সারাক্ষণ ডেস্ক
বুধবার ইরানের রাজধানীতে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকে কেন্দ্র করে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) অন্যান্য ফিলিস্তিনি নেতাদের সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথানুষ্ঠানে যোগ দেন ইসমাইল হানিয়া। বুধবার (৩১ জুলাই) ভোরে তেহরানে তার বাসভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।
যদিও ইসরাইল হানয়োকে হত্যার কথা স্বীকার করেননি।হামাস ইসরাইলে আক্রমণ করে তার প্রায় ১০০ বেসামরিক লোকজনকে হত্যা ও ১০০ জনের মতো নাগরিককে জিম্মি করার পর ইসরাইল গত বছরের অক্টোবর থেকে প্যালেস্টাইনের গাজা ভূখন্ডে এক নজীরবিহীন হত্যাকান্ড শুরু করেছে।
এ বছরের জুনে হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়েহ ও ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তেহরানে বৈঠক করেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
প্যালেস্টাইনের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, যুদ্ধে ৪০,০০০ প্যালেস্টাইনি , যাদের মধ্যে বেশীরভাগ বেসামরিক ব্যাক্তি নিহত হয়েছেন। এছাড়াও প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বুধবার এক টেলিভিশন ভাষনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন“ ইসরাইল এ ধরনের আগাসনের বিরুদ্ধে কড়া জবাব দেবে।” ভাষনে তিনি হানিয়ার মৃত্যু নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
ইরান ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে সরাসরি না জড়ালেও তারা তাদের এফিলিয়েটেড সৈন্য প্যালেস্টাইন, লেবানন, ইরাক এবং ইয়েমেনে দেয়ার জন্যে প্রস্তুত আছে। এপ্রিলে ইসরাইল সিরিয়ার দামাস্কাসে ইরানিয়ান এমবাসির কনসুলার সেকশনে আক্রমণ করার পরে ইরান ইসরাইলে প্রথম ইসরাইলে আক্রমণ করে। যাইই হোক, সেই আক্রমণে ইসরাইলে কোনো হতাহত হয়নি। তবে এতে দুই দেশের মধ্যে একটা উত্তেজনার রেশ থেকে যায়।
কিন্তু, ইরানের রাজধানীতে হামাস নেতা হানিয়ার মৃত্যুর পরে এর প্রেক্ষাপট বদলে যায় । কারন ইরান মনে করে এটি দেশের নিরাপত্তার জন্যে একটি বিশাল হুমকি। এই মুহূর্তে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিই এবং ইসলামিক রেভুল্যুশনারী গার্ডস করপস (আইআর জিসি) হানিয়ার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে বলে হুমকি দিয়েছে।
খামেনী বলেন, “সন্ত্রাসী জায়োনিস্টরা আমাদের প্রিয় অতিথিকে আমাদের দেশেই খুন করেছে , তারা জানেনা যে তারা নিজেরা এর বিপরীতে কি ধরনের শাস্তি পাবে। আমাদের দায়িত্ব এই খুনের কঠিন বদলা নেওয়া” পাশাপাশি, আইজিআরসি শপথ নিয়েছে এই হত্যাকান্ডের চরম প্রতিশোধ নেয়ার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান এই হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে সময় নেবে এবং এর পাল্টা জবাব ঠিকই দেবে। বারবারা স্লেভিন, ফেলো, ওয়াশিংটনে স্টিমসন সেন্টার ফর মিডল ইস্ট এন্ড নর্থ আফ্রিকা বলেন, “আমার মনে হয়না ইরান এর প্রতিশোধের অংশ হিসেবে একই ধরনের আক্রমণে যাবে।”এবং “ খামেনি কিছু সময় নিবে এটা প্রমাণ করতে যে, তারা ইসরাইলই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, ইরান নয়।”
ইরানের সুপ্রিম নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই।
বারবার আরো বলেন, “ইসরাইল কখনো আলোচনার মাধ্যমে শান্তি চায়না। ইসরাইল চায় পুরো বিজয় এবং হামাসের ধ্বংস তাতে তার বন্দিদের উপর কিংবা ইরাইলের যে কোনো ক্ষতিই হোক তাতেও তার কোনো আপত্তি নাই।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো আরব দেশই ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের পওক্ষ নেই কারন এই যুদ্ধ পারস্য উপসাগরের সকল তেলের পথ ধ্বংস করতে পারে। আরব লীগের প্রাক্তন মহাসচিব আমর মুসা আমেরিকাকে নেতানিয়াহুর লাগাম টানতে আবেদন জানিয়েছেন। আমর মুসা আরো বলেন, “আমেরিকার উচিৎ নেতানিয়াহুকে এই যুদ্ধ বন্ধ করতে বলা যাতে এই অঞ্চলে যুদ্ধ না ছড়িয়ে পড়ে।”
তিনি বলেন, হানিয়ার মৃত্যুতে গাজায় ইসরাইলি বন্দীদের মুক্ত করার মধ্যে দিয়ে যুদ্ধ বিরতির একটা চলমান আলোচনার দ্বার উম্মোচন হতে পারে। তিনি সতর্ক করে বলেন যে, এই ধরনের অপারেশন এই অঞ্চলে যুদ্ধকে দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে যার ফলে যুদ্ধের সমীকরণই পাল্টে যেতে পারে।
ইরান ২০২৩ সালে দীর্ঘ একদশক পরে সৌদি আরবের সাথে তার বন্ধুত্ব পূনরায় স্থাপন করেন। ইরানের সাথে মিশরের রাজনৈতিক সম্পর্ক পূনরুদ্ধার করার আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, “এমনকি ইরানকে প্যালেস্টাইনের মূল সাপোর্টার হিসেবে সবসময় দেখা গেছে ।”
বিশেষসজ্ঞরা বলছেন, “ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের যে কোনো সস্তা প্রতিশোধ ২০১৫ সালের নিউক্লিয়ার চুক্তিকে ভন্ডুল করতে পারে । যে চুক্তিটি জয়েন্ট কমপ্রেহেনসিভ প্লান অব একশন নামে পরিচিত এটি নষ্ট হলে পেজেমেকিয়ান সরকারের জন্যে আমেরিকার সম্ভাব্য অবরোধ সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারটা আরো হালকা হয়ে যেতে পারে।”
ইসরায়েলের ওপর ইরানের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন ইরানের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের দিকে নজর দিচ্ছে।
Leave a Reply