সারাক্ষণ ডেস্ক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা। আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
‘সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও নয় দফা’ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করছেন।
দেশের চলমান পরিস্থিতি শান্ত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বসতে চান বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (৩ আগস্ট) গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রস্তাবিত পেনশন ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করেন সরকারপ্রধান।
অন্য সময়ের তুলনায় রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো ফাঁকা। হাতে গোনা কয়েকটি গণপরিবহন ও রিকশা ছাড়া চলছে না কোনো গাড়ি। মানুষজনের চলাচলও কম। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছে না।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামটর, প্রেস ক্লাব, পল্টন, গুলিস্তান, কমলাপুর, মতিঝিল ও ওয়ারী ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের আজ বিক্ষোভ কর্মসূচি থাকায় সকাল থেকেই রাজধানীতে মানুষ জনের উপস্থিতি কম। সংঘর্ষ ও পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলির আতঙ্কে কর্মসূচির দিন খুব জরুরি না হলে সাধারণ মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না।
পল্টনের রিকশা চালক আমির হোসেন বলেন, ‘সকাল থেকে মাত্র দুইটা খ্যাপ পাইলাম। মানুষ একেবারেই কম।’
মতিঝিলের চা দোকানদার আবদুল করিম বলেন, ‘সকাল থেকেই মানুষ কম। মানুষ ভয়ে বের হচ্ছে না। বের হলেই তো গুলি খাওয়ার ভয়।’
শিখর পরিবহনের হেলপার রমজান আলী বলেন, ‘বাসে যাত্রী নেই বললেই চলে। সড়কে আজ বাসও কম। পেটের দায়ে রাস্তায় বেরিয়েছি।’
কোটার দাবি পূরণের পরেও একটি মহল সরকার বনাম শিক্ষার্থী গেম খেলে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে। শিক্ষার্থীরা কারও ঢাল হিসেবে ব্যবহার হবে না-এমন আশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের মূল দাবি পূরণ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা কোনো অবস্থাতেই সরকারের প্রতিপক্ষ নয়। আদালতে রায়ের পর দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তারপরও একটি মহল সরকার বনাম শিক্ষার্থী গেম খেলে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে। শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। সেতুমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের আওতা বাড়ানো হয়েছে। ৩ জন বিচারপতিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তদন্তে জাতিসংঘসহ যেকোনো দেশ কিংবা সংস্থা চাইলে যোগ দিতে পারে। সরকার তাকে স্বাগত জানাবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, নিহতদের পরিবারের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। তাদের অনেকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন।
আহতদের দেখতে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শনে গেছেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের আটক প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের অযথা হয়রানি অথবা আটক না করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে সেজন্য পুনঃসময়সূচি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি যেহেতু পূরণ হয়েছে, সেহেতু বিশ্বাস করি শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে, পরীক্ষার হলে ফিরে যাবে। তারা কোনো অশুভ শক্তির ঢাল হিসেবে ব্যবহার হোক এটা জাতি চায় না। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে দেশের জনগণ সাধুবাদ জানালেও অসন্তুষ্ট বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বিবৃতিতে স্পষ্ট বিএনপি’র সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক কতোটা নিবিড়। সে কারণে তারা জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে সাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক বলেছেন। সেতুমন্ত্রী বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেছেন। পর্যায়ক্রমে সবার সঙ্গেই মতবিনিময় করবেন তিনি। নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধানমন্ত্রী করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো বার্তা ‘পাগলের প্রলাপ’ বলে অভিহিত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলমান কর্মসূচির মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ড. ইউনূসকে সরকার প্রধান করে একটি মন্ত্রিসভা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। বিষয়টি আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘এটা পাগলের প্রলাপ’।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ৯ দফায় ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সরাসরি জবাব দেননি ওবায়দুল কাদের। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির একটি হলো, ছাত্রহত্যার দায় নিয়ে সেতুমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে। এ প্রসঙ্গ টেনে সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি কোটা সংস্কারের। সেটি সরকার মেনে নিয়েছে। এখন তারা ৯ দফা দাবি দিয়েছে। এই ৯ দফার মধ্যে আপনার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ বেশ কয়েকটা দাবি আছে। এ দাবির ব্যাপারে আপনারা কী ভাবছেন? জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেখুন, আমি একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমি আজকেও বলেছি, সরকার অলরেডি বিচার বিভাগীর তদন্ত কমিশন গঠন করেছে, এতে ৩ জন বিচারপতি…। জাতিসংঘসহ যেসব দেশ এই তদন্তের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করবে, আমরা তাদেরও স্বাগত জানিয়েছি। তদন্ত কাজে তারাও অংশ নিতে পারে। তিনি বলেন, এখন কে অপরাধী, কে অপরাধী নয়, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। সেটিও ওই যে তদন্ত কমিশন, তার কার্যপরিধির আওতার মধ্যে পড়ে। কাজেই এ বিষয়টি সেখানেই থাকবে, সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে।
Leave a Reply