেলে তিনি বাইরে গেছেন। আমরা শুনেছি বিমানবন্দর দিয়ে তিনি দেশের বাইরে গেছেন। বেনজীরকে চেনেন না এমন কোনো পুলিশ কর্মকর্তা নাই, তাহলে তিনি কীভাবে দেশের বাইরে গেলেন?’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উনি দেশের বাইরে গেছেন কি গেছেন না সেটা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। হাইকোর্ট বলে, ব্যাংকে ১ লাখ টাকার জন্য গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আর বেনজীর কোটি কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে গেছেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একটা পাবলিক পরীক্ষায় ৫ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে ১৫/২০ হাজার পাশ করেন। এদের মধ্য থেকে ২ হাজার মৌখিক পরীক্ষায় যান। অতএব, রিটকারী যে মেধাশূন্যের ধোঁয়া তুলছে সেটা ঠিক নয়।
হাইকোর্ট বলে, প্রশ্ন পেলে পাশ করা সহজ হয়ে যায়। এটা কেন মানছেন না। আর যারা দুর্নীতির আশ্রয় নেয় তারা ভাইভা বোর্ডে গিয়েও দুর্নীতি করে। শুনানি শেষে হাইকোর্ট এক সপ্তাহ শুনানি মুলতুবির আদেশ দেয়। এ সময়ের মধ্যে রিটের বিষয়বস্তুর উপর সরকারের অবস্থান কি তা জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে বলা হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাড়ানো হয়েছিল ঋণের সুদহার। সর্বোচ্চ ৯ থেকে বেড়ে ব্যাংক ঋণের সুদহার উঠেছে প্রায় ১৫ শতাংশে। যদিও এর সুফল ঘরে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছরজুড়ে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও কমেনি মূল্যস্ফীতি। উল্টো নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে বহু গুণ। এ অবস্থায় ঋণের সুদহার আরো বাড়ানোর পথে হাঁটছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে সুদহার বৃদ্ধির ঘোষণা আসতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটির সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে ওই সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মুদ্রানীতির খসড়া পাস হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গত দুই অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিও হবে ‘সতর্ক’ ও ‘সংকুলানমুখী’। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে বাজারে নিয়ন্ত্রণ করা হবে অর্থের প্রবাহ। এজন্য নীতি সুদহার (রেপো রেট) আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে নীতি সুদহার বাড়তে পারে ৫০ বেসিস পয়েন্ট। তবে এটি কার্যকর হতে পারে দুই ধাপে। বর্তমানে নীতি সুদহার ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যে সুদহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করে সেটিই নীতি সুদহার। এ সুদহার বাড়লে ব্যাংক ঋণের সুদও বাড়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, আগামীকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে নতুন মুদ্রানীতি পাস হবে। পরে ১৮ জুলাই তা ঘোষণা করা হবে। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গভর্নরের মুদ্রানীতি ঘোষণার প্রথা চালু থাকলেও এবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হবে। মূলত সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারের ইস্যুতে মতবিরোধের জেরে প্রচলিত প্রথা থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দেশে গত দুই অর্থবছরজুড়েই ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। যদিও সে হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তার জন্য ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশের সীমাও তুলে নেয়া হয়। একই সঙ্গে দফায় দফায় বাড়ানো হয় নীতি সুদহার। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত অর্থবছরের মধ্যেই ঋণের সুদহার ৯ থেকে বেড়ে প্রায় ১৫ শতাংশে ঠেকে। যদিও সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব এখনো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান হয়নি। সর্বশেষ জুনে দেশের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, টানা ১৬ মাস ধরে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা যদিও বলছেন, বিবিএসের তথ্যের চেয়ে দেশের প্রকৃত মূল্যস্ফীতি আরো অনেক বেশি। প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে হিসাবায়ন না করায় মূলত এর সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে প্রতিবেশী প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতি বাড়লেও সাম্প্রতিক সময়ে তা কমে এসেছে। এক বছর ধরে ভারতের মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের নিচে রয়েছে। সর্বশেষ জুনেও প্রতিবেশী দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের সাফল্য পেয়েছে পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩১ শতাংশের বেশি। চলতি বছরের জুনে এসে সে হার ১২ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলংকার মূল্যস্ফীতি প্রায় ৫২ শতাংশে উঠলেও বর্তমানে তা ১ শতাংশেরও কম। চলতি বছরের মে মাসে শ্রীলংকার মূল্যস্ফীতি ছিল দশমিক ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর পড়েছে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাজারে পণ্যের দাম আরো বাড়ছে। আবার ব্যবসায়িক মন্দা ও সুদহার বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এতে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও হার দুটিই বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জেরে ‘তুমি কে, আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’, ‘ কে বলেছে কে বলেছে, সরকার সরকার’ স্লোগান দিয়ে মিছিল করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। স্লোগান দিতে দিতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইনগেটের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন।
রোববার রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে বিভিন্ন হল থেকে ঝটিকা মিছিল করতে করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইনগেটে জড়ো হয়ে রাজাকার রাজাকার স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় প্রধান সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন তারা। অন্যদিকে ছাত্রীদের হলে তালা মারা থাকলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একদল সেখানে গেলে হলের তালা খুলে দেন প্রহরীরা। তারাও মিছিল করতে করতে জোহা চত্বরে এসে বিক্ষোভ করছেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার, ‘তুমি কে, আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’, কে বলেছে কে বলেছে, সরকার সরকার’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’ এমন সব স্লোগান দিতে থাকে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, যৌক্তিক দাবি আদায়ে যেকোনো বাধা মোকাবিলা করতে আমরা শিক্ষার্থী সমাজ প্রস্তুত রয়েছি। যে রাজাকাররা বৈষম্য বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলে বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ সেই রাজাকার হতে পেরে গর্বিত।
Leave a Reply