ফয়সাল আহমেদ
আজ বৃহস্পতিবার, বলছি গত বৃহস্পতিবারের কথা- (১৮ জুলাই) বৃহস্পতিবার ঘুম থেকে উঠেই দেখি বাইরে ঝামেলা চলছে। বাসার নিচে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে কারো হাতে লাঠি বা কারো হাতে দা। পাশের রুমের একজন বলছে নাবিস্কো মোড় থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীর ধাওয়া খেয়ে ওরা এদিকে এসেছে।
আমি রেদোয়ান, আমি একজন গণমাধ্যম কর্মী। আমার অফিস দুপুর একটা থেকে। বাহিরে অনেক ঝামেলা বোঝা যাচ্ছে কিন্তু কতটা তা ঠিক আন্দাজ করা যাচ্ছে না। বাসার নিচে ওরা কারা জানিনা হাতে দা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে। এই অবস্থায় সাহস পাচ্ছি না নিচে নামার। আবার অফিসেও যেতে হবে। তারপরও একটু ঝুঁকি নিয়ে বাসার পিছনের গলি দিয়ে বের হলাম। নাবিস্কো মোড়ে দেখি প্লাস্টিকের চেয়ার টেবিল ভাঙ্গা , অফিস ভাঙ্গা এবং টায়ারে আগুন জ্বলছে। হঠাৎ দেখি দৌড়ে আসছে দুইপাশ থেকে কিছু সংখ্যক লোক। দেখে আমিও বিপরীত দিকে দৌড় দিলাম। দূরে এক জায়গায় দাঁড়ালাম দেখি দুই দল একে অপরের গায়ে ইট পাটকেল মারছে। কিছুক্ষণ ইট পাটকেল মারার পর উভয় দলই বুঝতে পারে তারা একই দলের লোক। পরবর্তীতে ঘটনাটি ওখানেই থেমে যায়। গাড়ি ঘোড়া সব বন্ধ। কিভাবে যাবো বুঝতে পারছিলাম না, হাটা ধরলাম মহাখালীর দিকে। সামনে হাজার হাজার স্টুডেন্ট। বেশির ভাগই তিতুমীর কলেজ এবং বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী। আন্দোলন করছে কোটার বিরুদ্ধে। তাদের দাবি কোটা সংস্কার।
তাদের স্লোগান ছিল কোটা না মেধা? মেধা মেধা!
মহাখালী ফুটওভারের নিচে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী। সম্পূর্ণ রাস্তা বন্ধ করে তারা তাদের দাবি জানাচ্ছে। অপরপ্রান্তে আমতলীর ওই দিক থেকে পুলিশ বাহিনী ফাঁকা গুলি করে ছাত্রদের প্রতিহত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কোনভাবেই পিছু হটছে না। তারা তাদের দাবি বহাল রেখে সমস্ত যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছে। এরমধ্যে দেখলাম কিছু কিছু শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় আছে। আমি মহাখালী কাচাঁ বাজার পর্যন্ত যাওয়ার পর আমাকে আর এগোতে দেয়নি।
কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে চারপাশটা দেখছি এ যেন এক শ্মশান, চারপাশে কালো ধোয়া ও টায়ার পোড়ার গন্ধ অপর দিকে গুলির শব্দ। তবুও শিক্ষার্থীদের কারো মাঝে কোন ভয় নেই। এ দাবি তারা সফল করে পরেই হয়তো ঘরে ফিরবে।
ঐদিন আর অফিসে যাওয়া হলো না ফিরে এলাম বাসায়। ফেরার সময় দেখি ওই যে একদল লোক হাতে দা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা এখনো আমার বাসার সামনে। কিছুটা ভয় নিয়ে তাদের সামনে দিয়ে বাসায় ফিরলাম। কেমন ভাবে যেন তাকিয়ে ছিল সবাই।
বাসায় আসার পর দীর্ঘ একটি শ্বাস ফেললাম। কী হচ্ছে দেশে, কেন হচ্ছে? সাধারণ শিক্ষার্থীরা কি ভুল কোন দাবি জানাচ্ছে, এটা কি ওদের অধিকার না?
ফেসবুক অন করে বিভিন্ন জায়গা থেকে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর খবরও শুনতে পেলাম। বারবার মনে হচ্ছিল সামান্য এই ব্যাপারটা নিয়ে শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক একটি দাবি করছে আর তার জন্য শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলা হচ্ছে। কীভাবে সম্ভব?
এসব ভাবতে ভাবতেই রাত হয়ে গেল আর রাত আটটার পর থেকে নেট বন্ধ হয়ে গেল সারাদেশে। ঐ রাতে আর তেমন ঘুম হলো না।
Leave a Reply