মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৭ অপরাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১২০)

  • Update Time : বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

ভারতে এক্ষণে জাতিও নাই, জাতীয় ভাবও নাই। সে রাজপুত নাই, সে মহারাষ্ট্রীয় নাই, সে শিখও -নাই-সে ধৰ্ম্মপিপাসা নাই, সে স্বদেশভক্তি ও স্বজাতিপ্রীতিও নাই। পুরাকালের কথা বলিতেছি না, মুসলমান রাজত্বে যাহা ছিল, এখন তাহারও ছায়ামাত্র দেখিতে পাওয়া যায় না। পলাশী যেমন সমস্ত ভারতবাসীকে শান্তিময় ন্যায়ানুমোদিত শাসনের স্নিগ্ধ সুখ অনুভব করাইয়াছে, সঙ্গে সঙ্গে তাহাদিগকে দরিদ্র ও অবিশ্বাসী করিয়া হৃদয়ের শাস্তিঘট অশান্তির লগুড়াঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ করিয়া দিয়াছে। বাহ্য শান্তির চরমোৎকর্ষ ঘটিয়াছে বটে, কিন্তু আভ্যন্তরিক শান্তি ধীরে ধীরে যেন কোন অনিশ্চিত রাজ্যে পলায়ন করিতেছে। ইংরেজশাসনে যে এই দোব ঘটিয়াছে, আমরা সে কথা বলিতেছি না। জাতীয় শিক্ষার অভাবেই পাশ্চাত্য জ্ঞানের সংঘর্ষ সহ্য করিতে না পারিয়া আমরা জাতীয়তা হারাইতে বসিয়াছি। এ বিষয়ে অধিক আলোচনার প্রয়োজন নাই, আপাততঃ বর্তমান প্রবন্ধের প্রতিপাদ্য বিষয়ই বর্ণিত হইতেছে।
বর্তমান প্রবন্ধে পলাশী-যুদ্ধের একটি সংক্ষিপ্ত মৰ্ম্ম প্রদান করিয়া, পূর্ব্বতন ও আধুনিক পলাশী প্রান্তরের একটি বিবরণ বর্ণন করাই আমাদের উদ্দেশ্য। পলাশীপ্রান্তর মুর্শিদাবাদ হইতে প্রায় পঞ্চদশ ক্রোশ দক্ষিণে অবস্থিত। ইহার পশ্চিম পার্শ্ব দিয়া প্রসন্নসলিলা ভাগীরথী কুল কুল রবে প্রবাহিত হইতেছেন; দক্ষিণে পলাশী গ্রাম। সেই জন্য এই ইতিহাস- বিখ্যাত প্রান্তরের নাম পলাশীপ্রান্তর। পলাশী নামে একটি বিশাল পরগণা মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ার মধ্যে বিরাজ করিতেছে। পলাশী গ্রাম ও পলাশী প্রান্তর প্রভৃতি সমুদায়ই উক্ত পরগণার অন্তর্ভূত।
মুর্শিদাবাদ হইতে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত যে প্রসিদ্ধ বাদশাহী সড়ক ভাগীরথীর পূর্ব্ব তীর দিয়া. গমন করিয়াছে, সেই বিস্তৃত সড়ক পলাশীপ্রান্তর ভেদ করিয়া চলিয়া গিয়াছে। ভাগীরথীর গতি-প্রভাবে পূর্ব্বতন সড়ক হইতে বর্তমান সড়কের কিঞ্চিৎ পরিবর্তন ঘটিয়াছে। এইরূপ শুনা যায়, পূর্ব্বে এই সকল স্থানে অনেক পলাশ বৃক্ষের শ্রেণী থাকায় ইহাকে পলাশী বলিত; কিন্তু এক্ষণে তাহাদের কোনই চিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায় না। খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দী হইতে পলাশীর আম্রকুঞ্জের নামই কীর্ত্তিত হইয়া আসিতেছে; পলাশীতে লক্ষ বৃক্ষের উত্থান ছিল বলিয়া, পলাশীপ্রান্তরের কোন কোন স্থানকে অদ্যাপি লাখবাগ বলিয়া থাকে। অষ্টাদশ শতাব্দীর আম্রকুঞ্জ সেই লাখবাগেরই অন্তর্গত ছিল। পলাশীপ্রান্তর উত্তরদক্ষিণে প্রায় দুই ক্রোশ, ও পূর্ব্ব পশ্চিমে প্রায় এক ক্রোশ হইবে। এই প্রান্তরের মধ্যে- মধ্যে এক্ষণে গ্রামের পত্তন হইয়া ইহার বিস্তৃতির লাঘব করিয়াছে। ভাগীরথীও ইহার কিয়দংশ স্বীয় গর্ভস্থ করিয়া পুনর্ব্বার কিছু কিছু চররূপে উদ্গিরণ করিয়াছেন।
মুর্শিদাবাদের দক্ষিণে পলাশীর ন্যায় আর বিস্তৃত প্রান্তর নাই। এই জন্য এইখানে অষ্টাদশ শতাব্দীর মহাসমর সংঘটিত হয়। ১৭৫৭ খৃঃ অব্দের ২৩এ জুন, হিজরী ১১৭০ অব্দের ৫ই সওয়াল বৃহস্পতিবার নবাব সিরাজ উদ্দৌলা ও ইংরেজদিগের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হইয়াছিল। ইংরেজ বণিক্সণ বাণিজ্যের আশায় ভারতবর্ষে আসিয়া দেশীয় রাজগণের অকর্মণ্যতাবশতঃ আপনাদিগের রাজ্যলাভের পিপাসা বন্ধিত করিতে থাকেন। বাঙ্গলার সুচতুর দূরদর্শী নবাব আলিবদ্দী খাঁ তাহা সম্যকরূপে বুঝিতে পারিয়া, মৃত্যুকালে স্বীয় দৌহিত্র ও উত্তরাধিকারী সিরাজ উদ্দৌলাকে ইংরেজ দিগের দমনার্থ উপদেশ দিয়া যান।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024