শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১১ অপরাহ্ন

নীলের বিশ্বায়ন – নীল ও ঔপনিবেশিক বাংলায় গোয়েন্দাগিরি (পর্ব-৫৩)

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০২৪, ১০.০০ পিএম

পিয়ের পল দারাক ও ভেলাম ভান সেন্দেল

অনুবাদ : ফওজুল করিম


মন্তব্য

আমার বাংলাদেশে অবস্থানকালে সে দেশের দক্ষ নীলকরদের কাছে থেকে সংগৃহীত এবং আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশে নীলের চাষাবাদ ও নীলের উৎপাদন সম্পর্কে এই রিপোর্ট আমি প্রণয়ন করেছি। বর্তমানকালে, ফরাসী সরকার যখন ফরাসী উপনিবেশগুলিতে নীলচাষ প্রবর্তনের বিষয় চিন্তাভাবনা করছেন তখন এই পরিপ্রেক্ষিতে আমার মূল রিপোর্ট ও রিপোর্টে বর্ণিত খুঁটিনাটি বিষয়াবলী বিশেষ উপযোগী হবে। একথা মনে রেখেই আমার এই রিপোর্ট প্রণয়নের উদ্যোগ।

বাংলার নীলকররা নীল উৎপাদনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো বৈজ্ঞানিক নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই উৎপাদন করেন এ কথা ঠিক, তবু এও সত্য যে বাংলার আনাচেকানাচে নীলকররা নীল উৎপাদন থেকে একই রকম ফল পান। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কেননা, গত পঁচিশ বছর যাবত নীলকররা নীলের চাষাবাদ ও নীলের উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে ওতপ্রেতভাবে জড়িত থেকে প্রতি মুহূর্তে সরেজমিনে প্রতিটি সমস্যা মোকাবেলা করছেন ও তার কার্যকর সমাধান দিয়েছেন। স্থানীয় পারিপার্শ্বিক ও বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী তাদের সমাধান খুঁজে পেতে হয়েছে। স্বকীয় উদ্যোগ, নীলকরদের ব্যক্তিগত জ্ঞান ও তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী নীল উৎপাদন হয়েছে- সে নীল ভালই হোক বা মন্দই হোক।

যে ফলিত পরীক্ষা বাংলাদেশে ফলপ্রসূ হয়েছে তা থেকে একটি প্রশ্নের উদয় হয়। তা হচ্ছে, সমস্যার এই সমাধান পৃথিবীর অন্য জায়গায় খাটবে কিনা? যেখানে জমির প্রকৃতি, তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহের গতি প্রবাহ ও ঋতু বৈচিত্র বাংলাদেশ থেকে ভিন্ন সেখানেও একই সমাধান খাটবে কি? আমরা এর উত্তর জানি না। যদি বা একই সমাধান খেটেও যায় তা কি কাকতালীয় ঘটনা, না এর কোনো ভিত্তি আছে?

এভাবে আমরা যদি যুক্তি প্রদর্শন করি তাহলে হয়ত দেখা যাবে যে বঙ্গদেশের কোনো নীলকর যদি এমন দেশে নীল উৎপাদন করতে চান যেখানকার অবস্থা বাংলাদেশ থেকে একেবারে আলাদা, তাহলে তাকে পদে পদে পর্বতপ্রমাণ সমস্যায় পড়তে হবে, যদি না তার বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাত্ত্বিক অন্তর্দৃষ্টি না থাকে এবং রসায়ন শাস্ত্রের কিছুমাত্র জ্ঞান না থাকে। এই জ্ঞান না থাকলে তিনি চরম আর্থিক লোকসানের মধ্যে পড়বেন এবং তার সব শ্রম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। এর ফলে তিনি গোটা পরকল্পনা বর্জন করতে পারেন যা নাকি হয়ত অন্য কারু হাতে পড়লে সফল হত। অন্যদিকে ভিন্ন রকম মাটি, তাপ ও ভিন্ন রকম ধাতুতে আমার বর্ণিত গুণাবলীর দক্ষ প্রয়োগ করে সব রকম প্রতিকূলতা অগ্রাহ্য করে কোনো নীলকর হয়ত সফল হতে

পারেন। বাংলাদেশে এ রকম নীলকর খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এমনকি, ব্যাপারটা এ নয় যে সেখানে ফরাসী নীলকরের অভাব রয়েছে। তবে তারা আজকাল অন্য নীলকরের অধীনে কাজ করছে। কথাটা হল কি তাদের নিজের কাজ সম্পর্কে এমন তাত্ত্বিক জ্ঞান নেই যার বদৌলতে তারা কাজের ক্ষেত্রে দৈনন্দিন নতুন নতুন সমস্যা সমাধানের জন্য তখুনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024