শ্রী নিখিলনাথ রায়
মাতৃষগা ও জ্যেষ্ঠতাতপন্থী ঘসেটা বেগম বরাবরই সিরাজের বিরুদ্ধাচরণে প্রহর ছিলেন; তিনি গোপনে ইংরেজদিগের সহিত যোগ দিয়া সিরাজের অনিষ্ট সাধনের ইচ্ছা করেন। ঘসেটার দেওয়ান রাজা রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণবল্লভ সপরিবারে কলিকাতায় ইংরেজদিগের আশ্রয় লইলে, সিরাজ তাঁহাদিগকে তাঁহার হস্তে অর্পণ করিবার জন্য কলিকাতার গবর্ণর ড্রেক সাহেবের নিকট লোক প্রেরণ করেন। ইংরেজেরা নবাবের অনুরোধ অগ্রাহ্য করিলে, তিনি ক্রুদ্ধ হইয়া ইংরেজদিগের কাশীমবাজার- কুঠী ও কলিকাতা অধিকার করিয়া বসেন।
তাঁহার কর্মচারিগণের অনবধানতায় ইংরেজ-দুর্গের অন্ধকূপ নামে একটি ক্ষুদ্র কারাগৃহে আবদ্ধ হইয়া কয়েক জন ইংরেজ প্রাণত্যগ করে। পরবর্তী কালে ইংরেজেরা তাহাকে অন্ধকূপহত্যাকাণ্ড নাম প্রদান করিয়া, একাট অতিরঞ্জি ৩ • কাহিনী লোকসমাজে প্রচার করিয়াছিলেন। এই অন্ধকূপ হত্যা সম্বন্ধ অনেক রহস্য আছে, স্থানান্তরে তাহার উল্লেখ করা যাইবে। কলিকাতার ইংরেজদিগের দুরবস্থা শ্রবণে মান্দ্রাজ হইতে আডমিরাল ওয়াটসন ও কর্ণেল ‘ক্লাইব ইংরেজদিগের রক্ষার জন্য বাঙ্গলায় আসিয়া উপস্থিত হন। তাঁহারা কলিকাতা পুনরধিকার করিয়া, হুগলী অধিকার করিলে, নবাব তাঁহাদিগকে বাধা প্রদানের জন্য পুনর্ব্বার কলিকাতায় উপস্থিত হইলেন।
ক্লাইবের রণকৌশলে নবাব পরাজিত হইয়া ১৭৫৭ খৃঃ অব্দের ৯ই ফেব্রুয়ারী এক সন্ধিপত্র লিখিয়া দেন। ইহাতে নবাব ইংরেজ- দিগের প্রতি কোনরূপ অত্যাচার করিবেন না বলিয়া স্বীকার করেন এবং তাঁহাদিগের ক্ষতিপূরণে প্রতিশ্রুত হন। ইংরেজেরাও বণিকের ন্যায় ব্যবসায় চালাইবেন, নবাবের রাজ্যে গোলযোগ ও শান্তিভঙ্গ করিবেন না বলিয়া অঙ্গীকার করেন। সিরাজ সন্ধির সর্ত্ত রক্ষা করিতে যথেষ্ট যত্ন পাইয়াছিলেন; কিন্তু ক্লাইব সাহেবের ইচ্ছা অন্যরূপ ছিল। শান্তির অপেক্ষা তাঁহার হৃদয়ে যুদ্ধের পিপাসা বলবতী থাকায়, তিনি ইউরোপে ইংরেজ ও ফরাসীদিগের মধ্যে যুদ্ধারম্ভের ছলে, ফরাসীদিগের চন্দননগর অধিকার করিতে ইচ্ছা করিলেন।
রাজ্যমধ্যে পুনর্ব্বার যুদ্ধানল প্রজ্বলিত হইলে, নবাব শান্তিভঙ্গের আশঙ্কায় ইংরেজদিগকে চন্দননগর আক্রমণ করিতে নিষেধ করিয়া পাঠাইলেন। ইংরেজেরা নবাবের কথায় কর্ণপাত করিলেন না। তাঁহারা হুগলীর ফৌজদার নন্দকুমারকে হস্তগত করিয়া চন্দননগর অধিকার করিতে অগ্রসর হইলেন। নবাব নন্দকুমারকে ফরাসীদিগের সাহায্যের জন্য লিখিয়া পাঠাইয়া, রাজা দুর্লভরামকে সসৈন্যে হুগলীতে পাঠাইয়া দিলেন। নন্দকুমার স্বয়ং ফরাসীদিগের সাহায্য করিলেন না, অধিকন্তু রাজা দুর্লভরামকেও ফিরিয়া যাইতে বলিলেন। ইংরেজেরা অবশেষে চন্দননগর অধিকার করিয়া বসিলেন। ফরাসীরাও এই আক্রমণে আপনাদিগের যথাসাধ্য বিক্রম প্রদর্শন করিয়াছিলেন।
Leave a Reply