বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:০১ অপরাহ্ন

পৃথিবীর কমসংখ্যক মানুষ যে ধর্ম পালন করে

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪, ৩.৪৮ পিএম

ডিসেম্বরের এক সকালের গল্প।

ভারতের একটি ছোট শহর উদ্ভারার একটি গেস্ট হাউস। পুনে থেকে সাত ঘন্টার পথ যেখানে সে অবস্থান করছিল সেই গেস্ট হাউসের বিছানাটা নিজের বাড়ির বিছানার মতো এতটা মোলায়েম ছিলনা। সামনের পাটির দুটো দাঁত ছিলনা তাই সাবধানে ব্রাশ করে নিলো। এ সময়ে মনে মনে মাস ধরে মুখস্থ করা দুটো শাস্ত্রীয় শ্লোক আওড়াচ্ছিল। তার বয়স সাত। দুটি শিশুর মধ্যে সে বড়। আজই  তার বয়স হলো পরিবারকে সাথে নিয়ে তার জন্মসূত্রে পাওয়া প্রাচীন ধর্মে দীক্ষিত হতে।

সূর্যের তাপ বাড়ার সাথে সাথে আরিয়া, তার বন্ধুরা ও পরিবারের সদস্যরা মিলে একটি রাস্তা ধরে বিশাল ইট-কাঠ-পাথরের তৈরী ইরানশাহ আতাশ বাহরাম মন্দিরের দিকে হেঁটে চলছে।মন্দিরের প্রবেশ পথেই রয়েছে বিশাল মানবমূর্তি ও ডানাওয়ালা ষাঢ়। এই মূর্তিগুলোই মনে করিয়ে দেয় যে যারা ধর্মীয় রীতির যথেষ্ঠ শূদ্ধতা অর্জন করতে পেরেছে কেবল তারাই এখানে প্রবেশের এক্তিয়ার রাখে। এটিকে ভারতের একটি অন্যতম পবিত্র স্থান বলে গণ্য করা হয়।

 উজবেকিস্তানে জরোয়াস্ট্রিয়ানদের তৈরী ক্ষয়ে যাওয়া দুর্গ বা পবিত্র অগ্নি মন্দির ।

পরম্পরাগতভাবে, আরিয়ার পিতৃপুরুষ ১৩০০ বছর পূর্বে আরব মুসলিমদের অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে নিরাপত্তার জন্যে ভারতের গুজরাতে এসেছিল। এই আরব সাগরের তীরে তারা তাদের বিশ্বাসের রীতিকে আবার ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল। তার সাথে তারা এমন একটি আগুন বয়ে   এনেছিল যেটি ১৬ টি ভিন্ন আগুন থেকে সংগ্রহ করতে হয়েছিল। এই আগুন যা কামারের চুলো থেকে বজ্রপাত পর্যন্ত মিশ্রিণে তৈরী। সাদা পোশাকে আবৃত পুরোহিতের তত্বাবধানে এই আগুন অনবরত জ্বলছে।

এই আগুন আজকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া বিশ্বস্ত এক সম্প্রদায়ের।

মন্দিরের ভিতরে আরিয়া পবিত্র জলে স্নান করে নিলো ,তারপর তিন চুমুক ষাঢ়ের বিশুদ্ধ গোমুত্র পান করলো এবং এক সেট সাদা পরিষ্কার কাপড় পরিধান করলো। তারা সবাই একটি সিলভার পাত্রের ভিতরে প্রজ্জলিত শিখার চারপাশে এসে জড়ো হলো । তাদের প্রার্থনা বাতাসে ধ্বণিত হতে লাগলো যা ৩,৫০০ বছর আগে থেকে প্রতিদিন পাঠ করা হয়। আরিয়া আওড়াতে লাগলো: “ফ্রাভারানে মাজডায়াসনো জরাথ্রুসটিস ভি ডায়েভো আহুরা –থায়েসো।” এর মানে হলো- আমি স্বীকার করে নিচ্ছি যে, আমি সৃষ্টিকর্তা আহুরা মাজডার একজন অনুসারী,  যেটি নবী জরাথ্রুস্টা হতে আগত ।

 

আরিয়া এবং তার পরিবার হলো পৃথিবীর এককোণে সবচেয়ে ছোট এবং সংখ্যায় কম যারা ধর্মমতে বিশ্বাসী বা অর্থোডক্স যেখানে জরাষ্ট্রিয়ান সর্বপ্রথম এসেছিল এবং এই ধর্ম প্রচার করেছিল। ১ লাখেরও কম অনুসারী যারা এখনো ইরানের প্রাক্তন পার্সিয়ান সাম্রাজ্যে, ভারতে এবং পাকিস্তানে রয়ে গেছে। কিন্ত গত শতাব্দীতে এই বিশ্বাস ঘুরেছে পৃথিবীর আনাচে কানাচে।  লস এন্জেলেস থেকে মেক্সিকো সিটি এবং স্টকহোম পর্যন্ত এই ধর্মের বিশ্বাস ঘুরে ঘুরে মানুষকে উদ্বুদ্ধ  করেছে । আর এভাবেই যারা প্রাচীন এই নবী জরাথ্রুস্টাকে অনুসরন করেছে তাদেরকে জরোয়াষ্ট্রিয়ান হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

পৃথিবীর কল্পনায়, জরাষ্ট্রিয়ানিজম কিছুটা প্রাচীন এবং রহস্যময়।

কিন্তু মূল নীতি সারাবিশ্বের মানষের কাছে একই: খারাপের বিপরীতে ভালো, পূনরুথ্থান এবং পরজীবন। এর মূলে রয়েছে হিউমাটা, হুকতা, হারসতা: ভালো চিন্তা, ভালো কথা ও ভালো কাজ। ঐতিহ্যমতে, জরাথ্রুস্টা- গ্রীকের জরাস্টার হলো একজন অসন্তুষ্ট পুরোহিত যিনি অনেক ধর্ম বিশ্বাসী এবং নদী থেকে উঠে এসেছিলেন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আহুরা মাজডা থেকে ধর্মোপদেশ গ্রহণ করেছিলেন। এটা এখনো নিশ্চিৎ না যে কোথায় এবং কখন জরাথ্রুষ্টা বাস করতেন । অনেক আধুনিক পন্ডিতরা জরাথ্রুস্টাকে জরাস্ট্রিয়ান ধর্ম বই আভিস্টা থেকে তার বর্ণনা দিতেন এবং সেই মতে, তিনি ১৭০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টপূর্বে মধ্য এশিয়া তথা আধুনিক আফগানিস্তান অথবা তাজিকিস্তানে তার অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। তার সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি তার একমাত্র কাজিনকেই অনুসারী বানাতে পেরেছিলেন। কিন্তু ৬০০ (বি.সি) শতাব্দীর দিকে জরাস্ট্রিনিয়াজম আকিমিনিয়ান পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন এবং বড় সুপারপাওয়ার পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের সাথে যুক্ত ছিল । এভাবে এই জরাথ্রুস্টার মতবাদ সিল্ক রোড হয়ে সুদূর পশ্চিম চায়না হয়ে বলকানের ছোট ছোট পাহাড়ী মাজারগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছিল।

জরাস্ট্রিয়ান বিশ্বাসের দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

এক মহাশক্তিতে বিশ্বাসী এবং খারাপের বিপরীতে ভালোর জয় যা আব্রাহামিক ধর্ম বিশ্বাসের উপরে গভীর রেখাপাত করে-যেমন জুডাইজম, খ্রীস্টীয় এবং ইসলামিক। সাইরাস , দি গ্রেট  যিনি আকিমিনিয়ান পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ইহুদিদের খ্রীষ্টপূর্ব  ৫৩৯ এ ব্যাবিলন থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং জেরুজালেমে ফেরত পাঠিয়েছিলেন যেখানে তারা তাদের মন্দিরকে নতুনভাবে নির্মাণ করেছিলেন।  ব্যাবিলনীয়া ও পার্সিয়াতে  জরাস্ট্রিনিয়াজমের আবির্ভাবে অনেক পন্ডিতরাই বিশ্বাস করেন পরজন্মে এবং শেষ বিচারে। প্রাচীন গ্রীকরা জরাস্ট্রিয়ান সিনিয়রদের বিজ্ঞতা নোট করে রাখতেন। সেখান থেকেই  নিউ টেস্টামেন্টের  তিনজন জ্ঞানীর জন্ম নেয়। এবং জ্ঞানীরা এতেই জরাস্ট্রিয়ানিজমের সাথে মুসলিমদের পাঁচবেলা নামাজ আদায় ও অজুর প্রথার  মিল খুঁজে পান এবং নোট রাখেন। জরাস্ট্রিয়ান গড কোনো মাধ্যমও নন এমনকি কোনো শাস্তির দেবতাও নন। এখানে কোনো আসল পাপের অস্তিত্ব নেই এবং অনুশোচনারও কোনো দরকার পড়েনা।বরঞ্চ, জরোয়াস্ট্রিয়ান গড হলো শক্তির মতো এবং সকলের প্রতিদিনের ভাল কামনার জন্যে। তোমার কাজ হলো ‘আশার’ (সত্য, ন্যায়পরায়ণতা এবং আদেশ) জন্যে যুদ্ধ করা  এবং দ্রুজ এর বিরুদ্ধে (ঘৃণা, মিথ্যা এবং সমস্যা তৈরী করা থেকে বিরত থাকা)।

মৃত্যুর পরে, তোমার আত্মা তোমার অভিভাবকের আত্মার সাথে মিলিত হয় এবং গানের জগতে বাস করতে শুরু করে। তারপর আসে চূড়ান্ত যুদ্ধ যখন ভালো জয়ী হয় মন্দের বিরুদ্ধে এবং সবাই একটি সুন্দর পৃথিবীতে বাস করতে শুরু করে যেখানে যুদ্ধ নেই, ক্ষুধা নেই এবং নেই কোনো পার্থিব ভোগের ইচ্ছা।

-চলবে

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024