গ্রেটা থানবার্গ
বিদ্রোহের ঘোষণা, বিদ্রোহের মৃত্যু
পার্লামেন্ট স্কোয়ার, লন্ডন, ৩১ অক্টোবর ২০১৮
আমার বয়স যখন মাত্র ৮ বছর ঠিক সেই সময়ে আমি প্রথমবারের মতো জলবায়ু এবং বিশ্ব উষ্ণতার ব্যাপারেও সম্পর্কে সামান্য কিছু জানতে পারি। প্রকৃতপক্ষে সেটা ছিল এমন যে, মানুষই আমাদের জীবনের বাঁচার পথে কিছু একটা করছে। আমাকে বলা হয়েছিল বাতিটা অসময়ে নিভিয়ে রাখতে এবং কাগজকে রিসাইকেল করতে যাতে সম্পদ বাঁচে।
আমি এটা মনে করতে পারছি যে, আমার কাছে সেসময় খুবই আশ্চর্য লেগেছিল যে মানুষ যে কিনা একটা প্রাণী প্রজাতি সে কিনা পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন করতে পারে।
কারন আমরা যদি তাইই হই তাহলে আমাদের উচিৎ না কোনো ব্যাপারেই কথা বলা।আজকাল তুমি যখনই টিভি খুলবে, দেখবে এ ব্যাপারেই সবাই কথা বলছে। হেডলাইনস, রেডিও নিউজপেপার ইত্যাদি। তুমি আর অন্য কোনো কিছু শুনতে ও দেখতে পাবেনা। যেন একটা বিশ্বযুদ্ধ চলছে।
কিন্তু। এ ব্যাপারে কেউ কথা বলেনি। কখনো না। যদি ফসিল ফুয়েল আমাদের জন্যে খারাপও হয় , আমাদের জন্যে হুমকিরও হয় তাহলে আমরা কিভাবে আগের মতো চালিয়ে যাবো ? আমার কাছে সেটি যোগ হয়নি। এটা খুবই অসত্য।
আমার আ্যাসপাগাস সিনড্রোম আছে, এবং আমার কাছে সবকিছুই সাদা কালো।
আমি মনে করি বিভিন্ন ভাবেই আমরা প্রতিবন্ধিরাই স্বাভাবিক আর বিশ্বের বাকী সবাই খুবই অদভূদ রকম সুন্দর। তারা বলছে যে জলবায়ুর পরিবর্তন হলো একটি টিকে থাকার হুমকি এবং টিকে থাকার জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সবসময়ের জন্যে। এবং তবুও তারা আগের মতোই চালিয়ে যেতে চায়। যদি নির্গমন বন্ধ করতে হয় তাহলে অবশ্যই করো। তারপর আমরা নির্গমণ অবশ্যই থামাবো। আমার কাছে সেটি সাদা কালো। এখানে কোনো গ্রে এলাকা নাই যেখানে অস্তিত্বের প্রশ্ন আসে। হয় আমরা একটি সভ্যতার সাথে বাস করবো নয়তো নয়।
আমাদেরকে পরিবর্তন করতেই হবে।
২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতার নীচে থাকতে চাইলে সুইডেন এবং ইংল্যান্ডের মতো দেশকে প্রতিবছর কমপক্ষে ১৫% নির্গমণ কমাতে হবে।
এখন আইপিসিসি বলছে, আমাদেরকে লক্ষ্য হবে ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। যাতে আমরা কল্পনা করতে পারি আমরা কি বোঝাতে চাই। আপনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন যে আমাদের নেতারা এবং মিডিয়া কোনো কিছুই নিয়ে ভাবছেনা যা কেউ উল্লেখ করছে। এমনকি কেউ গ্রীনহাউজ গ্যাস ইতোমধ্যে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আটকে গেছে এমনকি বায়ূ দূষণও উষ্ণতাকে লুকিয়ে রাখছে, তাই যখন আমরা জীবাষ্ম জ্বালানী পোড়ানো বন্ধ করবো সাথে সাথে আমরা অতিরিক্ত ০.৫-১.১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পাওয়ার গ্যারান্টি পাবো।
এমনকি কেউ এখনো এমন কথা উল্লেখই করেননি যে, আমরা এখন নিশ্চিহ্ন হওয়ার ষ্ষ্ঠ ধাপে অবস্থান করছি যেখানে প্রতিবছর প্রায় ২০০ প্রজাতির জীব নিশ্চিহ্ন হচ্ছে।
আবার, কেউ ন্যায়পরায়ণতার কথাও বলছেনা অথবা জলবায়ু ন্যায়পরায়ণতা যেটা পরিষ্কার ভাবে প্যারিস চুক্তি এবং কিওটো প্রোটোকলে উল্লেখ আছে যেটা প্যারিস চুক্তিকে সত্যিকারে কার্যকর করে তোলে।
তার মানে ধনী দেশেগুলোর উচিৎ তাদের নির্গমন ৬ থেতে ১২ বছরের মধ্যে শূণ্যতে নামিয়ে আনা যাতে গরীব দেশের মানুষেরা বিভিন্ন স্থাপনা তৈরী করে তাদের জীবন মান উন্নীত করতে পারে যেমনটা আমরা করেছি। যেমন , রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, স্কুল এবং বিশুদ্ধ পানি। কারন আমরা কেমনে ইন্ডিয়া বা নাইজেরিয়ার মতো জলবায়ু সমস্যাকে দেখতে পারি যেখানে আমাদের সবকিছু থাকা সত্বেও আমরা প্যারিস চিুক্তির কোনো কিছুই মানছিনা।
অতএব কেন আমরা আমাদের নির্গমণ কমাচ্ছিনা ?
তারা কেন এখনো বাড়িয়ে চলছে ? আমরা কি জেনে বুঝেই নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন করছি আমরা কি শয়তান?
না, মোটেইনা। জনগণ প্রতিদিন যা করে তা করেই যায় তাদের কাছে এর ফলাফল বিচারের কোনো ক্লু নেই। তারা জানেনাওনা যে আমাদের খুব দ্রুত পরিবর্তন দরকার ।
যেহেতু আমি আগে যেমন বলেছি, কেউই এমন করে বলেনা। এব্যাপারে নেই কোনো নিউৃজের হেডলাইনস, নাই কোনো জরুরী মিটিং এমনকি কোনো ব্রেকিং নিউজও। কেউ কোনো কিছুই করছেনা যেন আমাদের কোনো সমস্যাই নাই। এমনকি বেমীরভাগ গ্রীন রাজনীতিবিদরা এ নিয়ে সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়ান ঠিকই , কিন্তু তারা শুধু খাওয়া দাওয়াই করেন।
আমি যদি ১০০ বছর বাঁচতে চাই তাহলে আমাকে ২১০৩ সাল পর্যন্ত বাঁচতে হবে।
আজ যদি আপনি ভবিষ্যতের কথা ভাবতে চান তা আপনি ২০৫০ সালের মধ্যে ভাবতে পারেননা।সেসময় পর্যন্ত আমি অর্ধেক সময় পর্যন্তও বাঁচবোনা। এরপরে কি হবে ?
২০৭৮ সালে আমি আমার ৭৫ তম জন্মদিন উৎযাপন করবো। এখন আমরা কি করছি বা না করছি সেটা আমাদের সন্তান ও আমাদের গ্র্যান্ড চিলড্রেনদের আঘাত করবেই।
এ বছরের আগস্টে আমার স্কুল শুরু হয়েছিল আমি সিদ্ধান্ত নিলাম , যথেষ্ঠ হয়েছে। আমি সুইডিস পার্লামেন্টের বাইরে বসে পড়লাম। আমি স্কুল স্ট্রাইক করলাম জলবায়ুর জন্যে।
অনেক লোক বলর, আমার স্কুলেই ফিরে যাওয়া উচিৎ। কেউ বলছে লেখাপড়া করে আমার জলবায়ু বিজ্ঞানী হওয়া উচিৎ যাতে আমি এ্রর সমস্যা সমাধান করতে পারি। কিন্তু জলবায়ু সমস্যা ইতোমধ্যে সমাধান হয়ে গেছে।
আমাদের ইতোমধ্যে সবকিছুই আছে , সমাধানও আছে। যা আমাদের সবার একসঙ্গে করা উচিৎ তাহলো-জেগে ওঠা এবং পরিবর্তন করা। কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে কেন আমাদের লেখাপড়া করতে হবে যেখানে ভবিষ্যৎ বাচানোর জন্যে কেউ কোনো কিছুই করছেনা।
আমাদের শিক্ষার মূল বিষয় কি যা স্কুলের সিস্টেমে দেয়া আছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ সেখানে দেয়া আছে যা আমদের রাজনীতিবিদরা জানেনা এবং আমাদের সমাজও না।
অনেক মানুষই বলছে সুইডেন একটা অতি ক্ষুদ্র দেশ তাই আমরা কি করতে পারি, এতে কিছু আসে যায়না। তাই আমি মনে করি আমরা কতিপয় স্টুডেন্ট যদি কয়েক সপ্তাহ স্কুল বর্জন করে বিশ্বে নিউজ হেডলাইন সৃষ্টি করতে পারি তাহলে সারা বিশ্বের শিশুরা একত্রিত হলে কি অবস্থা দাঁড়াবে,ভাবতে পারেন ?
সারাবিশ্বে একদিনে আমরা ১০০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ব্যবহার করি।
কারন আইনটা অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। সবকিছু্রই পরিবর্তন দরকার। এবং এটি এখনই শুরু করা প্রয়োজন। তাই সবাইকে বাইরে আসতে হবে: এখন জনগনকে আইন ভাঙতে হবে। এটি বিদ্রোহের সময়।
Leave a Reply