সারাক্ষণ ডেস্ক
সোভিয়েত ই্উনিয়নের পতনের পর কিউবানরা আশাবাদি হয়েছিলেন। আজ চলছে সেখানে যুদ্ধ অর্থনীতি। ১৯৯০ এর পরে এখন রাজধানী হাভানার রাস্তায় সবকিছুরই ঘাটতি চোখে পড়ে।
কিউবা কম উৎপাদন করে কিন্তু পর্যাপ্ত : একসময় তারা চিনি উৎপান করে সারা বিশ্বে সরবরাহ করতো। ডিম নয় , এখন তারা কলম্বিয়া থেকে তা আমদানি করে আর গুঁড়া দুধ পায় জাতিসংঘ থেকে কারন সবকিছুতেই নিষেধাজ্ঞা।
অর্থনৈতিক সমস্যা সম্প্রতি দুই স্তরে বেড়ে গিয়েছে।
প্রথমত: কমিউনিস্ট সরকার দেশের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে, তবে এটা নয় যে তাদের শাসনকাল শেষ হচ্ছে। কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়ান ক্যানেলে এই মাসে বলেছেন,“ আমাদের সকলের উচিৎ বিদ্রোহ এবং সমাজতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখা।”
দ্বিতীয়ত: সরকার এখন সাহায্যের জন্যে চায়না এবং রাশিয়ার কাছে ভিড়ছে। এই উঠতি অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা একই সময়ে আসলো যখন আমেরিকান কর্মকর্তারা ল্যাটিন আমেরিকায় এই দুই দেশের প্রভাব দেখে উদ্বিগ্ন । কিউবার কর্মকর্তারা তাদের দেশের এই দুরাবস্থার জন্যে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞাকেই দায়ী করেছেন।
জো বাইডেনের প্রশাসন একটু সহজ করেছিল কিন্তু ট্রাম্পের দেয়া পূর্বের সকল ব্যবস্থা অপরিবর্তিতই রেখেছে। ২০১৪ সালে ভেনিজুয়েলার পতনের ফলে দ্বীপ দেশটিতে ভর্তুকি মূল্যের জ্বালানী সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি, প্যানডেমিকের কারনে পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায় ফলে বিদেশী অর্থ আয়ের পথও বন্ধ হয়ে যায়।
কিউবানরা এখন ধীরে ধীরে অস্থির হয়ে উঠছে। ২০২১ সালে বড় ধরনের প্রতিবাদের সময় প্রায় ৭০০ মানুষকে জেলে ঢোকানো হয়েছে। তবে, ধীরে ধীরে এই প্রতিবাদ ছোট হয়ে আসছে।
ফিদেল ক্যাস্ট্রো মারা যান ২০১৬ সালে এবং তার ভাই রাউল এখন ৯৩ বছরের অশীতিপর বৃদ্ধ এবং বার্ধক্য জনিত সমস্যায় ভূগছেন। নানা কারনে কমিউনিস্ট পার্টির এই নেতৃত্ব এখন পরিবর্তন এবং নতুনভাবে গড়ে ওঠার মাঝে দোদুল্যমান।
অর্থনীতিবিদ ওমর এভারলিনি বলেন, পর্যটন দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করতে পারতো কিন্তু ডোমিনিকান রিপাবলিক এবং মেক্সিকোর কানকুনের সাথে প্রতিযোগিতা করে কিউবা পেরে উঠছেনা।সম্প্রতি পর্যটকের আগমন বাড়ছে কিন্তু ২০১৯ সালের তুলনায় অনেক কম।
কিউবার এই সরকার বিরোধী বিক্ষোভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সোশ্যাল মিডিয়া
চিনি উৎপাদন এবং ঔষধ কোম্পানীতে রাশিয়ার বিনিয়োগের কথা চলছে। নিরাপত্তা চুক্তিও বাড়ছে। ইউক্রেনে পূর্নোদ্যমে যুদ্ধ চলার মধ্যেই এই প্রথম রাশিয়ান যুদ্ধ জাহাজ হাভানা পরিদর্শন করে। এই কারনে বাইডেন প্রশাসন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।যদিও কিউবার সাথে রাশিয়ার মিত্রতা ওঠানামা করে। আমেরিকান কর্মকর্তারা কিউবায় চায়নার প্রভাবের কারনে অনেক উদ্বিগ্ন। মজার ব্যাপার হলো, কোনো দেশই কিউবাকে বড় কিছু দেবার প্রস্তাব করছেনা।
যুক্তরাষ্ট্র এই মিত্রতার সাথে কিছু একটা বিকল্প যোগ করতে পারতো। আমেরিকান কর্মকর্তারা বলছেন , তারা করতে চান। মে মাসে, প্রশাসন আমেরিকান ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস এ কিউবান বাণিজ্যের প্রবেশাধিকার এর উপর তার নীতি পরিবর্তন করেছে। এমনকি ব্যাংক একাউন্ট খোলার ব্যাপারেও। কিন্তু প্রাইভেট সেক্টরে কিউবান সরকারের অবিশ্বাসই মূল সমস্যা।
একদিকে করোনা, অন্যদিকে একাধিক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। জোড়া ফলায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে কিউবা। সময়- ২০২১
এসব কারনেই বেশীরভাগ কিউবানরা অস্বস্তি বোধ করেন কারন খুব কম লোকের কাছে নজীরবিহীন সম্পদ রয়েছে। রাতে, যখন অনেকেই খুব কমদামী গাড়িগুলো হাভানার কোস্টাল এলাকায় পার্ক করছেন তখন ক্লাব বা বারের সামনে টেসলা পার্ক করতে দেখা যায় অনেককেই।
অনেক কিউবানই এই শাসন অবসানের স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু অনেকেই ভাবছেন, সেটা হয়তো অন্য সমস্যা বয়ে আনতে পারে। একজন প্রাক্তন কিউবান কূটনীতিক কার্লোস আল জুগারায় বলেন, বিরোধীরা এক জায়গায় হতে পারছেননা। তারা ঘরে বাইরে কোনো প্রোগ্রামও করতে পারছেননা। “সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের সুযোগ আসছে বর্তমান সরকারের কাছ থেকেই।” কিন্তু সেটা হচ্ছেনা।
Leave a Reply