শিবলী আহম্মেদ সুজন
অন্যদিনের চেয়ে আজকের দিনটি একটু ভিন্ন।আকাশটা এই রোদময় আবার মেঘাছন্ন।ঘুম থেকে উঠে জাহিদ ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।বাসা থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে রিক্সায় চড়ে মিরপুর ১৪ নম্বরে বাস স্ট্যান্ডে এসে নামল।বাস স্ট্যান্ডে সবগুলো বাস দাঁড়িয়ে বাসের দরজা গুলো বন্ধ।
জাহিদ বাসের হেলপার’কে জিজ্ঞেস করলো ভাই বাস আজকে কি যাবে না নাকি? হেলপার উওরে বললো, না ভাই আজকে বাস যাইবো না আজকে হরতাল।কোন উপায় না পেয়ে হাটা শুরু করলো জাহিদ।কচুক্ষেত রজনীগন্ধা সুপার মার্কেটের সামনে গিয়ে দেখতে পেল একটা বাস দাঁড়িয়ে আছে বাসে উঠে একেবারে শেষের দিকের সিটে জানালার পাশে গিয়ে বসল সে। আজকে যে পরিমানে গাড়ি যানজটে আটকা পড়ে আছে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় এরকম যানজট কখনই হয়নি।
কিছু যাত্রী বলছিল আজকে এইচ এস সি পরীক্ষা তাই এমনটা যানজট লেগেছে।আবার অনেক পথচারী বলছে, ক্যান্টনমেন্টের রাস্তা থেকে শুরু করে বনানী পুরোটা জুড়েই যানজট।অনেক যাত্রী বাস থেকে নেমে গেল। ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট বাসে বসে থাকার পর জাহিদ বাস থেকে নেমে আবারও হাঁটা শুরু করলো।
জাহিদ সৈনিকক্লাব মোড়ে গিয়ে দেখতে পেল মহাখালি—এয়ারপোর্টের রাস্তা পুরোটাই জ্যাম হয়ে আছে।রাস্তায় বাস,প্রাইভেট কার ও বিভিন্ন ছোট-বড় গাড়ি দাঁড়িয়ে। অনেকে হেঁটেই তাদের নিজ কর্মস্থলে পৌছাচ্ছে।জাহিদ হেঁটে বনানী কাকলী ফুট ওভার ব্রিজে উঠে দেখতে পেল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে কলেজের ছাত্র—ছাত্রীরা একত্রিত হয়ে রাস্তা ব্লক করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছে।
কেউ হাতে বাংলাদেশের পতাকা,কেউ কেউ আবার হাতে প্লে—কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্লোগানে যেন মুখোরিত পুরো রাজপথ। প্লে—কার্ডে লেখাঃআমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই,কোটা প্রথা নিপাত যাক মেধাবীরা মুক্তি পাক, ৭১ এর হাতিয়ার গর্জে উঠো আরেকবার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র—ছাত্রীদের মুখে স্লোগান— চেয়েছিলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার,কোটা নাকি মেধা? মেধা…মেধা! যা দেখতে দেখতে জাহিদের মনে হলো এটা অন্য একটা দিন। যে দিনটি হয়তো মিলবে না অন্য কোনদিনের সঙ্গে। তবে চারপাশে শুধু তরুণ আর কিশোর মুখ। কত সুন্দর ফুলের মতো মুখগুলো। সেই সব ফুলের মতো মুখগুলো দেখতে দেখতে এগিয়ে যায় উদাস মনে জাহিদ। তার মনে হয় কেন পিচ ঢালা রাস্তায় এমন ফুল ফোটে?
Leave a Reply