শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৩ অপরাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৭৫)

  • Update Time : রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০২৪, ৮.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

‘তাই বল। কি হ’লো আবার ময়নার? ঠিকই তো, এসে থেকে ওকে দেখিনি। ওর বাবা নিয়ে গেছে বুঝি?”
রঞ্জ বললে, ‘ওর বাবা বিকেলের দিকে এসেছিলো ওকে নিতে, কিন্তু পায়নি–
‘পায়নি মানে, কি আবোল-তাবোল বকছিস?’
‘পায়নি মানে পায়নি। ইচ্ছেমতো তেরিবেরি ক’রে গেল, তুই থাকলে নির্ঘাত হাতাহাতি হ’য়ে যেতো তোর সঙ্গে। লোকটা এমন মুখফোঁড়।”
‘তা না হয় হ’লো, কিন্তু ময়নার ব্যাপারটা কি?’
‘ময়না চ’লে গেছে!”
‘তোকে ব’লে গেছে?’
‘হ্যাঁ!’
‘কিন্তু এরকম হঠাৎ চ’লে যাবার মানেটা কি? গেলই বা কোথায়?’
‘ময়না হাতেম আলীর সঙ্গে গেছে–‘
‘কি সর্বনাশ! তার মানে ইচ্ছে ক’রেই গেছে। পেটে পেটে এত বজ্জাতি মেনিমুখো ছোকরার! আগে থেকে জানতিস তুই?’
‘না! আজকেই শুনলাম সব। হাতেম আলী ওকে বিয়ে করবে। যাবার সময় ব’লে গেছে, ওর কোনো দোষ নেই!’
‘তুই যেতে দিলি কেন?’
‘দেবো না-ই বা কেন?’
‘তুই জানিস হাতেম আলীর মনে কি আছে?’
‘হাতেম আলী ওর কাছে অনেকদিন থেকে পয়সা জমায়, ওই জমা পয়সা থেকে কানের দুলও গড়িয়ে দিয়েছে ভিতরে ভিতরে। তেমন তাড়াহুড়ো ছিলো না ওদের, হুট ক’রে ময়নার বাবা এই টানা-হ্যাঁচড়া পাকালো ব’লেই–‘
‘তবু আঙ্কারা দিয়ে তুই ভালো করিসনি–‘
‘ও বুঝি আমার বারণ শুনতো?’
‘একশোবার শুনতো। দায়িত্ব আছে না আমাদের। সব জেনেশুনেই একটা উটকো লোকের সঙ্গে যেতে দিয়ে তুই ভুল করেছিস!’
‘ও আমাকে বলতে চায়নি। আবডালে ব’সে ব’সে কাঁদছিলো, ওর প্ল্যান ছিলো না-ব’লে পালানোর। শুধু আমার চাপে প’ড়ে সব স্বীকার ক’রে ফেলেছে।
কিন্তু তোর কাজটা হয়েছে বোকার মতো, এদের আঙ্কারা দিতে নেই; কি থেকে কি দাঁড়ায় তুই কি ক’রে জানবি! কোনো চালগুলো নেই, ঠিক-ঠিকানা নেই, হাতেম আলী যদি ওকে পথে বসিয়ে দেয় শেষ পর্যন্ত, তখন? সব চাপবে আমাদের কাঁধে। তোর উচিত ছিলো আমার সঙ্গে পরামর্শ করা, মতামত জানা।’
রজু ক্ষিপ্ত হ’য়ে বললে, ‘পাচ্ছি কোথায় তোকে? আমার বারণ শুনতে ওর ব’য়েই গেছে। ও নিজে যদি ভালো মনে ক’রে থাকে
আমাদেরই বা অতো মাথাব্যথা কিসের।’ খোকা রঞ্জুর মুখের দিকে তাকালো! একরোখা জেদি ভঙ্গিতে ও পায়ের পাতার দিকে তাকিয়ে আছে। সে বললে, ‘টাকা-পয়সা নিয়েছে?’
‘হ্যাঁ, আমিই চুকিয়ে দিয়েছি, ওর আশি টাকা জমা ছিলো— বিরসমুখে গা-হাত-পা ছেড়ে দিয়ে খোকা বললে, ‘তাহলে এই ব্যাপার।’
রঞ্জ কোনো কথা বললো না, মাথার বিনুনি খুলে নতুন করে ক’ষে বাঁধতে বাঁধতে কেবল এক পলকের জন্যে খোকার মুখের দিকে তাকালো।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024