শ্রী নিখিলনাথ রায়
কিন্তু লুৎফ উন্নেসা তাহার প্রতিও বৃত্পাত না করিয়া, স্বামীর কণ্ঠ নিবারণার্থ অত্যন্ত ব্যাকুলা হইয়া উঠিলেন। এইরূপে তিন দিন তিন রাত্রি অনাহারে কাটাইয়া তাঁহারা রাজমহলের নিকট উপস্থিত হন। এই সময়ে সিরাজ আপনাদিগের জন্য কিছু খিচুড়ী প্রস্তুতের ইচ্ছা করেন। দানাশাহ নামে এক ফকীর তাঁহাদের জন্য আহার প্রস্তুত করিবার ভার লয়। কিন্তু সে গোপনে মীরজাফরের জামাতা ‘মীর কাশেম ও ভ্রাতা মীর দাউদকে সংবাদ দিলে, তাঁহারা সিরাজকে ধৃত করিয়া মুর্শিদাবাদে পাঠাইয়া দিলেন।
ঐ সকল কর্মচারী স্ত্রীলোকদিগের নিকট হইতে যাবতীয় ধনরত্নাদি অপহরণ করেন। মীরকাশেম লুৎফ উন্নেসার নিকট হইতে যাবতীয় সম্পত্তি লুণ্ঠন করিয়াছিলেন। মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হওয়ার পর, হতভাগ্য সিরাজ মীরণের আদেশক্রমে মহম্মদী বেগের তরবারীর আঘাতে খণ্ডবিখণ্ডিত হইয়া খোসবাগের বৃক্ষচ্ছায়ায় চিরদিনের জন্য সমাহিত হইলেন। তাঁহার পরিবারবর্গের দুর্দশা শ্রবণ করিলে, হৃদয় স্তম্ভিত হইয়া উঠে। নবাব আলিবন্দী খাঁর বেগমকে তদীয় কন্যান্বয় ঘসেটী ও আমিনার সহিত চিরনির্ব্বাসিতা করা হইল।
সেই সঙ্গে পতিবিয়োগবিধুরা অভাগিনী লুৎফ উন্নেসাও স্বীয় চারি বৎসরের কন্যা উম্মত জহুরাকে লইয়া মুর্শিদাবাদ ত্যাগ করিতে বাধ্য হন। প্রথমে তাঁহাদিগকে যৎপরোনাস্তি লাঞ্ছনার সহিত কারারুদ্ধ করিয়া, পরে নির্ব্বাসনের অনুমতি দেওয়া হয়। যে নবাব আলিবর্দী খাঁর আদর্শ শাসনে বঙ্গের প্রজাগণ বিঘ্নরাশির মধ্যেও শান্তিলাভে সমর্থ হইয়াছিল, তাঁহার পরিবারবর্গের এরূপ দুর্দশা অতীব কষ্টজনক, তাহাতে অণুমাত্র সন্দেহ নাই। তাঁহীরা ঢাকায় নির্ব্বাসিত হইয়া অতি কষ্টে দিন যাপন করিতে লাগিলেন।
সেই রাক্ষসপ্রকৃতি মীরণ ইহাতেও সন্তুষ্ট না হইয়া আলিবদ্দীর কন্যাদ্বয়কে জলমগ্ন করিতে আদেশ প্রদান করে, তাহার সে আজ্ঞাও প্রতিপালিত হইয়াছিল।কিছুকাল ঢাকায় বাসের পর লুৎফ উন্নেসা ইংরেজদিগের যত্নে মুর্শিদাবাদে পুনরানীতা হইয়া, নবাব আলিবর্দী ও সিরাজের সমাধি খোসবাগের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত হন। উক্ত তত্ত্বাবধানের জন্য মাসিক ৩০০ টাকা নির্দিষ্ট ছিল; তদ্ভিন্ন তিনি মাসিক ১০০ টাকা বৃত্তিও পাই- তেন। • আজিমাবাদস্থ হাজী আহম্মদের সমাধির তত্ত্বাবধানের ভারও তাঁহার প্রতি অর্পিত হইয়াছিল।
Leave a Reply