বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৭১)

  • Update Time : বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০২৪, ৮.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

‘দোহাই তোর, জোর করিস না’ অসহায় ভঙ্গিতে মুরাদ বললে, ‘আজ আর কিছু ভালো লাগছে না!’
‘তুই আমার রাত্রির ঘুম নষ্ট করছিস!’
‘তোর তো রাত্রে ঘুমই হয় না-‘
‘খচড়ামি রেখে কি বলতে চেয়েছিলি বল, ভণিতার কি দরকার।’
‘তুই আমাকে জোর করছিস, কিন্তু আমি জানি শুনলে তোর মন খারাপ হ’য়ে যাবে। তবু তোকে বলা দরকার, সেই জন্যেই যেতে চাচ্ছিলাম তোর কাছে।’
‘বুঝলাম তো, তারপর?’ খোকা বড় বড় চোখে মুরাদের দিকে তাকালো। অবসন্ন মনে হয় মুরাদকে; মানসিক শ্রান্তিতে একটু একটু ক’রে ভেঙে পড়ছে সে।
‘তোর মন খারাপ হ’য়ে যাবে খোকা, বরং শুনে কাজ নেই—’
‘প্যানপ্যানানি রেখে খুলে বল যা বলার।’
‘কথা দে, সব শুনে আমাকে ঘৃণা করবি না!’
‘ব্যাপার কি, সিফিলিস নাকি?’
‘কি যা-তা বলছিস!’
‘সিফিলিস যা-তা ব্যাপার হ’লো? বোদলেয়রের ছিলো না?’
‘আমি তো আর বোদলেয়র নই।’
‘হ’তে কতোক্ষণ! এই যে এতো ভ্যারেন্ডা ভাজলাম তাতেও কি তুই বুঝতে পারিসনি যে বোদলেয়রের সঙ্গে আদতেই তোর কোনো তফাত নেই। আর এভাবে যদি দেখতে কষ্ট হয় তাহলে খোলা চোখেও মিল খুঁজে পাবি। এটা বরং তোর পক্ষে আরো সহজ। বোদলেয়র যা যা করতো তুই-ও তাই করিস। তুই কবিতা লিখিস, দু’একবার পাড়ায় গিয়েছিস, ড্রিংক করিস, অনুবাদেও হাত দিয়েছিস। বোদলেয়রের মতো তোর শুধু লেপ্টে থাকা ধুমসো ভেনাস নেই, যে তোকে ফতুর ক’রে ছাড়বে। তা ওটা তুই নিজেই ম্যানেজ ক’রে নিতে পারবি, সে গুণ তোর আছে।
আজকাল তোর যে চালচলন দেখছি তাতে বুঝতে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না ঐসব জিনিশ লটকাবার জন্যে দিনরাত হন্যের মতো ঘুরছিস তুই। চেহারাটাও মালখোর মালখোর টাইপের হ’য়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। তা জুটিয়েছিস নাকি এক আধটা ঢাউস জিনিশ? তোর তো আবার গম্বুজমার্কা পেল্লায় পেল্লায় জিনিশের খায়েশ হয়; নৌকোর দুলুনিতে গা গোলায়, চিরকালই তুই ইস্টিমারে চাপা পছন্দ করিস। কিবে, হুব্বার মতো জিভ কামড়ে ব’সে আছিস কেন, মাল ছাড়! মাল ছাড়!’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024