শেষ পর্যন্ত খোকা সন্ধি করে। রঞ্জু রঞ্জুই; রঞ্জু যদি ছিটেফোঁটা অনুকম্পাও করতো মুরাদকে, তাহলে নিজেকে ঢেকে রাখতো মুরাদ, অহঙ্কারের তাপে তার মনোবল অবলম্বন করতো ভিন্ন পথ; আকুলি- বিকুলি করতে হ’তো না তাকে অমন। এটা একটা একপেশে ঘোড়ারোগ, আলোচাল দেখে যেমন ভেড়ার মুখ চুলকায়।
বেলীর কাণ্ডকারখানা দেখে কতোবার মুখ টিপে হেসেছে রঞ্জু। বিছানার উপর বিশ্রীভাবে শুয়ে থাকার জন্যে দুম ক’রে একবার কিল বসিয়েছিলো বেলীর পিঠে। বেলী জোর ক’রে যখন তাকে সস্তা সিনেমার গল্প শোনায় সে তখন বেলীর অজান্তে ঘুমিয়ে কাদা হ’য়ে থাকে; ঝিঝি- পোকার একটি ফিনফিনে ডানা, একফোঁটা বৃষ্টির ভারেও যা মচকে যায়। রজ্জুকে একবার জিগ্যেশ ক’রে দেখলে কি হয়?
উচিত হবে?
না, উচিত হবে না। ঘৃণায় কুঁচকে যাবে রঞ্জু। কদর্য চোখকে কি ক’রে ঘৃণা করতে হয় সে তা জানে। সে জানে, সে কোনো কুড়নো মেয়ে নয় রাস্তার, ফ্যাল্লা ন্যাতাকুড়ুনি পাতাকুডুনি নয়; নোংরা এঁটো চোখে কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে একথা শুনলে আতঙ্কে শিউরে উঠবে সে। মুরাদের উচিত তার ওই যাত্রাদলের সস্তা স্বভাব বদলানো। স্পষ্ট বালে দিতে হবে ওকে। যানিভার্সিটিতে থাকার সময় যে সব বদভ্যাস ছিলো এখনো কিছু কিছু তার থেকে গিয়েছে। ওর নজরটাই পার্কাস টিউটোরিয্যালের চিন্তায় অন্যদের মাথার ঘিলুর ভিতর যখন কিলবিলে পোকার কামড়ানি চলছে ও তখন করিডোরের মেয়েদের দৃষ্টি আকর্দলী পায়চারিতে মশগুল। পুরুষ্টু মেয়েদের দেখলেই ওর চোখ ছানাবড়া হ’য়ে যায়। বলতো-ও মাঝে মাঝে, ঘর নামা দেখলে আল্লামিয়াকে ভালবাসতে ইচ্ছে ক’রে আমার, ভাল কাম যদি তাঁর কিছু থেকে থাকে তাহলে এই সবই। এমনকি রাস্তাঘাটে ভারবাহী জন্তুর মতো স্বাস্থ্যভারানতা যুবতী দেখলে ও পাগলামি শুরু ক’রে দেয়, নাল গড়ায় ওর নোলা দিয়ে। হঠাৎ রঞ্জু ওর মাথার ভিতরে ঢুকলো কি ক’রে ভেবে পায় না খোকা; কে বলবে এটা তার পুরানো স্বভাবেরই একটি অপভ্রংশ নয়! ‘স্বাধিকার প্রমত্ত আজকের মানুষ’ কপচাবার সময় দিব্যি আবার বদলে যায়।
রঞ্জ কি?
একটা টিনটিনে ফড়িং। দেখে মাতলামি চাগিয়ে ওঠার মতো কিছুই নেই ওর শরীরে। আদর ক’রে একটু জোরে চাপ দিলেই মুড়মুড়িয়ে ভেঙে যাবে ওর হাত। পায়ের তলায় সামান্য একটু কাঁকর ফুটলে এখনো চোখমুখ সাদা ফ্যাকাসে হ’য়ে যায়। এখনো কাঁটা বেছে পাতে তুলে না দিলে ইলিশ মাছ খেতে পারে না! এতো পলকা এতো কোমল যে সামান্য একটি দুর্বাঘাসের ভারও তার জন্যে অনেক; এইভাবে তাকে তুলোয় মুড়ে রাখতে খোকার ভালো লাগে।
Leave a Reply